৬ কিমি হেঁটে স্কুলে যাওয়া ভূমিহীন চাষির ছেলে থেকে রাইসিনা হিলসে
কলকাতা টাইমস :
ভারতের ১৪তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে যাকে আমরা চিনি সেই রামনাথ কোবিন্দকে সত্যিই কি আমরা চিনি ? কে আর নারায়ণের পর তিনিই দ্বিতীয় দলিত রাষ্ট্রপতি৷ বিশ্বের সর্ববৃহৎ গণতান্ত্রিক দেশটির সর্বোচ্চ সাংবিধানিক ক্ষমতা তারই হাতে।
জেনে অবাক হবেন রাষ্ট্রপতির আসনে বসা রামনাথ মাটির ঘর থেকে আজ রাজ প্রসাদ রাইসিনা হিলসে। জীবনের এই গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে শৈশবের স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, ‘মাটির ঘর থেকে আমার যাত্রা শুরু। আমার এই যাত্রা দীর্ঘ দিনের।’
এরপরই নিজেকে সামলে নিয়ে দেশের স্বার্থে কাজ করার জন্য দৃঢ়প্রতিজ্ঞ রামনাথ কোবিন্দ বলেন, ‘সর্বধর্ম সমন্বয়ের দেশ ভারতবর্ষ। গোটা বিশ্ব ভারতীয় সংস্কৃতির প্রতি আকৃষ্ট। নিষ্ঠার সঙ্গে সব দায়িত্ব পালন করব। দেশের অখণ্ডতা রক্ষা করব। সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে থাকব।’
রাজনীতিবিদ ও আইনজ্ঞ রামনাথ কোবিন্দ বরাবরই ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ছিলেন। ৭১ বছর বয়সী রামনাথ কোবিন্দ ১৯৪৫ সালের ১ অক্টোবর উত্তরপ্রদেশের কানপুরের পারাউনখ গ্রামের দলিত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।
১৯৭৪ সালে বিয়ে করেন তিনি। তার স্ত্রীর নাম সাবিতা কোবিন্দ। তাদের ঘরে দুটি সন্তান, পুত্র প্রশান্ত কুমার ও কন্যা স্বাতী। রামনাথের বাবা মাইকুলাল ছিলেন একজন ভূমিহীন চাষি। ছোট্ট দোকানের উপর নির্ভর ছিল মাইকুলাল কোবিন্দের সংসার। রামনাথ কোবিন্দ জন্মেছিলেন যে মাটির কুঁড়ে ঘরে যেটি এখন আর নেই।
৫ ভাই ও ২ বোনের মধ্যে সবথেকে ছোট রামনাথ ৫ বছর বয়সে তার মা’কে হারান। গ্রামের পাঠশালায় প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করার পর রামনাথ প্রতিদিন ৬ কিলোমিটার পায়ে হেঁটে খানপুর গ্রামে জুনিয়ার স্কুলে পড়তে যেতেন। অদম্য প্রচেষ্টা ও মনোবলকে পাথেয় করে উনি কানপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিনস্ত ডক্টর অমিত কুমার শ্রীবাস্তব কলেজ থেকে কমার্স নিয়ে বিএ ও আইন পাশ করেন।
কানপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বি.কম. এবং এলএলবি করার পর আইন পেশাকে বেছে নেন তিনি। এরপর ইন্ডিয়ান অ্যাডমিনিস্ট্রিটিভ সার্ভিস (আইএএস) পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে দিল্লি চলে যান। পরপর তৃতীয়বারের চেষ্টায় আইএএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন তিনি।
১৯৭৭ সালে দিল্লি হাইকোর্টে সরকারি আইনজীবী হিসেবে তাকে নিযুক্ত করে কেন্দ্রীয় সরকার। টানা তিন বছর ওই পদে কাজ করার পর ১৯৮০ সালে কেন্দ্রীয় সরকারের আইনি পরামর্শদাতা করা হয় কোবিন্দকে। এই পদে টানা ১৩ বছর ছিলেন তিনি।
১৯৭৭ সালেই সক্রিয় রাজনীতিতে যোগ দেন রামনাথ কোবিন্দ। তার আগে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মোরারজি দেশাইয়ের ব্যক্তিগত সচিব ছিলেন তিনি। ১৯৯৪ সালে সংসদীয় রাজনীতিতে প্রবেশ করেন রামনাথ কোবিন্দ। ১৯৯৮ সালে বিজেপি দলিত মোর্চার সভাপতি নির্বাচিত হন রামনাথ কোবিন্দ। ২০০২ সাল পর্যন্ত এই পদে ছিলেন তিনি। সেইসঙ্গে তিনি কোলি সমাজেরও সর্বভারতীয় সভাপতি ছিলেন।
কৃষক পরিবারের সন্তান কোবিন্দের দলিত সমাজের প্রতিনিধিত্ব ভোটের বাক্সে বরাবরই ফসল তুলতে সাহায্য করেছে। উত্তরপ্রদেশে কোবিন্দই ছিলেন মায়াবতীর বিরুদ্ধে বিজেপি-র তুরুপের তাস। দলিত ভোট ব্যাংকের রাজনীতির অংককে মাথায় রেখেই ২০১৫ সালে কোবিন্দকে বিহারের রাজ্যপাল করে বিজেপি।