এখানে হিন্দুদের বজরঙ্গবলীর নাম নেওয়াও বারন
কলকাতা টাইমস :
সারা ভারতে হনুমানের পূজা করা হয়। প্রতি মঙ্গলবার ঘটা করে পূজা হয় হিন্দুদের ঘরে ঘরে। কিন্তু দেশটির উত্তরাখণ্ডের চামোলি জেলায় হিন্দুদের দ্বারাই আজও নিষিদ্ধ বজরঙ্গবলীর পূজা। নামও নেয় না কেউ।
কেন এমন প্রচলন? কাহিনির উৎস বাল্মিকীর রামায়ন। সেখানেই বর্ণিত রয়েছে, মেঘের আড়াল থেকে রাম-লক্ষ্মণের সঙ্গে যুদ্ধ করছিলেন ইন্দ্রজিৎ। যুদ্ধের সময় ইন্দ্রজিৎ তথা মেঘনাদের বাণে জ্ঞান হারান লক্ষ্মণ। এর পর লক্ষ্মণকে বাঁচানোর দায়িত্ব নেন স্বয়ং হনুমান। যে সে ওষুধ নয়, বিশেষ সঞ্জীবনীতেই বাঁচানো যাবে লক্ষ্মণকে।
জানার পরে সেই বিশল্যকরণী নামের সঞ্জীবনী সন্ধানের উদ্দেশে রওনা দেন হনুমান। জাম্ববান তাকে জানান, সেই বিশেষ ওষুধ পাওয়া যায় হিমালয়ের গন্ধমাদন পর্বতে।
এর পর গন্ধমাদনের খোঁজে বর্তমান উত্তরাখণ্ডের চামোলি গ্রামে পৌঁছান বজরঙ্গবলী। খুঁজতে থাকেন কোথায় সেই পাহাড়। তখন সেই গ্রামেরই এক নারী তাকে দেখিয়ে দিয়েছিলেন গন্ধমাদন পর্বত কোথায় রয়েছে।
কিন্তু পর্বতে উঠে কিছুতেই নির্দিষ্ট সেই সঞ্জীবনী খুঁজে বের করতে পারেননি হনুমান। তাই ঠিক করেন যে পুরো পর্বতটাই কাঁধে করে নিয়ে যাবেন। কারণ, সূর্যোদয়ের আগে নিয়ে না গেলে লক্ষ্মণকে বাঁচানো যাবে না।
হনুমান তো পুরো গন্ধমাদন পর্বত নিয়ে চলে গেলেন কিন্তু তাতেই ক্ষিপ্ত হন গ্রামের মানুষ। হনুমান এই পর্বতটিকে উপড়ে নিয়ে যাওয়ার ফলে গ্রামের মানুষের জীবনযাপন বিঘ্নিত হয়ে যায়। তাছাড়া গন্ধমাদন পর্বতকে ভগবান মানতেন ওই অঞ্চলের বাসিন্দারা।
সে কারণে ওই এলাকায় বজরঙ্গবলীর প্রতি রাগ বেড়ে যায়। বন্ধ হয় পূজা। আজও সেই রীতি বজায় রয়েছে। উত্তরাখণ্ডের ওই গ্রামে হনুমানজির পূজা শুধু বন্ধ নয়, তার নাম করাও নিষিদ্ধ। যে নারী তাকে গন্ধমাদন পর্বত দেখিয়ে দিয়েছিলেন, সেই নারীকেও গ্রাম থেকে নির্বাসিত করা হয়েছিল।
লক্ষ্ণণের চিকিৎসার পরে সেই পর্বত আবারো যথাস্থানে রেখে আসার কথা ছিল হনুমানের। কিন্তু, রাম-রাবণের যুদ্ধ শুরু হয়ে যাওয়ায় হনুমান সেটি রেখে আসেন বর্তমান উড়িষ্যার এক স্থানে।
রামায়নের ওই পাহাড়ের কথা রয়েছে মহাভারতেও। কৌরব-পাণ্ডবদের অস্ত্রগুরু দ্রোণাচার্য এই পর্বতে বাস করতেন। সে কারণে এই পর্বতের আর এক নাম ‘দ্রোণগিরি’। চামোলি গ্রামের মানুষ দ্রোণগিরি পর্বতকে খুব মানেন। আজও এই পর্বতকে উৎসর্গ করে পূজা করা হয়। কিন্তু এই পূজায় অংশ নিতে পারেন না নারীরা। কারণ হনুমানকে এক নারীই দেখিয়ে দিয়েছিলেন দ্রোণগিরিপর্বত।