শুয়োর থেকে ব্যাঙ আবার উদাস পুতুলও সৌভাগ্যের প্রতীক !
কলকাতা টাইমস :
কথায় বলে ‘এক দেশের বুলি আরেক দেশের গালি’। এমনি ধারায় বিভিন্ন দেশ বা অঞ্চলে কিছু বিশেষ বস্তুকে শুভ-র প্রতীক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এর পেছনে অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় স্রেফ লৌকিক বিশ্বাস জড়িত। কোথাও হয়তো কোনো একটি প্রাণী বা বস্তু নেতিবাচক অর্থ বহন করে আবার অন্য কোথাও একই জিনিস সৌভাগ্যের চিহ্ন হিসেবে আদৃত হয়। আসুন, তেমনি কিছু শুভ প্রতীকের কথা জেনে নেই এখানে।
রৌপ্য মুদ্রা: ব্রিটেনে ক্রিসমাস উপলক্ষ্যে বাড়িঘরে যে পুডিং বানানো হয় তার ভেতরে রৌপ্যমুদ্রা ভরে দেওয়ার ঐতিহ্য রয়েছে। ব্রিটিশ খৃস্টানদের বিশ্বাস, পুডিং কেটে খাওয়ার সময় যার ভাগে ওই মুদ্রা পড়বে তার আগামী বছরটি খুব শুভ হবে।
জিন চান: জিন চান মানে একশ্রেণির ব্যাঙ। একে ‘টাকাওয়ালা ব্যাঙ’ (মানি টোড) হিসেবে বিশ্বাস করে চীনের সিংহভাগ মানুষ। লাল চোখ আর তিন পা ওয়ালা জিন চানের প্রতীক দোকানঘরে মুদ্রার তুজের ওপর রেখে দেওয়া হয়। সম্ভ্রান্ত আর ধনী ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে এরকম ব্যাঙের মূর্তির মুখে স্বর্ণনির্মিত গোলাকার মুদ্রার প্রতীকও রাখা হয়। ব্যাঙের মুখে যদি স্বর্ণের মুদ্রা না থাকে তবে প্রতীকটিকে ঘরের এমন স্থানে রাখা হয় যাতে তার মুখ দরোজার দিকে থাকে। তাদের বিশ্বাস, এতে করে জিন চান তার উল্টানো জিভ দিয়ে টাকা-পয়সা দোকানে টেনে আনে। তাদের আরও বিশ্বাস, যে ঘরে বা বাড়িতে মর্যাদার সঙ্গে জিন চান রাখা হয় সেখানে ধন-দৌলতের অভাব হয় না।
হাতি: ভারতে হাতিকে শুভ বা ধনসম্পদের প্রতীক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। বিশেষ করে সংখ্যাগুরু সনাতন ধর্মীয়রা হাতিকে তাদের ভগবান গণেশের প্রতীক হিসেবে মানে। হাতি দীর্ঘজীবী এবং বুদ্ধিমান এক প্রাণী। হস্তিমূর্তিকে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং বাড়ি-ঘরে সম্মানের সঙ্গে সংরক্ষণ করা হয়। এছাড়া দক্ষিণ এশীয় অপরাপর দেশ নেপাল, শ্রীলংকা থাইল্যান্ডেও হাতি সমাদৃত এবং এর প্রতীককে স্থাপত্যকর্তিতে, শিল্পকলায় বিশেষভাবে তুলে ধরা হয়।
