বেকারিত্বের জালা ভোগকারীদের জন্য মহৌষধি!
কলকাতা টাইমস :
আসলে গবেষণায় দেখা গেছে চাকরির বয়স হয়ে যাওয়া সত্ত্বেও যারা এখন পর্যন্ত কোনও কাজ খুঁজে উঠতে পারেনি, তারা যে পরিমাণ মানসিক চাপের মধ্যে থাকে, সে তুলনায় চাকরির চাপ কিছুই না। আসলে এই গবেষণাটিরও মূল লক্ষ ছিল চাকরি সম্পর্কিত স্ট্রেসের কারণে কীভাবে শরীর ভাঙছে তার উপর আলোকপাত করা। কিন্তু এমনটা করতে গিয়ে যা সামনে এল, তা বাস্তবিকই ভয়ঙ্কর।
দেখে গেল ২৫-৪০ বছর বয়সিদের মধ্যে যারা দীর্ঘ সময় চাকরি না পেয়ে বাড়ি বসে আছেন, তারা সামাজিক এবং আরও নানা কারণে এত চিন্তায় থাকেন যে এক সময় গিয়ে ক্রনিক স্ট্রেসে আক্রান্ত হয়ে পরেন। আর এমনটা হওয়া মাত্র প্রথম প্রভাব পরে হার্টের উপর। সেই সঙ্গে ধীরে ধীরে মস্তিষ্কের ক্ষমতাও কমতে শুরু করে। এক সময়ে গিয়ে শরীরে একাধিক মারণ রোগ বাসা বেঁধে বসে। বিশেষত হার্টের রোগ, ডায়াবেটিস, কোলেস্টেরল, উচ্চ রক্তচাপ এবং পেটের রোগের প্রকোপ ভীষণভাবে মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে।
তাই গবেষকদের মতে যে কোনও ভাবে চাকরি সম্পর্কিত চাপ সামলে নেওয়া গেলেও বেকারত্বের চাপ মারাত্মক, যা অনেকের পক্ষেই সামলানো সম্ভব হয়ে ওঠে না।
আমাদের দেশে তো ধ্বংসের মুখে:
বেশ কিছু দিন আগে প্রাকাশিত এক আন্তর্জাতিক রিপোর্ট অনুসারে দক্ষিণ এশিয়ায় প্রায় ১.৪ বিলিয়ান মানুষ বসবাস করেন, যার মধ্যে প্রায় ৬০ শতাংশেরই চাকরির বয়স হয়ে গিয়েছে। কিন্তু এই ৬০ শতাংশ চাকরি প্রার্থীর মধ্যে প্রায় ৬৬ শাতংশই চাকরি পাচ্ছে না। আর এই বেকারদের মধ্যে ভারতীয়দের সংখ্যা নেহাতই কম নয়। তাই তো এই বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই যে আমাদের দেশ বারুদের উপর বসে আছে। যে কোনও সময় একটা বড় রকমের অর্থনৈতিক ক্ষতি হয়ে যেতে পারে এদেশের।
এখন প্রশ্ন হল, যারা এমন মানবিক মানসিক চাপের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছেন, তারা কীভাবে সামলাবেন স্ট্রেসকে? এক্ষেত্রে সহজ কতগুলি নিয়ম আছে, যেগুলি মেনে চললে খারাপ থেকে খারাপ সময় সহজে কেটে যাবে। নিয়মগুলি হল…
১. স্ট্রেসের কারণটা জানার চেষ্টা করুন:
