অবশই জানুন জ্বরের সময় কেমন খাবার খাওয়া উচিত জানেন?
কলকাতা টাইমস :
শরীর খারাপ যে কারণেই হোক, সবার আগে অনিহা জাগে খাবারের প্রতি। কি খেলে যে মুখে স্বাদ পাওয়া যায়, তা আর ভেবে ওঠা যায় না। যদিও এমন কিছু খাবার আছে, যা খেলে মুখের স্বাদ তো ফেরেই, সেই সঙ্গে শরীরেও শক্তি ফিরে আসে। তো দেখে নেওয়া যাক, কি কি খাবার শরীর অসুস্থ হলে খাওয়া যেতে পারে।
চিকেন স্যুপ : ঠাণ্ডা লাগা, সর্দি- কাশিতে দারুণ আরাম দেয় চিকেন স্যুপ। আসলে মুরগীর মাংসে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন, খনিজ, প্রোটিন এবং ক্যালোরি থাকে। ফলে দেহে পৌষ্টিক উপাদানের ঘাটতি ঘটে না। সেই সঙ্গে শরীরকে ভিতর থেকে আদ্র রাখতে সাহায্য করে এই খাবার এবং প্রচুর পরিমাণে প্রস্রাবের সৃষ্টি করে শরীর থেকে দূষিত পদার্থ বের করে দিতে সাহায্য করে। প্রসঙ্গত, গায়ে জ্বর থাকলে বেশি পরিমাণে শরীরকে আদ্র রাখা জরুরি, তাই চিকেন স্যুপ এতে খুবই উপকার করে।
ব্রোথ চিকেন : স্যুপের মতোই খুবই কার্যকরি হল ব্রোথ। এটি শরীরকে ভিতর থেকে আদ্র রাখতে সাহায্য করে। ব্রোথের মধ্যেও প্রচুর পরিমাণে ক্যালোরি, ভিটামিন, খনিজ, ম্যাগনেসিয়াম, ক্যালসিয়াম, ফোলেট এবং ফসফরাস থাকে। তাই তো গরম অবস্থায় ব্রোথ খেলে এটি হট স্টিম বা গরম বাষ্প গ্রহণ করার মতো কাজ করতে পারে। যদি পেটের কোনও সমস্যা থাকে এবং শক্ত খাবার খাওয়া সম্ভব না হয়, তাহলে ব্রোথ খাওয়া যেতে পারে। যদি বাড়িতে ব্রোথ বানিয়ে নিতে সমস্যা হয়, তাহলে দোকান থেকেও কিনা নেওয়া যেতে পারে। সেক্ষেত্রে খেয়াল রাখতে হবে, ব্রোথ যেন কম সোডিয়ামযুক্ত হয়। অনেকেই হাড় ফুটিয়ে ব্রোথ তৈরি করেন। মনে করা হয় যে, এতে বেশি উপকার পাওয়া যায়। যদিও, এমন কোনও প্রমাণ এখনও পাওয়া যায়নি।
রসুন : রসুনে নানারকম স্বাস্থ্যসম্মত উপাদান থাকে। সেই প্রাচীনকাল থেকে রসুন জীবাণু এবং সংক্রমণবিরোধী হিসাবে ব্যবহার করা হয়। রসুন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। সর্দি, জ্বর, কাশিতে রসূন দারুণ কাজ করতে পারে। নিয়মিত রসুন খেলে যে কোনও শরীর খারাপকে সহজেই প্রতিহত করা যায়। রসুন, স্যুপ এবং ব্রোথের মধ্যে ব্যবহার করলে স্বাদ এবং গুণ দুই-ই বৃদ্ধি পায়।
ডাবের জল : শরীর অসুস্থ হলে ভিতর থেকে শরীরকে আদ্র রাখা খুবই দরকারি। বিশেষ করে জ্বর, ডাইরিয়া এবং বমি হলে শরীরে জলের পরিমাণ বৃদ্ধি করা উচিত। শরীর খারাপ হলে সবথেকে উপকারি উপাদান হল ডাবের জল। এতে প্রচুর পরিমাণে শর্করা থাকে, যা শরীর আদ্র রাখতে সাহায্য করে। একইসঙ্গে থাকে প্রচুর প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা রক্তে শর্করার মাত্রা বজায় রাখতে সাহায্য করে।
গরম চা : সর্দি কাশি হলে গরম চা দারুণ উপকার করতে পারে। চা খুব সহজে নাক এবং বুক থেকে সর্দি বার করে ফেলতে পারে। চা খেলে শরীরে আদ্রতা কমে যাওয়ার কোনও ভয় নেই। এতে যে পরিমাণ ক্যাফেইন থাকে, তাতে আদ্রতা কম হয় না। দিনে বেশ কয়েকবার চা খেলে শরীর আদ্র থাকবে এবং নাক বা গলা সর্দিতে আটকে থাকবে না। চায়ের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে পলিফেনলস থাকে, যার বহুবিধ গুণ রয়েছে। চায়ের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে, যা প্রদাহজনিত সমস্যা এবং ক্যান্সার রোধ করতে পারে। চায়ের মধ্যে ট্যানিন নামক পলিফেনল পাওয়া যায়, যা জিবান্য এবং সংক্রমণ রোধ করতে পারে।