লক্ষ্মী: লক্ষ্মী একজন হিন্দু দেবী। লক্ষ্মীর পূজা অধিকাংশ সনাতন ধর্ম অনুসারীর ঘরেই অনুষ্ঠিত হয়। দীপাবলি ও কোজাগরী পূর্ণিমার দিন তাঁর বিশেষ পূজা হয়। এটি কোজাগরী লক্ষ্মী পূজা নামে খ্যাত। বাঙালি হিন্দুরা প্রতি বৃহস্পতিবার লক্ষ্মীপূজা করে থাকেন। সনাতন মতে ধনসম্পদ, আধ্যাত্মিক সিদ্ধি, সৌভাগ্য ও সৌন্দর্যের দেবী তিনি। তাই ব্যবসা-বাণিজ্যে সাফল্যের আশায় লক্ষ্মীমূর্তি দোকানে রাখেন হিন্দু ব্যবসায়ীরা। তাঁর অপর নাম মহালক্ষ্মী। জৈন স্মারকগুলিতেও লক্ষ্মীর ছবি দেখা যায়। লক্ষ্মীর বাহন পেঁচা।
উদাস পুতুল: মধ্য আমেরিকার গুয়াতেমালায় উদাস চেহারার পুতুল (বারি ডল) শুভ প্রতীক হিসেবে সমাদৃত। দেশটির বাসিন্দারা উল, তার ও রঙ-বেরঙের কাপড় দিয়ে তৈরি করে এ ধরনের ছোট ছোট পুতুল। এরপর ঐতিহ্যবাহী পোশাকে সাজানো হয় একে। মন খারাপ বা বিষন্ন শিশুদের এ ধরনের পতুল উপহার দিয়ে বলা হয় রাতে ঘুমানোর সময়ে তা মাথার বালিশের নিচে রেখে দিতে। তাদের বিশ্বাস, এতে করে শিশুটির যাবতীয় সমস্যা ওই পুতুলটি নিজের ওপর নিয়ে নেবে।
খরগোশের পা: উত্তর আমেরিকার বিভিন্ন অঞ্চলে খরগোশের পা বা থাবাকে বিশেষ শুভ প্রতীক হিসেবে মানা হয়। একশ্রেণির যাদুকর বা ওঝা খরগোশের থাবাকে হুডু বলে ডাকে। একে অলৌকিক ক্ষমতার অধিকারী বলে মনে করে তারা।
শুয়োর: আমাদের দেশে ‘শুয়োর’ শব্দটি মারাত্মক একটি গালাগাল হলেও জার্মান সংস্কৃতিতে শুয়োরকে সৌভাগ্য ও ধন-দৌলতের প্রতীক মানা হয়। এরমধ্যে জংলি শুয়োরকে সব শুয়োরের রাজা হিসেবে মান্য করে তারা।
মাছ: মধ্য ইউরোপের কিছু দেশ যেমন পোল্যান্ড, অস্ট্রিয়া, ক্রোয়েশিয়া, স্লোভেনিয়ায় বিশেষ কায়দার মাছ খাওয়াকে শুভ হিসেবে ধরা হয়। ঘোড়ার খুরের আকারে কাটা মাছের টুকরো ক্রিসমাসের আগের রাতে খাওয়াকে তারা সৌভাগ্যদায়ক বলে বিশ্বাস করে। তারা মনে করে, এমন করলে পারিপিার্শ্বিক সবকিছু ইতিবাচক হয়ে যাবে। কিছু লোক ওই বিশেষ মাছ কাটার সময় এর চামড়াকে সংরক্ষণ করে পরবর্তী ক্রিসমাসের সন্ধ্যা পর্যন্ত। এর ফলে সারা বছর পয়মন্ত যাবে বলে তাদের ধারণা।
অ্যাকর্ন: নরওয়েতে অ্যাকর্ন (ওক গাছের ফল) হচ্ছে শুভ প্রতীক। তারা মনে করে এই ফলকে দরজা-জানালার ওপর রাখলে ঘরে অশুভ-আলোক প্রবেশ করতে পারে না। নরওয়ের প্রাচীন লোকজন মনে করে, ঝড় ও আলোর দেবতা থর পৃথিবীর স্থানে স্থানে ওক গাছ ছড়িয়ে দিয়েছে। তারা বিশ্বাস করে, ওক গাছ যেমন অপ-আলোককে শুষে নেয় তেমনি তার ফল অ্যাকর্নও একই কাজ করে।