১৭ বছর ধরে তিনি কোনো কথা বলেননি ….
কলকাতা টাইমস :
আমার ২৭তম জন্মদিনে আমি কথা বলা বন্ধ করি। কারণ আমি দেখছিলাম যে আমি সারাক্ষণই শুধু তর্ক-বিতর্ক করি। ১৯৭১ সালে সানফ্রান্সিসকো উপসাগরে তেল ছড়িয়ে পড়ার একটি ঘটনা দেখার পর থেকে আমি মোটরচালিত যান ব্যবহার করা বন্ধ করে দিই। এবং সবখানে পায়ে হেঁটে যেতে থাকি। এর মধ্য দিয়ে আমি পরিবেশ দূষণের বিরুদ্ধে একটি বিবৃতি প্রদান করতে থাকি।
আমি শব্দ ব্যবহার করতাম নিজেকে অন্যদের কাছ থেকে এবং নিজের কাছ থেকে লুকানোর জন্য। কেউ যদি আমাকে বলত যে তারা ইউরোপ ভ্রমণে যাচ্ছে, আমি ভান করতাম যে আমিও যাচ্ছি। আমার ধারণা আমার আত্মসম্মানবোধ অনেক কম ছিল।
আমি একদিনের জন্য কথা ন বলার সিদ্ধান্ত নিই, আমার সম্প্রদায়ের জন্য এক ধরনের উপহার হিসেবে। আমার মেয়ে বন্ধু ভেবেছে আমি ভালো একটি কাজ করছি। পরদিন যখন আমি ঘুম থেকে জেগে উঠি, আমি কথা বলার কোনো কারণ খুঁজে পাচ্ছিলাম না। ফলে আমি আর কথা বলিনি। অন্যরা যখন আমার সঙ্গে কথা বলে আমি তাদের মুকাভিনয় করে বুঝিয়ে দিই যে আমি কথা বলা বন্ধ করে দিয়েছি। এতে তারা রোমাঞ্চিত হয়।
প্রথম এক সপ্তাহ সকলে ভাবছিল আমি মজা করছি। এর কয়েক সপ্তাহ পর লোকে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে। আমার মেয়ে বন্ধু আমাকে থামতে বলছিল। ফিলাডেলফিয়ায় আমার বাব-মার কাছে আমি একটি চিঠি লিখে পাঠাই। তাদেরকে আমি জানাই যে আমি তিন সপ্তাহ ধরে কথা বলছি না। এবং আমি আগামী এক বছর ধরে কোনো কথা না বলার পরিকল্পনাও করছি। আমার বাবা পরের প্লেনেই চড়ে বসেন। আমার বাবা-মা ভেবেছেন আমি হয়তো ক্যালিফোর্নিয়ার কোনো কাল্ট বা বিশেষ ধরনের গুপ্ত আচার-আচরণ চর্চাকারী দলে যোগ দিয়েছি।
আমার বাবা এসে আমাকে তার সঙ্গে গাড়িতে চড়ে তার হোটেলে যেতে বললেন। কিন্তু আমি মাথা ঝাঁকিয়ে আমার আঙ্গুলগুলো বাতাসে হাঁটাই। আমরা যখন তার হোটেল কক্ষে গিয়ে পৌঁছাই তিনি বলেন, “ঠিক আছে এবার তুমি কথা বলতে পার।” কিন্তু এরপরও যখন আমি কথা বলছিলাম না তিনি চলে যান। এভাবে বছরের পর চলতে থাকে।
আমি কথা না বলতে পছন্দ করি। এতে আমি প্রশান্তি লাভ করি। লোকে আমাকে জিজ্ঞেস করে আমি নিজের সঙ্গে কথা বলি কিনা, কিন্তু কেন বলব? দুবার শুধু আমি কথা বলে উঠেছিলাম। একসময় আমার মেয়ে বন্ধু এসে বুঝার চেষ্টা করল কেন আমি এমন করছি। কিন্তু আমি যখন ক্যালিফোর্নিয়া থেকে জঙ্গলের মধ্য দিয়ে ওরেগনে যাওয়ার যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিই; আমরা বিচ্ছিন্ন হয়ে যাই।
কথা বলা বন্ধ করার ১০ম বার্ষিকীতে আমি একদিনের জন্য কথা বলি। আমি আমার বাবা-মার সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে মা যেন আমাকে চিনতে পারেন সেজন্য কথা বলি।
এই সময়ের মধ্যে আমি পরিবেশ বিদ্যায় ব্যাচেলর, মাস্টার্স এবং পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করি। আমি লোকের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য কিছু সাংকেতিক ভাষা শিখি। এবং আমি আমেরিকাজুড়ে হেঁটে বেড়াই। এসময় আমি আমার ব্যাঞ্জোটি বাজাই। এবং আমি প্ল্যানেট ওয়াকার বা গ্রহচারী হিসেবে পরিচিত হয়ে উঠি।
১৭ বছর ধরে কথা না বলার পর আমি অনুভব করি আমাকে কিছু বলতে হবে। ওয়াশিংটন ডিসির একটি হোটেলে লোকে আমার কথা শুনতে আসে। আমার প্রথম শব্দগুলো , “এখানে আসার জন্য আপনাদেরকে ধন্যবাদ”। কিন্তু নিজের গলার স্বর চিনতে না পেরে আমি হাসতে শুরু করি। শ্রোতাদের মধ্যে আমার বাবাও ছিলেন। তিনি আমার দিকে এমনভাবে তাকিয়ে ছিলেন যে, যেন তিনি বলছিলেন, “হ্যাঁ, সে সত্যিই পাগল।”
হাজার হাজার শ্রোতার কাছে শোনার পর আমি বুঝতে পারি পরিবেশ সম্পর্কে আমাদের ধারণা খুবই সংকীর্ণ। পরিবেশ রক্ষা শুধু গাছ রক্ষার বিষয় নয়। আমরা কীভাবে পরস্পরের সঙ্গে আচরণ করি তাও এর অন্তর্ভুক্ত। এবং এর মধ্যে লিঙ্গ ও অর্থনৈতিক সমতা এবং নাগরিক অধিকারের বিষয়গুলোও অন্তর্ভুক্ত।
কথা বলা শুরু করার পর আমি আমার স্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাত করি। আমার পিএইচডি ডিগ্রি ছিল তেল উপচে পড়া বিষয়ে। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের কোস্টগার্ড আমাকে এক্সন ভালদেজ বিপর্যয়ের পর ভাড়া করেছিল। এখন আমি স্কুলে পড়াই এবং বিশ্বব্যাপী ভাষণ দিয়ে বেড়াই। ১৯৯৫ সালে ২২ বছর পর আমি পুনরায় মোটর যান ব্যবহার শুরু করি। ভেনেজুয়েলা হয়ে ব্রাজিলে হেঁটে যাওয়ার সময় আমি বুঝতে পারি যে, হাঁটাহাঁটি আমার জন্য একটি জেলখানার মতো হয়ে গেছে।
আমি এখনো প্রতিদিন সকালে নীরবতার চর্চা করি। এবং প্রায়ই একনাগাড়ে কয়েকদিন কথা না বলে কাটাই। এটি আমাকে যথাযথভাবে শোনার স্মরণ করিয়ে দেয়। আমি কী শুনছি বলে আমি ভাবছি তা বিচার করার জন্য নয় বরং লোকে আসলে কী বলছে তা বুঝার জন্যই এই যথাযথভাবে শোনা।