September 24, 2024     Select Language
৭কাহন Editor Choice Bengali KT Popular

বিশ্বের ত্রাস করোনা ভাইরাস তিনি খুঁজে পান ৪৮ বছর আগে 

[kodex_post_like_buttons]

কলকাতা টাইমস :

মাত্র ১৬ বছর বয়সেই স্কুল ত্যাগ করেছিলেন তিনি। তবে তাতেও দমে যাননি স্কটল্যান্ডের এক বাসচালকের কন্যা- জুন আলমেইডা। পরে তিনি একটি গবেষণাগারে কাজ নেন এবং ক্রমে নিজের চেষ্টা ও দক্ষতায় ভাইরাস ইমেজিংয়ের বিশ্বের একজন অগ্রণী ব্যক্তিত্ব হয়ে ওঠেন। করোনাভাইরাস মহামারিতে এখন বহু মানুষই নতুন করে স্মরণ করছেন এর আবিষ্কারক ড. জুন আলমেইডাকে।

বর্তমানে মহামারি ঘটানো কোভিড-১৯ একটি নতুন ধরনের ভাইরাস, যা ড. আলমেইডার আবিষ্কৃত করোনাভাইরাসের একটি প্রজাতি। ১৯৬৪ সালে লন্ডনের সেন্ট থমাস হাসপাতালের গবেষণাগারে প্রথম করোনাভাইরাস শনাক্ত করেছিলেন ড. আলমেইডা।

এই ভাইরোলজিস্ট ১৯৩০ সালে জুন হার্টে জন্মগ্রহণ করেন এবং গ্লাসগোর আলেজান্দ্রা পার্কের কাছাকাছি টেনেমেন্ট এলাকায় বড় হয়ে ওঠেন।

সামান্য পড়াশোনা করে স্কুল ছাড়লেও গ্লাসগো রয়্যাল ইনফার্মারিতে হিস্টোপ্যাথলজিতে গবেষণাগার কর্মী হিসাবে তিনি কাজ শুরু করেন। পরবর্তীতে তিনি পেশা জীবনের উন্নতি করার জন্য লন্ডনে পাড়ি জমান। ১৯৫৪ সালে তিনি এনরিক আলমেইডাকে বিয়ে করেন, যিনি ছিলেন একজন ভেনেজুয়েলান শিল্পী।

মাইক্রোস্কোপ নিয়ে অসামান্য দক্ষতার বহিঃপ্রকাশ

পরে এই দম্পতি ও তাদের মেয়ে কানাডার টরেন্টোতে পাড়ি জমান। সেখানে অন্টারিও ক্যান্সার ইন্সটিটিউটে ড. আলমেইডা একটি ইলেকট্রনিক মাইক্রোস্কোপ নিয়ে তাঁর অসামান্য দক্ষতার বহিঃপ্রকাশ ঘটান বলে চিকিৎসাবিষয়ক লেখক জর্জ উইন্টারের তথ্যে জানা যায়।

তিনি এমন একটি পদ্ধতির সূচনা করেছিলেন যা অ্যান্টিবডি সংহত করার মাধ্যমে ভাইরাসগুলো আরও পরিষ্কারভাবে দেখা সম্ভব হয়।

তাঁর এই প্রতিভা যুক্তরাজ্যের মনোযোগ কাড়ে। এরপর ১৯৬৪ সালে তাকে লন্ডনের সেন্ট থমাস হাসপাতাল মেডিকেল কলেজে কাজ করার জন্য সুযোগ-সুবিধা দিয়ে যুক্তরাজ্যে ফিরিয়ে আনা হয়। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পর এই হাসপাতালেই ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনকে চিকিৎসা দেয়া হয়েছিল।

যুক্তরাজ্যে ফিরে এসে তিনি ড. ডেভিড টাইরেলের সঙ্গে কাজ করতে শুরু করেন, যিনি উল্টশ্যায়ারের সালসবিউরিতে সাধারণ ঠাণ্ডা নিয়ে গবেষণা করছিলেন। ড. টাইরেল স্বেচ্ছাসেবকদের নিয়ে অনুনাসিক ধোয়ার ওপর গবেষণা করছিলেন। তাদের দল দেখতে পায় যে, তারা বেশ কয়েকটি সাধারণ সর্দি-কাশির ভাইরাস বৃদ্ধি করতে পারছিলেন, কিন্তু সবগুলো নয়। তার মধ্যে একটি বিশেষভাবে নজরে আসে। সেটির নাম দেয়া হয়েছিল বি-৮১৪, যা এসেছিল ১৯৬০ সালে সারের একটি বোর্ডিং স্কুলের একজন ছাত্রের কাজ থেকে।