চাকরি না পাওয়াটা যদি স্ট্রেসের কারণ হয়ে থাকে, তাহলে কীভাবে এই সমস্যা কাটবে, সে নিয়ে চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। বসে বসে ভাবলে শুধু চলবে না। সেই সঙ্গে নিজেকে প্রতিনিয়ত তৈরি করে যেতে হবে আসন্ন যুদ্ধের জন্য। প্রসঙ্গত, কী কারণে মানসিক চাপ হচ্ছে তা জেনে নেওয়া মানে ৫০ শতাংশ যুদ্ধ জিতে যাওয়া। বাকি ৫০ শতাংশ সমস্যাও দেখবেন ধীরে ধীরে মিটে যাবে। আর এমনটা তখনই সম্ভব হবে, যখন মন শক্ত করে নিজেকে তৈরি করতে থাকবেন। থ্রি ইডিয়েট সিনেমায় একটি ডায়লগ ছিল মনে আছে,”কাবিল বান কাবিল, সাকসেস ঝাক মারকে পিছে আয়েগা।” বাস্তবিকই কিন্তু এমনটা হয়ে থাকে।
২. পরিস্থিতি সম্পর্কে স্বচ্ছ জ্ঞান থাকাটা জরুরি:
যে বিষয়গুলি আপনার হাতে নেই তা নিয়ে ভাবাটা বোকামি। তাই তো সাইকোলজিস্টরা বলেন, স্ট্রেসের সময় যেটুকু নিজের হাতে আছে, সেটুকু কাজ মন দিয়ে করা উচিত। বাকিটা ভাগ্য বা সময়ের উপর ছেড়ে দেওয়াটাই বুদ্ধিমানের কাজ। তাই তো বলি, চাকরি আপনি পাবেন কী পাবেন না, তা আপনার হাতে নেই। কিন্তু চেষ্টা চালিয়ে যাওয়াটা আপনার হাতে আছে। তাই সে কাজটা মন দিয়ে করুন। দেখবেন মানসিক চাপ কমে যাবে।
৩. পছন্দের পরিবেশের মধ্যে থাকুন:
আন্ধকারে থাকলেও মনটাকে অন্ধ করা চলবে না। সহজ কথায় মন খারাপকে ভাল করতে হবে। না হলে কেনও দিন স্ট্রেস থেকে বেরনো সম্ভব হবে না। আর কীভাবে করবেন এই কাজটি? খুব সহজ! যা যা করতে ভাল লাগে, তা করুন। দেখবেন নিমেষে মন ভাল হয়ে যাবে। আমার যেমন মন খারাপ হলেই দাবা খেলা শুরু করে দি। এমনটা করলে নিমেষে মনের অন্ধকার কেটে যায়। আপনাদেরও হয়তো এমন কিছু পছন্দের বিষয় আছে। কেউ হয়তো আমার মতো দাবা খেলতে ভালবাসেন, কারও হয়তো বই পড়লে বা টিভি দেখলে মন ভাল হয়ে যায়। যার যেটা ইচ্ছা তাই করুন। দেখবেন মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে।
৪. স্ট্রেস বাড়লেই শ্বাস নিন:
একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে মানসিক চাপ যখন হাতের বইরে চলে যায়, তখন জোরে জোরে শ্বাস নেওয়া উচিত। এমনটা করলে শরীর এবং মন স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে। সেই সঙ্গে স্ট্রেসের কারণে হঠাৎ বেড়ে যাওয়া ব্লাড প্রেসারও নিয়ন্ত্রণে চলে আসে। ফলে শরীরের মারাত্মক কোনও ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা কমে।
৫. ভুলেও বন্ধুদের সঙ্গে ছাড়বেন না:
খারাপ সময়ের অক্সিজেন হল বন্ধরা। তাই ওদের হাত ভুলেও ছাড়বেন না যেন! যখনই মন খারাপ করবে বন্ধুদের সঙ্গে তটা সম্ভব সময় কাটাবেন। দেখবেন উপকার মিলবে। কারণ গবেষণায় দেখা গেছে মনের মানুষদের সঙ্গে সময় কাটালে কোনও ক্ষতি হওয়ার আগেই স্ট্রেস লেভেল কমতে শুরু করে। ফলে শরীরে ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা কমে