পালং শাকের পাতা দিয়ে হার্টের টিস্যু !
কলকাতা টাইমস :
হার্ট সংক্রান্ত বিষয়ে শাক-পাতা নিয়ে আলোচনা ভেবে নিশ্চয়ই মনে মনে ভাবছেন, রান্না করে কোন শাক খেলে হার্টের পক্ষে ভাল? কিংবা ভাবছেন, হার্ট অ্যাটাক কমাতে এই এই শাক অব্যর্থ ওষুধের কাজ করবে? ঠিক তেমনটা নয় কিন্তু। বিজ্ঞানীরা এ সব শাক-সব্জির মধ্যে তার থেকেও বড় উপকারী ভূমিকার সন্ধান পেয়েছেন।
থ্রি-ডি প্রিন্টিংয়ের মতো অত্যাধুনিক প্রযুক্তি এসে যাওয়ায় বায়োইঞ্জিনিয়ারিংয়ে অভাবনীয় অগ্রগতি হয়েছে। কিন্তু মানব শরীরের খুব সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম টিস্যু তৈরির ক্ষেত্রে থ্রি-ডি প্রিন্টিং খুব একটা কার্যকরী নয়। হার্টে যে সব টিস্যু ছড়িয়ে রয়েছে, সেগুলো কোনও কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হলে তা এখনও পর্যন্ত প্রতিস্থাপনযোগ্য নয়। তবে, টিস্যু প্রতিস্থাপনের একটি বিকল্প উপায় খুঁজে পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা।
অরচেস্টার পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের গবেষণাগারে পালং শাকের পাতা নিয়ে ‘অদ্ভুত’ এক পরীক্ষানিরীক্ষা চালিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। রাসায়নিকের মাধ্যমে পালং শাকের পাতা থেকে কোষগুলোকে বাদ দেন তাঁরা। রাসায়নিক বিক্রিয়ায় ফলে ছয়-সাত দিন বাদেই সেই পাতা সমস্ত ক্লোরোফিল হারিয়ে একেবারে স্বচ্ছ হয়ে যায়। পড়ে থাকে পাতার মধ্যেকার শিরাবিন্যাস।
এর পর পাতার ওই সংবহন তন্ত্রের মধ্যে কখনও রক্ত, কখনও বা ফ্লুইড জাতীয় পদার্থ ঢুকিয়ে বিজ্ঞানীরা দেখেছেন মানব শরীরের সংবহনতন্ত্রের মতোই একই ভাবে প্রবাহিত হচ্ছে। হার্টের টিস্যুর ক্ষেত্রে একই প্রক্রিয়া প্রযোজ্য। তাই বিজ্ঞানীদের প্রাথমিক ধারণা, হার্টের টিস্যু প্রতিস্থাপনের ক্ষেত্রে পালং শাকের জালিকা ব্যবহার করা যেতে পারে।
তবে, সব কিছুই এখনও প্রাথমিক পর্যায়েই রয়েছে বলে জানিয়েছেন অরচেস্টার পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের বায়ো মেডিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং-এর প্রফেসর গ্লেন গডেট। শুধুই যে হার্টের টিস্যু রিপিয়ারিং-এর জন্য নয়, গাছের এই সংবহনতন্ত্র বোন টিস্যু ইঞ্জিনিয়ারিং, গভীর চোটে নষ্ট হয়ে যাওয়া টিস্যু রিপিয়ার করতে ব্যবহার যেতে পারে।
গডেট ল্যাবের স্নাতক ছাত্র জোশুয়া গারস্লাক ক্রসিং কিংডম নামে তাঁদের গবেষণাপত্রে জানাচ্ছেন, গাছের কোনও অংশে কোষ ছাড়িয়ে নিলে (ডিসেলুরাইজেশন) যে ফ্রেমওয়ার্ক পড়ে থাকে তা সেলুলোজ নামে পরিচিত। প্রাকৃতিক উপায়ে তৈরি এই সেলুলোজ মানব শরীরে কখনই ক্ষতিকারক নয়। গাছ এবং মানুষের সংবহনতন্ত্রের কাজের ধরন আলাদা হলেও কর্মপদ্ধতির অনেকটাই মিল আছে বলে জানাচ্ছেন তাঁরা। পালং শাকের পাতা হার্টের টিস্যুর ক্ষেত্রে উপযোগী হতে পারে বলে মনে করছেন কলকাতার বিশিষ্ট কার্ডিওলজিস্ট রবিন চক্রবর্তী।
তাঁর মতে, “এই দুই ক্ষেত্রে বায়োলজিক্যাল সাদৃশ্য রয়েছে। যে ভাবে হার্টের টিস্যুর মধ্যে দিয়ে রক্ত, অক্সিজেন এবং নিউট্রেন্টস প্রবাহিত হয়, পালং পাতার জালিকাতেও সেই পদ্ধতিতেই প্রবাহিত হয়।” তিনি আরও বলেন, “যদিও এটা প্রাথমিক স্তরে রয়েছে। বাস্তবায়িত করতে এখনও অনেক সময় লাগবে।”
রবিনবাবু বলছেন, “হার্টের টিস্যু সম্পূর্ণ ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া মানে, মানুষটি মারা গিয়েছেন। কিন্তু হার্ট অ্যাটাক বা ওই সংক্রান্ত সমস্যায় আক্রান্ত হয়ে হার্ট টিস্যু নষ্ট হলে, ওষুধ এবং ইঞ্জেকশন দিয়ে সারিয়ে তোলা সম্ভব। কিন্তু সেটা কতটা পরিমাণ সারবে নির্ভর করে রোগীর উপর। যদি সেই রোগী ধূমপায়ী বা অনিয়মিত লাইফস্টাইলে অভ্যস্ত না হন, তা হলে, খুব দ্রুত সেই টিস্যুগুলি সেরে ওঠার সম্ভাবনা রয়েছে। আবার ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ থাকলে সমস্যা হতে পারে।”
তবে বিজ্ঞানীরা আশাবাদী, যদি তাঁদের এই গবেষণা সফল হয়, তা হলে ভবিষ্যতে টিস্যু ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে আমূল পরিবর্তন আসতে পারে। প্রাকৃতিক উপায়ে টিস্যুর কাঠামো তৈরি করলে তার খরচও কমবে বলে জানাচ্ছেন তাঁরা।