যেখানে জলের নিচে সবুজের স্বর্গরাজ্য
কলকাতা টাইমস :
বিশাল এ জলাভূমিতে প্রকৃতি বেড়ে উঠেছে আপন খেয়ালে। তার সৌন্দর্য চোখে না দেখলে ঠিক বোঝা যাবে না। বাংলাদেশের উত্তর-পূর্ব প্রান্তে, সুনামগঞ্জ জেলার তাহিরপুর ও ধর্মপাশা উপজেলার ১৮ মৌজায়, ৫১টি জলমহালের সমন্বয়ে ৯ হাজার ৭২৭ হেক্টর অঞ্চল নিয়ে টাঙ্গুয়ার হাওর গড়ে উঠেছে। এটি বাংলাদেশের অন্যতম বড় জলাভূমি। বর্ষাকালে হাওরটির আয়তন দাঁড়ায় প্রায় ২০ হাজার একর। টাঙ্গুয়ার হাওরের কারণে সুনামগঞ্জকে বলা হয় ‘হাওরকন্যা’।
ভারতের মেঘালয়ের পাদদেশে অবস্থিত টাঙ্গুয়ার হাওর। মেঘালয় পর্বত থেকে প্রায় ৩০টি ঝরনা এসে সরাসরি মিশেছে হাওরের জলে । সারি সারি হিজল-করচ শোভিত, পাখিদের কলকাকলি মুখরিত টাঙ্গুয়ার হাওর। মাছ, পাখি এবং অন্য জলজ প্রাণির বিশাল অভয়াশ্রম। জীববৈচিত্র্য ও সৌন্দর্যের কারণে টাঙ্গুয়ার হাওরের সুনাম বাংলাদেশে নয়, দেশের বাইরেও স্বীকৃত। মিষ্টিজলের এ হাওরকে বলা হয় বাংলাদেশের দ্বিতীয় রামসার অঞ্চল। বাংলাদেশের সুন্দরবনকে ধরা হয় প্রথম।
গত ১৮ সেপ্টেম্বর সকাল ৮টায় আমাদের যাত্রা শুরু হয় সিলেটের কুমারগাঁও বাসস্ট্যান্ড থেকে। ৯ জন সদস্য নিয়ে এ ভ্রমণ শুরু হয়। সিলেট থেকে ২ জন, চট্টগ্রাম থেকে ৫ জন এবং ঢাকা থেকে ২ জন সদস্য যোগ দেয় ভ্রমণে। প্রায় সবাই এরআগে খুব বেশি ভ্রমণে যাননি বলে এ ভ্রমণ নিয়ে তাদের উত্তেজনা ছিল খুব বেশি।
সকাল ১১টার দিকে আমরা সুনামগঞ্জ পৌঁছাই। সেখান থেকে সিএনজিযোগে তাহিরপুর উপজেলায় যাই। টাঙ্গুয়ার হাওরের প্রবেশমুখেই দেখা যায় সারি সারি হিজলগাছ। দেখে মনে হবে, গাছগুলো হাওরে আগতদের অভিবাদন জানানোর জন্য দাঁড়িয়ে আছে। মূল হাওরে প্রবেশ করলে জলের নিচের দিকে তাকালে দেখা মিলবে হরেকরকম লতা-পাতা জাতীয় জলজ উদ্ভিদ। দেখে মনে হবে, জলের নিচে অপরূপ সবুজের স্বর্গরাজ্য। টাঙ্গুয়ার হাওরে পাবেন করচ, বরুন, পানিফল, হেলেঞ্চা, বনতুলসি, নলখাগড়া, বল্লুয়া ও চাল্লিয়া জাতের উদ্ভিদ।
আধুনিক বিশ্বে এসব মানুষ এখনো সভ্যতার ছোঁয়া থেকে অনেকটা পিছিয়ে। এখানকার বাসিন্দাদের জীবিকার মূল ভিত্তিই হলো মাছধরা। হাওরে আরও একটি সমস্যা হলো, পারের বাসিন্দাদের শত শত হাঁসের খামার। খামার মালিকরা প্রতিদিন সকালে হাঁসগুলোকে খাবার খাওয়ানোর জন্য হাওরে এনে ছেঁড়ে দেন। আবার সন্ধ্যায় খামারে নিয়ে যান। যদি প্রতিদিন ১ হাজার খামারের হাঁস হাওরে আসে, তাহলে হাঁসগুলোই ১ হাজার পরিযায়ী হাঁসের খাবার খেয়ে ফেলে।
পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, পরিযায়ী পাখিদের কিছু অংশ বহন করে অ্যাভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস। খামারের হাঁসগুলো হাওর থেকে খাবার গ্রহণ করার সময় এ ভাইরাস তাদের শরীরে বহন করে খামারে নিয়ে যায়। আর খামারের হাঁস থেকে এই অ্যাভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা প্রবেশ করে মানবদেহে। খামারের হাঁস থেকে বিভিন্ন ধরনের রোগের জীবাণু পরিযায়ী পাখির মধ্যেও সংক্রমিত হতে পারে।