তিন হাজার বছর ঘুম ভাঙল এই দেবতার
কলকাতা টাইমস :
মিসর প্রত্নতাত্ত্বিকদের বিস্ময়। সম্প্রতি সেখানে খনন চালিয়ে পাওয়া যায় তিন হাজার বছরের পুরনো মিসরীয় দেবতা স্ফিংসের এক মূর্তি। যার মুখমণ্ডল ভেড়ার মতো।
সুইডেনের লান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক দল এবং মিসরীয় পুরাতত্ত্ব বিভাগের যৌথ প্রচেষ্টায় সংঘটিত এই খননকার্যে আরো পাওয়া গেছে হাইরো গ্লিফিক অক্ষরে লিখিত তিন হাজার তিনশ ৫০ বছর আগের এক লিপি, বাজপাখির এক মূর্তি।
তা ছাড়াও পাওয়া গেছে ডানাওয়ালা সূর্যের খোদাই করা এক ভাস্কর্য যা প্রাচীন মিসরে অমরত্ব এবং বীরত্বের প্রতীক হিসেবে বিবেচনা করা হতো।
পাওয়া গেছে অপেক্ষাকৃত ছোট আকারের স্ফিংসের এক মূর্তি যা প্রত্নতাত্ত্বিকদের মতে বড় মূর্তিটি নির্মাণের আগে ‘ডেমো’ হিসেবেই বানানো হয়েছিল।
স্ফিংস হলো এক প্রাচীন অবয়ব যার উল্লেখ গ্রিক ও মিসরীয় সভ্যতায় পাওয়া যায়। গ্রিসে স্ফিংসকে নরকের রক্ষাকর্তা হিসেবে মানা হলেও সে দেশে একে উপকারী দেবতা মনে করা হয়।
এর শরীরের পেছনের অংশ সিংহের মতো, প্রায়ই পাখির মতো বড় ডানা থাকে এবং মুখমন্ডল সাধারণত মানুষের মুখের মতো। ভেড়ার মুখমণ্ডল বিশিষ্ট আবিষ্কৃত স্ফিংসটি ক্রিওসস্ফিংস নামে পরিচিত। এটির উচ্চতা পাঁচ মিটার এবং প্রস্থ তিন দশমিক পাঁচ মিটার। কালের প্রবাহে এর মাথার দিকটা বেশ কিছুটা ক্ষয়ে গেছে।
ক্রিওসস্ফিংস সাধারণত রাজার ক্ষমতার ও শৌর্যের প্রতীক হিসেবে ব্যবহৃত হতো। বাঁকানো শিং, ভেড়ার মতো মুখ এবং সিংহের মতো শরীর সব মিলিয়ে অদ্ভুত এই দেবতাকে সে সময় রাজাদের বীরত্বের প্রমাণ হিসেবে পূজা করা হতো।
মনে করা হয়, রোমান আক্রমণ স্ফিংস-এর মূর্তিগুলি ধ্বংস করে দেয়। গবেষকরা মনে করেন, বিস্তৃত অঞ্চল জুড়ে অবস্থিত বহু প্রাচীন এই কর্মশালা মিসরের ১৮তম রাজবংশের ফারাও তুতেনখামেনের পিতামহ আমেনহোতেপ তৃতীয়ের সময়কার।
ফারাও আমেনহোতেপ তৃতীয় মাত্র বারো বছর বয়সে রাজার আসনে বসেন। তার পত্নী রানি ‘তিয়ে’ তার শাসনকালে সর্বক্ষণ তার পাশে থেকে একসঙ্গে দেশ শাসন করেছেন। প্রায় ৪০ বছর তিনি মিসরে রাজত্ব করেন।
খ্রিস্টপূর্ব ১৩৫৪ সালে আমেনহোতেপ তৃতীয় মারা যান এবং দায়িত্ব পান তার পুত্র ফারাও আখেন্তান। রহস্যে ভরা এই দেশটি বরাবরই পরিচালক থেকে লেখক, পুরাতত্ত্ববিদ থেকে পর্যটক; সবারই পছন্দের। এখানে সবসময়ই ইতিহাস উঁকি দিচ্ছে প্রাচীন পিরামিডের গায়ে অথবা মাটির নিচে ঘুমিয়ে থাকা হাজার হাজার বছর পুরনো মমির মাধ্যমে। তিন হাজার বছরের পুরনো এই কর্মশালাটি আবিষ্কারের মধ্য দিয়ে তাতে আরেকটি পালক যোগ হলো।