শীঘ্রই মহিলাদের খাটো পোশাকে জরিমানা, পুরুষকদের খালি গা নিষিদ্ধ !
কলকাতা টাইমস :
কম্বোডিয়ায় ১৮ বছর বয়সী মলিকা টান যখন প্রথম জানতে পারলেন যে, নারীরা কী ধরনের পোশাক পরবেন এবং পরতে পারবেন না সে বিষয়ে সরকার একটি আইনের খসড়া তৈরি করছে, তখন তিনি এতোটাই উদ্বিগ্ন হয়ে পড়লেন যে এই উদ্যোগের বিরুদ্ধে তিনি একটি অনলাইন পিটিশন শুরু করে দিলেন।
প্রস্তাবিত ওই আইনে কোন নারী শরীর দেখা যায় এরকম পোশাক পরলে তাকে জরিমানা করার কথা বলা হয়েছে। খসড়া আইনে মহিলাদের ‘খুব বেশি খাটো অথবা খুব বেশি খোলামেলা’ পোশাক পরার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রস্তাব রাখা হয়েছে। আইনটিতে পুরুষের খালি গায়ে থাকা নিষিদ্ধ করারও প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
সরকার বলছে, দেশের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য এবং সামাজিক মান-মর্যাদা রক্ষার উদ্দেশ্যে বিলটি আনা হয়েছে। জানাজানি হওয়ার পর অবশ্য ব্যাপক সমালোচনার মুখেও পড়েছে সরকারের এই উদ্যোগ। মলিকা মনে করেন, এ ধরনের একটি আইন করার উদ্যোগ নারীদের ওপর আক্রমণ।
তিনি বলেন, কম্বোডিয়ায় একজন তরুণী হিসেবে ঘরের বাইরে বের হলে আমি নিজেকে নিরাপদ বোধ করতে চাই, যে পোশাক পরতে আমার ভালো লাগবে আমি সেই কাপড় পরতে চাই। আমি আমার পরিহিত পোশাকের মাধ্যমে নিজেকে প্রকাশ করতে চাই, এবং আমি চাই না সরকার এখানে কোন সীমা বেঁধে দিক।’
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে নারীরা খোলামেলা বা শরীর দেখা যায় এমন পোশাক পরলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে, ‘যথাযথ’ পোশাক না পরলে গানের শিল্পী ও অভিনেত্রীদের অনুষ্ঠান নিষিদ্ধ করে দেয়া হয়েছে।
এপ্রিল মাসে একজন নারীকে পর্নোগ্রাফির অভিযোগে ছয় মাসের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে যে, সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোতে জামা কাপড় বিক্রি করার সময় তিনি শরীর দেখা যায় এরকম ‘অশোভন’ ও ‘উস্কানিমূলক’ পোশাক পরেছিলেন।
সে সময় প্রধানমন্ত্রী হুন সেন অনলাইনে নারীদের এ ধরনের লাইভ স্ট্রিমিংকে ‘আমাদের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের লঙ্ঘন’ বলে উল্লেখ করে বলেছিলেন, এসবের কারণে নারীদের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানি ও সহিংসতার ঘটনা ঘটে।
মানবাধিকার সংগঠন কম্বোডিয়ান সেন্টার ফর হিউম্যান রাইটসের নির্বাহী পরিচালক চাক সোপিপ বলেছেন, বিলটি পাস হলে সমাজের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর ওপর সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়বে। তিনি বলেন, ‘এর ফলে দারিদ্র ও অসাম্য আরও বেড়ে যেতে পারে।’
সরকারের মন্ত্রীরা এবং জাতীয় পরিষদে বিলটি অনুমোদিত হলে এটি কার্যকর হবে আগামী বছর। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ওক কিমলেখ মন্তব্য করতে রাজি হননি। তিনি বলেছেন, ‘এটি এখন খসড়া পর্যায়ে আছে।’
তবে মানবাধিকার আন্দোলনের একজন নেতা চাক সোপিপের আশঙ্কা হচ্ছে, জনগণের দিক থেকে চাপ দেয়া না হলে কোন ধরনের যাচাই বাছাই ছাড়াই হয়তো বিলটি পাস হয়ে যেতে পারে। তিনি বলেন, ‘কম্বোডিয়ায় প্রায়শই তাড়াহুড়ো করে আইন পাস হয়। সংশ্লিষ্ট লোকজনের সঙ্গে এ নিয়ে তেমন আলোচনা করা হয় না।’