November 12, 2024     Select Language
৭কাহন Editor Choice Bengali KT Popular

বিশ্বকে চমকে দেয় এই গোয়েন্দাদের কারনামা

[kodex_post_like_buttons]
কলকাতা টাইমস : 
রাষ্ট্র ও নাগরিকের নিরাপত্তা বিধানের জন্য সামরিক ও অসামরিক সংস্থার গোপন তথ্য প্রয়োজন হয়। এসব তথ্য গোয়েন্দারাই সংগ্রহ করে দেন। এ ব্যবস্থাহীন পৃথিবী অকল্পনীয়। তাই বলা যায়, গোয়েন্দা ছাড়া চলে না বিশ্ব।

পরদেশে আধিপত্য করতে হলেও দরকার গোয়েন্দা তত্পরতা। এ ধরনের তত্পরতার কাহিনী ফাঁস করে আলোড়ন তুলেছিলেন অ্যাসাঞ্জ ও স্নোডেন। দূর অতীত বা আজকের দুনিয়া সর্বকালেই আকর্ষণীয় গোয়েন্দাদের শ্বাসরুদ্ধকর অভিযান।

সেরা গোয়েন্দা : জুয়ান গার্সিয়া। তিনি ইতিহাসের বিস্ময়কর এক রেকর্ড গড়েন। নাজি ও ব্রিটিশ বাহিনী, দুই পক্ষ থেকেই সিভিল মিলিটারি অ্যাওয়ার্ড লাভ করেন। বুঝতে অসুবিধা হওয়ার কথা নয়, তিনি একজন গুপ্তচর। সিনেমার পর্দায় যে গোয়েন্দাদের দেখানো হয় তিনি তাদেরও ছাড়িয়ে গেছেন রোমাঞ্চের দিক দিয়ে। বিশ্বযুদ্ধের সময় তথ্য  চুরির কাজটি করতেন সুচারুভাবে। অথচ শুরুর দিকে ব্রিটেন ও যুক্তরাষ্ট্র তাকে হেলা করে তাড়িয়ে দিয়েছিল— ভেবেছিল একে দিয়ে কী আর হবে।

তার মতো বলা যায় কিম ফিলবির কথাও। কোল্ড ওয়ারের সময় সোভিয়েত ইউনিয়নের সবচেয়ে সফল গুপ্তচর ছিলেন তিনি। যদিও বলা হয় তিনি যুক্তরাষ্ট্রের হয়েও কাজ করেছেন। তবে তার নিজস্ব গোয়েন্দা দল নিয়ে এখনো ধোঁয়াশা রয়ে গেছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ছাড়াও তিনি অস্ট্রেলিয়া, স্পেন, তুর্কি, যুক্তরাষ্ট্র, লেবানন ও যুক্তরাজ্য থেকে তথ্য চুরি করে রীতিমতো তারকা গোয়েন্দা বনে যান।

আর্থার ওয়েনসকে গোয়েন্দাদের লিজেন্ড মানতেও ক্ষতি নেই অনেকের। তাকে সবাই জানত ‘স্নো’ নামে। এই কোডনেমের আড়ালের মানুষটিকে কেউ খুঁজে পেত না। তাকে খুঁজে হয়রান হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটিশ নেভি, জার্মান নেভি। মিউনিখ যাত্রা করে তিনি সাফল্যের দেখা পান। অবশ্য পরে ব্রিটেনের এমআই ফাইভ তাকে গোয়েন্দা হিসেবে নিয়োগ দেয়।

শুধু যে পুরুষ গোয়েন্দারাই মাঠ কাঁপিয়েছে এমনটি ভাবলে ভুল হবে। তাদের সঙ্গে সমানতালে কাজ করেছেন নারী গোয়েন্দারাও। ইতিহাস বলে, গোয়েন্দা হিসেবে নারীদের সাফল্যের হার মোটেই কম নয়।

তেমনই একজন মার্গারেথা গারটরুইড মার্গ্রেইট ম্যাকলিওড। সংক্ষেপে যাকে সবাই মাতাহারি নামে চেনে। ১৮৭৬ সালের ৭ আগস্ট নেদারল্যান্ডসে জন্ম নেওয়া এই ডাচ নাচিয়ে পৃথিবীর ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে আছেন এখনো তার বিশ্বাসঘাতকতার জন্য। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের কথা। ফ্রান্সের হয়ে গুপ্তচরের কাজ শুরু করেন মাতাহারি নাচের জগতের পাশাপাশি।

