নিজের জনগণকে খাওয়াতে না পারলেও বিশ্বনেতা হওয়ার স্বপ্ন চীনের

কলকাতা টাইমস :
শি জিনপিংয়ের নেতৃত্বে বিশ্বে পরাশক্তি হওয়ার স্বপ্ন দেখছে চীন। তবে সেই উচ্চাভিলাসী স্বপ্ন ধুলিসাৎ হতে চলেছে দেশটিতে ক্রমবর্ধমান খাদ্য সংকট। বেইজিংকে বর্তমানে তার নিজেদের লোকদের খাওয়ানোর জন্য লড়াই করতে হচ্ছে। সম্প্রতি প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং দেশের নাগরিকদের খাদ্যের অপচয় বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছেন।
জনসংখ্যা বৃদ্ধি ও আবাদযোগ্য জমির পরিমাণ কমে যাওয়া, শিল্প নির্ভর অর্থনীতি, ক্রমবর্ধমানভাবে গ্রাহকদের কাছে কৃষিজাত পণ্যের চাহিদা বৃদ্ধির ফলে চীনে বড় ধরনের খাদ্য সংকট দেখা দিতে পারে বলে ফোর্বসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। দেশটিতে জনসংখ্যার অনুপাতে আবাদযোগ্য জমি অনেক কম হওয়ায় এমনটাই আশঙ্কা করা হচ্ছে। এছাড়া করোনা মহামারির পর সম্প্রতি চীনের দক্ষিণাঞ্চল জুড়ে ব্যাপক বন্যা হয়েছে। এতে বিপুল কৃষি খামার ভেসে গিয়ে নষ্ট হয়েছে হাজার হাজার টন খাদ্যশস্য। ফলে দেশটি অচিরেই বড় ধরনের খাদ্য সংকটে পড়তে যাচ্ছে।
চীনা স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের মতে, সাম্প্রতিক বন্যায় দেশটিতে কমপক্ষে ২৯ বিলিয়ন ডলারের খাদ্যশস্য নষ্ট হয়েছে। ভেসে গেছে অসংখ্য খামার। ২৮টি প্রদেশের কমপক্ষে ব্যয় হয়েছে, ২৮ টি প্রদেশের কমপক্ষে ৭০ মিলিয়ন মানুষ ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন।
জরুরী ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা লি কুঙ্গাং আসছে শরৎকালে দেশটিতে আরো একটি বড় বন্যার হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন। ৩ সেপ্টেম্বর এক সংবাদ সম্মেলনে এই কর্মকর্তা বলেন, ‘১৯৯৮ সালের পর এই প্রথমবারের মতো চীনের প্রধান তিনটি নদীর পানি বিপৎসীমার সর্বোচ্চ উচ্চতায় প্রবাহিত হচ্ছে। জলাবদ্ধতার কারণে ইয়াংটি নদীর তীরবর্তী সমস্ত অঞ্চলে চাল, গম ও অন্যান্য ফসলের উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে।
ফোর্বসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সম্ভবত এ কারণেই বিশ্বের অর্ধেকেরও বেশি গমের মজুদকারি ও দ্বিতীয় বৃহত্তম উৎপাদনকারী দেশ চীন বিদেশ থেকে বিপুল পরিমাণ গম আমদানি করেছে। ২০২০ সালের প্রথমার্ধের বিগত ১০ বছরের তুলনায় সবচেয়ে বেশি গম আমদানি করেছে দেশটি। শুধুমাত্র জুন মাসেই চীন যে পরিমাণ গম আমদানি করেছে সেটা ছিল বিগত ৭ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। শুধু গম নয়, চীন আমেরিকা থেকে প্রচুর পরিমাণে ভুট্টাও কিনেছে।
বিপুল সংখ্যক জনসংখ্যার চাহিদা মেটাতে চীনকে চলতি বছরে আরো প্রচুর পরিমাণে খাদ্যশস্য আমদানি করা লাগবে। চীনের খাদ্য সরবরাহের সঙ্গে চাহিদার ব্যাপক পার্থক্য রয়েছে। বিশ্বের বড় আমদানিকারক দেশ হিসেবে চীনের বড় সমস্যা হলো করোনা মহামারির কারণে অধিকাংশ দেশ খাদ্য পণ্য রপ্তানি কমিয়ে দিয়েছে। এরই মধ্যে ভারত ও ভিয়েতনাম চাল রপ্তানি বন্ধ করে দিয়েছে। চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় চলতি বছরের জুলাইয়ে পর্যাপ্ত পরিমাণ খাদ্য পণ্য মজুত করতে চেয়েছিল। তবে ব্রাজিল, রাশিয়া, কানাডা, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া রপ্তানি কমিয়ে দেওয়ায় সেই লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়নি।