রাত ১১ টার পরে ঘুমতে গেলে হার্ট অ্যাটাক হবেই হবে!
আজকাল কম বয়সিদের মধ্যে দেরি করে ঘুমতে যাওয়া যেন একটা ট্রেন্ড হয়ে দাঁড়িয়েছে। কোনও কাজ নেই হাতে, তবু টিভি দেখে বা ইন্টারনেটের দুনিয়ায় অযথা ঘোরাফেরা করে শুতে যেতে যেতে ঘরির কাঁটা ১১ টা পেরিয়েই যাওয়া যেন রোজনামচা হয়ে উঠেছে। কারও কারও তো শুতে যেতে ১-২ টোও বেজে যায়। জেনে রাখুন এমন অভ্যাস কিন্তু একেবারেই ভাল নয়। একাধিক কেস স্টাডি করে দেখা গেছে রাত ১১ টার পর শুতে গেলে একাধিক জটিল রোগে আক্রান্ত হয়ে পরে শরীর।
শুধু তাই নয়, আয়ুও চোখে পরার মতো কমে যায়। কারণ ৮ ঘন্টা না ঘুমলে শরীরের অন্দরে নানা নেতিবাচক পরিবর্তন হতে শুরু করে, এমনকী মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতাও কমে যায়। ফলে অজান্তেই কখন যে আমরা মৃত্যুর দোর গোড়ায় এসে দাঁড়াই, তা বুঝতেই পারি না। দেরি করে শুতে যাওয়ার কারণে শরীরের যে যে ক্ষতি হয়, সেগুলি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হল। এ সম্পর্কে একটা বলতে পারি, বাকি প্রবন্ধটি যদি পড়েন, তাহলে ভয়ে যে আপনি নিজের এই ক-অভ্যাস আজই ছেড়ে দেবেন, সে কথা হলফ করে বলতে পারি।
দেরি করে শুতে গেলে ওজন বৃদ্ধি পাবেই পাবে: একাধিক গবেষণায় একথা প্রামাণিত হয়েছে যে দিনে কমপক্ষে ৬ ঘন্টা না ঘুমলে ধীরে ধীরে ওজন বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। কারণ একাধিক কেস স্টাডি করে দেখা গেছে দেরি করে ঘুমলে ভাজাভুজি বা জাঙ্ক ফুড খাওয়ার পরিমাণ খুব বেড়ে যায়। ফলে ওজন বৃদ্ধি পায়। আর একথা তো সকলেই জানেন যে ওজন বৃদ্ধি কখনও একা আসে না। সঙ্গে নিয়ে আসে আরও হাজারো রোগকে।
শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়: বেশি রাত পর্যন্ত জেগে থাকলে নানা কারণে শ্বেত রক্তি কণিকা ধ্বংস হতে শুরু করে। ফলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গিয়ে নানাবিধ সংক্রমণ এবং জটিল রোগের আড্ডা হয়ে দাঁড়ায় আমাদের শরীর। আর এমনটা হলে এক সময় গিয়ে হাসপাতালই হয়ে ওঠে পার্মানেন্ট ঠিকানা।
ডিলেড স্লিপ সিমড্রম: দিনের পর দিন দেরি করে শুতে গেলে এক সময়ে গিয়ে এমন অভ্যাস হয়ে যায় যে তাড়াতাড়ি ঘুম আসতেই চায় না। এই ধরনের সমস্যাকে ডিলেড স্লিপ সিনড্রম বলা হয়ে থাকে। আর একবার যদি এমন রোগে আক্রান্ত হয়ে পরেন, তাহলে আগামী সময় গিয়ে শীরর ভাঙতে শুরু করে দেয়। ফলে আয়ু যায় কমে।