এতটুকু হয়তো যথেষ্ট ছিল। কিন্তু মাতাহারি সন্তুষ্ট ছিলেন না এটুকুতে। নিজের দেশ ফ্রান্সের হয়ে গুপ্তচরগিরি করার পাশাপাশি ফ্রান্সের ওপরেও গুপ্তচরগিরি শুরু করেন এই নারী। জার্মানদের হয়ে ফ্রান্সের খবরাখবর জার্মানিতে চালান করতেন এই নারী গুপ্তচর। প্রচণ্ড সুন্দরী আর ভালো নাচিয়ে ছিলেন তিনি। ফলে তার কাছে আসতও নানা দেশের নামিদামি সব লোক।

বলা যায় ন্যান্সি ওয়েকের কথা। একজন ব্রিটিশ এজেন্ট হিসেবে তিনি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষের দিকে কাজ শুরু করেন। তিনি মিত্রবাহিনীর সবচেয়ে সতর্ক ও ছদ্মবেশী গোয়েন্দা ছিলেন। জার্মানিদের গুপ্ত পুলিশ গেস্টাপো তাকে হোয়াইট হাউস বলত। সে সময় তিনি ছিলেন গেস্টাপোর মোস্ট ওয়ান্টেড লিস্টেড গোয়েন্দা এবং ১৯৪৩ সালে তার মাথার দাম ঘোষণা করা হয় ৫ মিলিয়ন ফ্রাঙ্ক।

আরও বলা যায় মার্গারেট ক্যাম্বল গেইজের কথা। তিনি ছিলেন জেনারেল থমাসের স্ত্রী। আমেরিকান রিভ্যুলশনারি ওয়ার চলাকালে ব্রিটিশ আর্মির নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। ইতিহাস বলে, তিনি তার নিজের স্বামীর ওপরই স্পাইং করতেন।  ১৭৭৫ সালে তাকে গুপ্তচর বৃত্তির অপরাধে ইংল্যান্ডে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।

সেলুলয়েডে গোয়েন্দা : বইয়ের পাতায় কিংবা সিনেমা জগতের রুপালি পর্দায় গোয়েন্দানির্ভর উপন্যাস, গল্প ও সিনেমার সংখ্যা নেহাত কম নয়। গোয়েন্দাদের প্রতি সাধারণ মানুষের আগ্রহ বেশি বলেই লেখক ও চিত্রপরিচালকরা গোয়েন্দা চরিত্রনির্ভর সৃষ্টিশীল কাজ করেছেন। সেলুলয়েডের ফিতেয় বহু জনপ্রিয় গোয়েন্দা কাহিনীনির্ভর সিনেমার জায়গা হয়েছে।

তেমনই কয়েকটি সিনেমা— নর্থ বাই নর্থওয়েস্ট, থ্রি ডেইস অব দ্য কনডর, বডি অব লাইস, আর্গো, ট্রু লাইস, ক্যাসিনো রয়েল, স্কাইফল, আই অব দ্য নিডল, মিউনিখ, দ্য লিভস অব আদারস, রোনিন, অস্টিন পাওয়ারস : ইন্টারন্যাশনাল ম্যান অব মিস্ট্রি, দ্য বার্নি আইডেনটিটি, দ্য স্পাই হু কেইম ইন ফ্রম দ্য কোল্ড, মিশন ইম্পসিবল টু, ডক্টর নম্বর, সল্ট, কনফেশন অব অ্যা ডেনজারাস মাইন্ড, টিংকার ট্রেইলর সোলজার স্পাই, দ্য ডেবথ, দ্য রিক্রুট, দ্য ফোর্থ প্রটোকল, স্পাই গেম, সিরিয়ানা, দ্য গুড শেপার্ড, টেকেন, কোয়ান্টাম অব দ্য সোলেস, দ্য ইপক্রেস ফাইল, ব্রিজ অব স্পাইস, স্পেক্ট্রা, দ্য থার্টি নাইন স্টেপস, দ্য ম্যান ফ্রম ইউএনসিএলই, ক্যারাডে, দ্য ডেডলি অ্যাফেয়ার, এনিমি অব দ্য স্টেট, মাতাহারি, মিনিস্ট্রি অব ফেয়ার, অ্যা মোস্ট ওয়ানটেড ম্যান, নো ওয়ে আউট, আমেরিকান আল্ট্রা, দ্য হান্ট ফর রেড অক্টোবর, দ্য লেডি ভ্যানিসেস, ডাই অ্যানেদার ডে, গোল্ডফিঙ্গার, দ্য কনভারশেসন, মিস্টার অ্যান্ড মিসেস স্মিথ, পেট্রিয়ট গেম, দ্য ম্যান হু নিউ টু মাচ, দ্য স্পাই হু লাভড মি, ইনিগমা, সেফ হাউস ইত্যাদি।