গবেষকরা দেখতে পান, তারা সাধারণ সর্দি-কাশির কয়েকটি লক্ষণ স্বেচ্ছাসেবীদের মধ্যে তৈরি করতে পারলেও, সেগুলো তাদের নিয়মিত কোষের ভেতরে আর বেড়ে উঠতে পারে না। তবে স্বেচ্ছাসেবীদের মধ্যে প্রত্যঙ্গের মধ্যে কিছু বৃদ্ধি দেখিয়েছিল। সেটা দেখে অবাক হয়ে ড. টাইরেল ভাবলেন, এটা কোনো বৈদ্যুতিক মাইক্রোস্কোপ দিয়ে পরীক্ষা করে দেখা উচিত।

এরপর এসব নমুনা জুন আলমেইডাকে পাঠানো হয়, যিনি নমুনার মধ্যে ভাইরাস কণা দেখতে পান। সেগুলো সম্পর্কে তিনি বলেন, এগুলো ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের মতো দেখতে হলেও পুরোপুরি তা নয়। এতে নতুন এ ভাইরাসটি আবিষ্কৃত হয়, যা বিশ্বে করোনাভাইরাস হিসাবে পরিচিত হয়ে ওঠে।

ড. আলমেইডা ইঁদুরের মধ্যে হেপাটাইটিস এবং মুরগির সংক্রামক ব্রঙ্কাইটিস তদন্ত করার সময় এর আগে এ ধরণের কণাগুলি দেখেছিলেন। তা সত্ত্বেও, পিয়ার-রিভিউড জার্নালে পাঠানো তার নথিটি বাতিল করে দেয়া হয়েছিল। কারণ ‘রেফারিরা বলেছিলেন, তিনি যেসব ছবি দিয়েছেন, সেগুলো ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস কণার বাজে ধরণের চিত্র।’

বি-৮১৪ আবিষ্কারের বিষয়ে ব্রিটিশ মেডিকেল জার্নালে ১৯৬৫ সালে প্রকাশিত হয়। তিনি করোনাভাইরাসের প্রথম যে চিত্র দেখেছিলেন, সেটি প্রকাশিত হয় দুই বছর পরে জেনারেল ভাইরোলজি জার্নালে।

ড. টাইরেল ও ড. আলমেইডার পাশাপাশি অধ্যাপক টনি ওয়াটারসন, যিনি সেন্ট থমাসের দায়িত্বে ছিলেন, তারা ওই ভাইরাসের নামকরণ করেন করোনাভাইরাস, কারণ ভাইরাসের চারপাশ জুড়ে অনেকটা মুকুটের মতো সাদৃশ্য ছিল।

ড. আলমেইডা পরবর্তীতে লন্ডনের পোস্টগ্রাজুয়েট মেডিকেল স্কুলে কাজ করেন, যেখানে তিনি ডক্টরেট সম্মানে ভূষিত হন। ওয়েলকাম ইন্সটিটিউটে তিনি তার পেশাজীবন শেষ করেন, যেখানে ভাইরাস ইমেজিংয়ের ক্ষেত্রে তার নামে বেশ কয়েকটি পেটেন্ট হয়।

পরে ড. আলমেইডা একজন ইয়োগা প্রশিক্ষক হন। তবে ১৯৮০ এর দশকে তিনি এইচআইভি ভাইরাসের ইমেজিং এর ক্ষেত্রে একজন পরামর্শক হিসাবে কাজ করেন।

২০০৭ সালে, ৭৭ বছর বয়সে জুন আলমেইডা শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুর প্রায় ১৩ বছর পরে তিনি তার সেই পথিকৃৎ কাজের জন্য স্বীকৃতি পাচ্ছেন। তাঁর সেই আবিষ্কার কভিড-১৯ সম্পর্কে বুঝতে সহায়তা করছে মানবজাতিকে।

Related Posts

Leave a Reply