হার্ট অ্যাটাকের আশঙ্কা বৃদ্ধি পায়: দেরি করে শুতে যাওয়ার অর্থ হল কম সময় ঘুমানো। আর এমনটা যে হার্টের জন্য একেবারেই ভাল নয়, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। একাধিক কেস স্টাডি করে দেখা গেছে যারা দিনে ৬ ঘন্টার কম সময় ঘুমোন, তাদের হার্টের কর্মক্ষমতা কমে যেতে শুরু করে। ফলে এক সময়ে গিয়ে নানাবিধ হার্টের রোগ এবং হার্ট অ্যাটাকের আশঙ্কা বৃদ্ধি পায়।
দেরি করে ঘুমতে যাওয়া ও ডায়াবেটিস: দিনের পর দিন রাত ১০ টার পর শুতে গেলে প্রথমে হরমোনাল ইমব্যালেন্স এবং তারপর তার লেজুর হিসেবে শরীরে গ্লকোজ ইনটলারেন্স হতে শুরু করে। ফলে এক সময়ে গিয়ে ডায়াবেটিসের মতো মারণ রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বৃদ্ধি পায়।
স্ট্রোক: দেরি করে শুতে গেলে কি দেরি করে ওঠা যায়? তা তো নয়! ফলে কম সময় ঘুমনোর কারণে মস্তিষ্কে রক্ত চলাচল ঠিক মতো হতে পারে না। সেই সঙ্গে পর্যাপ্ত পরিমাণ রেস্ট না পাওয়ার কারণে ব্রেন সেল ড্যামেজ হতে শুরু করে। ফলে স্ট্রোকের আশঙ্কা বৃদ্ধি পায়।
উচ্চ রক্তচাপ: গত এক দশতে যে যে লাইফ স্টাইল ডিজিজের কারণে সারা দুনিয়াতেই বহু মানুষের মৃত্যু ঘটেছে তার মধ্যে অন্যতম হল উচ্চ রক্তচাপ বা হাই ব্লাড প্রসার। কিন্তু দেরি করে ঘুমনোর সঙ্গে রক্তচাপ ওঠা নামার কী সম্পর্ক? একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে কম সময় ঘুমলে নানা কারণে স্ট্রেস বা মানসিক চাপের মাত্র বৃদ্ধি পায়। আর এমনটা হলে স্বাভাবিকভাবেই রক্তচাপ ঠিক থাকতে পারে না।
মাথা যন্ত্রণা: কম সময় ঘুমলেই দেখবেন ঘুম থেকে ওঠার পর প্রচন্ড মাথা যন্ত্রণা অথবা মাথাটা কেমন যেন ভারি হয়ে থাকে। কেন এমনটা হয় জানা আছে? কারণ পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুম না হলে মস্তিষ্কের ভিতরে আলোড়ন সৃষ্টি হয়। ফলে ব্রেন সেলগুলি মরাত্মক ধাক্কা খায়। আর এমনটা যদি দীর্ঘ সময় ধরে হতে থাকে, তাহলে ব্রেন ড্যামেজ হওয়ার সম্ভবনা বেড়ে যায়।
সেন্ট্রাল নার্ভাস সিস্টেম অকেজ হতে শুরু করে দেয়: পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুম না হলে আমাদের সেন্টাল নার্ভাস সিস্টেমের কর্মক্ষমতা কমে যেতে শুরু করে। ফলে শরীরের রিফ্লেক্স সিস্টেম দুর্বল হয়ে যায়। আর একবার এমনটা হয়ে গেলে দ্রুত নড়াচড়া করার ক্ষমতা একেবারে চলে যায়। আয়ু কমে যায়: এত সব জটিল রোগের সঙ্গে বন্ধুত্ব পাতালে আয়ু যে কমবেই তা কি আর আলাদা করে বলে দিতে হবে। তাই নিজেকে সুস্থ এবং সুন্দর রাখতে ঘুমকে এতটু গুরুত্ব দিন। এমনটা করলেই দেখবেন জীবন সুন্দর এবং রোগমুক্ত হয়ে উঠবে।