বুমেরাং : গোয়েন্দাদের চ্যালেঞ্জ কম নয়। অনেকেই হয়তো জানেন না, তাদের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ গোয়েন্দাদের কাছ থেকে তথ্য চুরি করা নয়, নিজেদের কর্মপরিকল্পনা ও দলীয় অ্যাজেন্টদের পরিচয় গোপনে রাখাই তাদের প্রথম দায়িত্ব। একই দলের লোক হয়ে পুরো প্রশাসনের কাজ ফাঁস করে দিয়ে ইতিমধ্যে বেশ কয়েকজন গোয়েন্দা কর্মকর্তা আলোচিত-সমালোচিত হচ্ছেন। এ ছাড়া হ্যাকিং করেও তথ্য চুরি করছেন অনেকে। তাদের বলা হচ্ছে গোয়েন্দা বুমেরাং—

এডওয়ার্ড স্নোডেন : আমেরিকার কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএর সাবেক সদস্য তিনি। তিনি আলোচনায় আসেন আমেরিকার ইন্টারনেট নজরদারি কর্মসূচির তথ্য ফাঁস করে দিয়ে। বিশ্বজুড়ে তো বটেই, নিজ দেশের নাগরিকদের ইন্টারনেটে রক্ষিত তথ্য নিরাপত্তা নিয়ে তিনি প্রশ্ন তোলেন।

স্নোডেন ফাঁস করে দেন প্রিজম কর্মসূচির আওতায় ফেসবুক, গুগল, মাইক্রোসফট, ইয়াহু, ইউটিউব এবং অ্যাপলসহ বিভিন্ন ইন্টারনেট জায়ান্ট প্রতিষ্ঠানকে না জানিয়েই তাদের সার্ভারে সরাসরি প্রবেশ করে তথ্য সংগ্রহ করে আমেরিকার ন্যাশনাল সিকিউরিটি এজেন্সি (এনএসআই) ও ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (এফবিআই)। এই মারাত্মক ও অসাংবিধানিক কাজ করায় যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বজুড়ে প্রবল সমালোচনার মুখে পড়ে। স্নোডেনকে নিয়ে বিশ্বব্যাপী ব্যাপক বিতর্কের শুরু হয়। উল্টো দিকে কিছু কিছু দেশে তাকে বলা হয় তিনি একজন বীর। গোপন তথ্য ফাঁসকারী ও ভিন্নমতাবলম্বীর পাশাপাশি তাকে বিশ্বাসঘাতকও বলা হয়েছে। অবশ্য স্নোডেন বলেছেন, জনগণের বিরুদ্ধে এবং তাদের নামে গোপনে যেসব করা হচ্ছে তা জনসাধারণকে জানিয়েছেন তিনি।

জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ : জুলিয়ান পল অ্যাসাঞ্জ অস্ট্রেলিয়াতে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি সাংবাদিক ও কম্পিউটার হ্যাকার বলেই বেশি পরিচিত। তবে গোপন মার্কিন দলিল প্রকাশ করে তিনি বিশ্ব কাঁপিয়ে দেন। এই গোপন দলিলগুলো তিনি উইকিলিকস ওয়েবসাইটের মাধ্যমে উন্মুক্ত করে দেন। এই গোপন দলিলগুলোতে স্পষ্টতই মার্কিন নীতিনির্ধারণী কিছু বিষয় জনসম্মুখে চলে আসে, যে কারণে মার্কিন সরকার দেশে দেশে চাপের মুখে পড়ে।