মধু : মধুর মধ্যে প্রচুর পরিমাণে জীবাণু এবং সংক্রমণবিরোধী উপাদান থাকে। প্রাচীনকালে মিশরে ক্ষতস্থানে ব্যান্ডেজ করার সময় তাতে মধু ব্যবহার করা হত। মধু নিয়মিত খেলে শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে ওঠে। তাই তো জ্বর, সর্দি, কাশি হলে মধু খাওয়া একান্তভাবে দরকার। বিশেষ করে যখন ব্যাকটেরিয়ার দ্বারা কোনও রোগ হয়। মধু শিশুদের ক্ষেত্রে সর্দি কাশি কোমাতে সাহায্য করে। তবে, এক বছরের কম শিশুদের মধু খাওয়ানো উচিত নয়। এক চা চামচের অর্ধেক মধু, এক গ্লাস গরম দুধ, জল বা চায়ের সঙ্গে মিশিয়ে নিতে হবে। এতে শরীরে আদ্রতা বজায় থাকে।
আদা : আদা বমিভাব কমাতে দারুণভাবে সাহায্য করে। গর্ভবতী অবস্থায় এবং ক্যান্সারের চিকিৎসায় যে বমি হয়, তাও দূর আটকাতে পারে আদা। আদায় প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে। ফলে, প্রদাহজনিত সমস্যা এবং ক্যান্সার রোধ করতে পারে। রান্নার মধ্যে, চায়ের মধ্যে আদা মিশিয়ে খাওয়া খুবই উপকারি।
কলা : শরীর খারাপ হলে কলা খাওয়া অত্যন্ত জরুরি। কলার মধ্যে স্বাদ এবং গন্ধ থাকে। এছাড়াও কলার মধ্যে নির্দিষ্ট পরিমাণে ক্যালরি এবং পৌষ্টিক উপাদান থাকে। বমিবমিভাব হলে কলা, ভাত, টোস্ট ইত্যাদি ডাক্তারেরা খেতে বলেন। কলার মধ্যে থাকে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার। ফলে, ডাইরিয়ার মতো সমস্যা সহজে সমাধান করতে পারে।
ওটমিল : শরীর খারাপ হলে ওটমিল খাওয়া খুবই উপকারি। এতে প্রচুর পরিমাণে ক্যালোরি, ভিটামিন এবং খনিজ পাওয়া যায়। ওটমিলে প্রচুর প্রোটিনও থাকে। ওটমিল রক্তে শর্করার পরিমাণ বজায় রাখে এবং শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে। হাঁটু, কনুই প্রভৃতি অংশে প্রদাহজনিত সমস্যা দূর করতে পারে ওটমিল। ওটমিল ডাইরিয়ার সমস্যা নিবারণ করতে পারে। ওটমিল হজমশক্তিও বাড়িয়ে তোলে।
দই : শরীর অসুস্থ হলে দই খাওয়া যেতেই পারে। দইয়ের মধ্যে ১৫০ ক্যালোরি এবং ৮ গ্রাম প্রোটিন থাকতে পারে। দইয়ের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম থাকতে পারে। এছাড়াও থাকে ভিটামিন এবং খনিজ উপাদান। তাই তো দই ছোট- বড় সকলের জন্যই খুব বেশী উপকারি। অনেকেই দই খান না ঠাণ্ডা লেগে যাওয়ার ভয়ে। যদিও, এমন কোনও প্রমান এখনও পাওয়া যায়নি। যদিও সর্দি কাশির সময় দই না খাওয়াই ভাল।
মাছ : শরীর খারাপ হলে মাছ খাওয়া যেতে পারে। এর মধ্যে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন থাকে, যা শরীরের জন্য খুবই উপকারি। যে সব মাছে ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড থাকে, সেই মাছ খাওয়া বেশি উপকারি। এতে প্রদাহ জনিত সমস্যা দূর হয়। মাছে নির্দিষ্ট পরিমাণে ভিটামিন, খনিজ উপাদান এবং ভিটামিন ডি থাকে, যা শরীরে পৌষ্টিক উপাদানের ঘাটতি কমাতে পারে। ভিটামিন ডি শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তোলে।