অবাক করবে গান্ধীজির প্রপৌত্রীর এই উদ্যম জীবন !
তাঁর এক ডাকে তাঁর পিছু নিয়েছিল গোটা দেশ। যাঁর এক ডাকে ভারত স্বাধীন করতে মৃত্যকেও তুচ্ছ করেছিল লাখ মানুষ। সেই জাতির জনক মহাত্মা গান্ধী চালিয়েছিলেন গোটা ভারতকে। আর তাঁর প্রপৌত্রীর নাচায় প্রায় গোটা আমেরিকাকে। গান্ধীজির ছেলে- হরিলাল, রামদাস, দেবদাস ও মণিলাল। গান্ধীর হত্যাকাণ্ডের পর এই ছেলেরা বিদেশের ছয়টি ভিন্ন স্থানে পাড়ি জমান। সেখানেই তাঁরা তাঁদের সন্তানদের লালন-পালন করতে থাকেন। তাঁদের সন্তানদের অনেকেই পরে বিদেশেই থেকে যান। যেমন হরিলালের ছেলে কান্তিলাল। আর তাঁরই মেয়ে মেধা। মহাত্মা গান্ধীর প্রপৌত্রী বলেই শুধু নয়, মেধা তাঁর উদ্দাম জীবন এবং পেশার জন্যও যথেষ্ট জনপ্রিয়।
মেধা গান্ধীর জন্ম এবং বেড়ে ওঠা আমেরিকাতেই। ১৯৪৮ সালে আমেরিকায় চলে এসেছিলেন মেধার বাবা কান্তি লাল। মেধা এখন মার্কিন নাগরিক। ভারতে মেধাদের যাতায়াত থাকলেও সেভাবে কখনও মিডিয়ার সামনেই আসেননি মেধা। নিজের জীবন এবং পেশা নিয়েই থাকতে ভালবাসেন মেধা। মেধা একজন ডিজে। বস্টনের একটি এফএম চ্যানেলের ডিজে মেধা। ‘কিস ১০৮’ নামে একটি রেডিওর এক্সিকিউটিভ প্রডিউসার তিনি।
‘ম্যাটি ইন দ্য মর্নিং শো’ নামে একটি অনুষ্ঠানের সঞ্চালনাও করেন। এর আগে ১০৬.৭ দ্য বিট নামে অন্য একটি রেডিও স্টেশনে কাজ করতেন মেধা। মাত্র ২৮ বছর বয়সেই বস্টনে একজন রেডিও পার্সোন্যালিটি এবং সেলিব্রিটির তকমা পেয়ে গিয়েছেন মেধা। ১৯৮৮ সালে তাঁর জন্ম। ২০০৭ সালে ওহিয়ো ইউনিভার্সিটি থেকে স্নাতক হওয়ার ডিগ্রিও লাভ করেছেন তিনি।
মেধা একজন লেখকও বটে এবং রয়েছে আরও গুণ। লেখালেখি করতে ভালবাসেন মেধা। ডাকসাইটে একজন কমেডি রাইটার হিসাবে নাম আছে তার। এছাড়াও কনটেন্ট রাইটার হিসাবেও তাঁর খ্যাতি আছে। মেধা একজন সাহসী লেখিকা বলেই সবাই মানেন।
প্যারোডি প্রডিউসার-এর কাজও করে থাকেন গান্ধীর এই প্রপৌত্রী। গানও গাইতে পারেন মেধা। গায়িকা হিসাবেও তিনি বহুবার বিভিন্ন মহলে প্রশংসিত হয়েছেন। মেধাকে নিয়ে উচ্ছ্বসিত তাঁর বন্ধুমহল ‘ম্যাটি ইন দ্য মর্নিং শো’-এর প্রধান ম্যাটি সিগল তো মেধাকে নিয়ে রীতিমতো আবেগপ্রবণ। তাঁর মতে মেধার মধ্যে রয়েছে অফুরন্ত প্রাণশক্তি ও সৃষ্টিশীলতা। মেধার এই গুণ তাঁর শো-তে বাড়তি মাত্রা যোগ করেছে বলেই মনে করছেন ম্যাটি সিগল।
প্রপিতামহ-এর মতো অহিংসাই মেধার মন্ত্র। হিংসা-মারামারি একদম পছন্দ করেন না মেধা। প্রপিতামহের মতোই তিনি অহিংসারই প্রতিনিধি হিসাবে নিজেকে মনে করেন। ছোটবেলা থেকে মহাত্মা গান্ধীর কথা শুনেই বড় হয়েছেন মেধা। এহেন কন্যার আদর্শ যে গান্ধীর দর্শন হবে তাতে কোনও সন্দেহ নেই।
সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং-এ ‘হট সেলিব্রিটি’ মেধা। ফেসবুক থেকে টুইটার ইনস্টাগ্রাম- সব সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটেই প্রোফাইল অ্যাকাউন্ট আছে মেধার। এঁদের ফলোয়ার এবং বন্ধুর সংখ্যা তাক লাগিয়ে দেওয়ার মতো। এই মুহূর্তে ইনস্টাগ্রামেই মেধার ফলোয়ার সংখ্যা ৫০ হাজার ছাড়িয়েছে।
মেধা বলেন তাঁর মেরুদণ্ড সোজা। ঝগড়া বা মারামারি করে নয়, নিজের দাবিতে অনড় থেকেই বিতর্ককে জিততে ভালবাসেন মেধা। আমেরিকাতে জন্ম ও কর্ম হলে কি হবে মেধা যে যর্থাথইভাবে মহাত্মা গান্ধীর উত্তরাধিকারী তার প্রমাণ নাকি তিনি বারবার দিয়েছেন। কখনও অন্যায়ের কাছে নাকি মাথা নামান না মেধা। দৃঢ়তার সঙ্গে শান্তভাবে নিজের বক্তব্য পেশ করাটাই তাঁর পছন্দের।
ব্যাঙ্গাত্মক উক্তির জন্য বিখ্যাত মেধা। শ্লেষ জাতীয় বাক্যের ব্যবহার কতটা উচ্চমানের হতে পারে তা নাকি জানেন মেধা। এমনটাই বক্তব্য তাঁর বন্ধুদের। এমনকী, মেধা তাঁর সোশ্যাল মিডিয়া প্রোফাইলেও লিখে রেখেছেন এমন কিছু ব্যাঙ্গাত্মক ক্যাপশন। এর মধ্যে একটি জায়গায় তিনি লিখেছেন- ‘আই অ্যাম ইন্ডিয়ান বাট আই অ্যাম এ ডিজে দ্যাট মেকস মি ফেইলিওর’। বলতে গেলে আমেরিকা থেকেও নাকি ভারতের গন্ধকে মিস্ করেন মেধা। আসলে তাঁর প্রপিতামহ তো আজও ১২১ কোটি ভারতবাসীর জাতির জনক হয়েই আছেন।