২০১০ সালে আড়াই লাখ মার্কিন কূটনৈতিক তারবার্তা ও পাঁচ লাখ সামরিক গোপন নথি ফাঁস করে আলোড়ন সৃষ্টি করে উইকিলিকস। ২০১০ সালে সুইডেন ভ্রমণের সময় দুই মহিলাকে যৌন নিপীড়নের অভিযোগে করা মামলায় ফেঁসে যান তিনি। এই মামলা নিয়ে বছরের পর বছর ধরে আইনি মোকাবিলা করছেন। ইকুয়েডরের লন্ডন দূতাবাসের আশ্রয়ে আছেন জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ।

অ্যাসাঞ্জ শৈশব থেকেই তিনি কম্পিউটারে দক্ষতা অর্জন করেন। ১৯৯৫ সালে হ্যাকিংয়ের অপরাধে তিনি একবার গ্রেফতার হয়েছিলেন। আর কোনো দিন হ্যাকিং করবেন না এমন মুচলেকা দিয়ে সেবার তিনি ছাড়া পেয়েছিলেন। তিনি কোথাও স্থায়ীভাবে বাস করেন না। ২০০৬ সালে তিনি উইকিলিকস প্রতিষ্ঠা করেন। পরের বছর কিউবার গুয়ানতানামো বে বন্দী শিবিরের বন্দীদের সম্পর্কে তথ্য ফাঁস করে ‘ফাঁস বিদ্যায়’ প্রথম হাতেখড়ি দেন তিনি।

গোয়েন্দাগিরি : গোয়েন্দাদের কাজ গোপনীয়। প্রতিটি দেশের গোয়েন্দা সংস্থা এই গোপনীয়তা অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে রক্ষা করে চলে। গোয়েন্দারা কীভাবে তাদের মিশনের জন্য প্রয়োজনীয় কর্মপরিকল্পনা করে থাকে তা হুবহু জানা একেবারেই সম্ভব নয়। ফ্রান্সের প্যারিসে ব্যঙ্গাত্মক সাময়িকী শার্লি এবদোর কার্যালয়ে হামলার ঘটনায় বেশ কয়েকজনের প্রাণহানির ঘটনার পর গোয়েন্দা নজরদারির বিষয়টি আলোচনায় আসে।

যারা এই হামলার ঘটনা ঘটিয়েছে, তাদের ব্যাপারে ২০১১ সালে মার্কিন গোয়েন্দারা ফ্রান্স কর্তৃপক্ষকে সতর্ক করেছিল। মার্কিন গোয়েন্দারা তখন জানিয়েছিল, ফ্রান্সের এক নাগরিক সন্ত্রাসী প্রশিক্ষণ নিতে ইয়েমেন গেছেন। ওই বছরের নভেম্বর থেকে ফ্রান্সের গোয়েন্দারা সাইদ কোয়াচি নামের ওই ব্যক্তির ওপর গোয়েন্দা নজরদারি শুরু করে। সাইদ ও তার ছোট ভাই শরিফের মোবাইল ফোনে আড়িপাতা হয়। ২০১৩ সালের শেষ দিকে শরিফের ওপর থেকে গোয়েন্দা নজরদারি প্রত্যাহার করে নেয় ফ্রান্সের গোয়েন্দারা।

এর মাস ছয়েক পর সাইদের ওপর থেকেও নজরদারি প্রত্যাহার করা হয়। নজরদারি প্রত্যাহারের জন্য চরম মূল্য দিতে হয় তাদের। বিভিন্ন দেশের গোয়েন্দা সংস্থাকে কাজের পরিপ্রেক্ষিতে দুটো অংশে ভাগ করা যায়। প্রথমত, নিরাপত্তা-সংক্রান্ত কাজে নিয়োজিত গোয়েন্দা সংস্থা। এটি নিরাপত্তা নিয়ে কাজ করে। দ্বিতীয়ত, বৈদেশিক কাজে নিযুক্ত গোয়েন্দা সংস্থা। এরা বিভিন্ন দেশের অর্থনৈতিক, সামাজিক, রাজনৈতিক তথ্যাদি সংগ্রহে নিযুক্ত থাকে।

দেশে দেশে সিক্রেট সার্ভিস : দেশের নিরাপত্তা রক্ষায় গোয়েন্দাবাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। বিশ্বজুড়ে এ ধরনের গোয়েন্দা বাহিনী অত্যন্ত সুনামের সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে। সিক্রেট সার্ভিস প্রদানকারী এই সংস্থাগুলোর সার্বিক বিষয় কখনই জনসম্মুখে আসে না। বিশ্বের প্রথমসারির গোয়েন্দা সংস্থার কথা উঠলেই বলা হয় সিআইএর কথা। সিআইএ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থা।

অ্যাবোটাবাদে লাদেন হত্যা। আফগানিস্তান এবং ইরাকে মার্কিন সেনা অভিযানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল বিশ্বের সব থেকে ধনী দেশের এই সিক্রেট ইন্টেলিজেন্স সার্ভিসের। আর কোল্ড ওয়ারের সময় সিআইএ এজেন্টদের গুপ্তচর বৃত্তির সাফল্যের গল্পও কম নয়।

এমআই সিক্স ব্রিটেনের গোয়েন্দা সংস্থা। মিলিটারি ইন্টেলিজেন্ট সিক্স নামে এই সংস্থাকে সংক্ষেপে এমআই সিক্স বলা হয়। প্রযুক্তির ব্যবহারে এমআই সিক্সের তুলনা নেই। ইসরায়েলের গুপ্তচর সংস্থা মোসাদও সারা বিশ্বে একটি প্রথম সারির গুপ্তচর সংস্থা। তালেবান জঙ্গিদের নিকেশে মোসাদের বহু কোভার্ট অপারেশন সাফল্য পেয়েছে। তালেবান জঙ্গিদের কাছে দুঃস্বপ্নের নাম মোসাদ।

‘র’ বা রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালিসিস উইং। দক্ষতার জন্য সারা বিশ্বে ভারতের এই গুপ্তচর সংস্থার সুনাম রয়েছে। পাকিস্তানের আইএসআই ‘র’-এর প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী। ১৯৬৮ সালে ‘র’-এর জন্ম। স্মাইলিং বুদ্ধ, মেঘদূত, চাণক্যর মতো একাধিক অপারেশনে সাফল্যের জন্য ‘র’কে বিশ্বের প্রথম সারির গুপ্তচর সংস্থা হিসেবে ধরা হয়।

কমিউনিস্ট দেশ চীনের গুপ্তচর সংস্থা এমএসএস তার বিশাল ইন্টেলিজেন্স নেটওয়ার্কের জন্য বিশ্বজোড়া সুনাম রয়েছে।

ভারত, আমেরিকা এবং জাপানের মতো দেশগুলোতেই এমএসএস এজেন্টরা সব থেকে বেশি সক্রিয় বলে ধরা হয়। ডাইরেক্টর জেনারেল ফর সিকিউরিটি এক্সটারনাল, ফ্রান্সের গোয়েন্দা সংস্থা। ১৯৮২ সালে তৈরি ফ্রান্সের এই সিক্রেট সার্ভিস এজেন্সি মধ্য আফ্রিকায় ফরাসি কলোনি তৈরিতে বিশেষ ভূমিকা নিয়েছিল। তবে ইতিহাসের পাতায় বিখ্যাত ফোর্টিন জুলিয়েট অপারেশনে ব্যর্থতার দাগও লেগে আছে এই সংস্থার সঙ্গে।

ইন্টার সার্ভিস ইনটেলিজেন্স সংক্ষেপে আইএসআই পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা। ১৯৪৮ সালে তৈরি হয় এই সংস্থা। পাকিস্তান যে বিদেশনীতিই নিক না কেন তাতে আইএসআইয়ের প্রভাব গুরুত্বপূর্ণ এমনটাই ভাবা হয়।

বিএনডি, জার্মানির গোয়েন্দা সংস্থা। ১৯৫৬ সালে তৈরি জার্মানির এই গুপ্তচর সংস্থা ইসরায়েল এবং লেবাননের যুদ্ধের সময় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিল। লেবাননের জেল থেকে বহু যুদ্ধবন্দীর মুক্তির পেছনেও জার্মানির এই গুপ্তচর সংস্থার হাত ছিল বলে ধারণা করা হয়। এ ছাড়াও যুদ্ধের সময় সাংবাদিকদের ওপর চরবৃত্তিরও অভিযোগ রয়েছে বিএনডি-র বিরুদ্ধে।

রাশিয়ার ইন্টেলিজেন্স এজেন্সির অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো সময়ের ব্যবধানে গুপ্তচর সংস্থার নাম পরিবর্তন হয়। সোভিয়েত সময়ে প্রথম যে এজেন্সিটি ছিল তার নাম ছিল চেকা। পরে চেকা হয়েছিল কেজিবি। পরবর্তীকালে  সোভিয়েত জামানার শেষে রাশিয়ায় নতুন সিক্রেট সার্ভিস এজেন্সির জন্ম হয়। যার নাম হয় এফএসবি। সেই হিসেবে কেজিবিকে অনেকেই এফএসবির পূর্বসূরি বলে থাকেন। আমেরিকার সিআইএ এফএসবির মূল প্রতিদ্বন্দ্বী।

অলড্রিক অ্যামস : তাকে বলা হয় ডাবল এজেন্ট। শুরুর দিকে কাজ শুরু করেন সিআইএর হয়ে। আমেরিকার হয়ে কাজ শুরু করলেও একসময় দল পাল্টে ফেলেন। সোভিয়েত ইউনিয়নের হয়ে কাজ শুরু করলে তার চমক দেখে বিশ্ব। আমেরিকার গুরুত্বপূর্ণ তথ্যগুলো সোভিয়েত ইউনিয়নের কাছে বিক্রি করে দেন। তাকে পরবর্তীতে সিআইএর ইউরোপিয়ান অফিস থেকে তথ্য চুরির কাজে নিয়োজিত করলে তিনি সফল হন। তার অঢেল সম্পদ সবাইকে ঈর্ষান্বিত করে।

অ্যানা চ্যাপম্যান : এখনো তাকে প্রথমসারির গোয়েন্দা বলে মেনে নেন অনেকে। সৌন্দর্য আর বুদ্ধিমত্তার মিশ্রণ অ্যানা চ্যাপম্যানকে করেছে দুর্ধর্ষ গোয়েন্দা। তার জীবনে ব্যর্থতার সংখ্যা খুবই কম। বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ মিশনে নেমে হাতিয়ে নিয়েছেন তথ্য। ১৯৮২ সালে  জন্ম নেন তিনি। এখনো এই রাশিয়ান সুন্দরী মডেলিং করছেন। তিনি বিলাসবহুল জীবনযাপনে অভ্যস্ত। তার বাবা ছিলেন একজন কূটনীতিক। বাস করতেন নিউইয়র্কে। ২৭ জুন, ২০১০-এ অন্য ৯ জনের সঙ্গে তাকে গুপ্তচর বৃত্তির অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়।

ফ্রেডরিক জোবার্ট : তাকে অনেকেই জানে ব্ল্যাক প্যান্থার হিসেবে । তিনি কাজ করেন জার্মানির হয়ে। প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ দুটোতেই তিনি গোয়েন্দার কাজ করেন। এ সময় তিনি অস্ত্র সম্পর্কিত তথ্য চুরি করে বিক্রি করতেন। ভয়ঙ্কর এই কাজে সফলতার কারণে সারা বিশ্বেই তার নাম ছড়িয়ে পড়ে। দেশে দেশে খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ায় কাজ করা কঠিন হয়ে পড়ে তার জন্য। তবে তাকে ঠেকিয়ে রাখা যায়নি। শত্রুপক্ষের চোখ ফাঁকি দিয়ে উল্টো নিজেই গোয়েন্দা দল তৈরি করে বসেন। তাকে গুপ্তচর বৃত্তির কারণে ৩০০ বছর কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

এথেল রোজেনবার্গ : ১৯১৮ সালে এথেলের দেখা হয় জুলিয়াসের সঙ্গে। ১৯৩৯ সালে বিয়ে হয় এই জুটির। গল্পটা তারপরের। তাদের দুজনের চিন্তা-ভাবনাও ছিল এক। আর এই একাত্মতা থেকেই দুজনেই আমেরিকার বাসিন্দা হয়েও একটা সময় গুপ্তচরের কাজ শুরু করেন তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের হয়ে। ১৯৫৩ সালে এই দম্পতি আমেরিকার কাছ থেকে অ্যাটমিক বোমা বা পারমাণবিক বোমার গোপন খবর পাচার করেন সোভিয়েত ইউনিয়নে। কিন্তু একটা সময় গুপ্তচর বৃত্তির সব খবর ফাঁস হয়ে যায়।

Related Posts

Leave a Reply