November 22, 2024     Select Language
Editor Choice Bengali KT Popular রোজনামচা

বরুনের দাক্ষিণ্যে ভাসছে হিমাচল থেকে দিল্লি

[kodex_post_like_buttons]

কলকাতা টাইমস :

জুলাই মাসের ১০ তারিখ। কিন্তু কৃপণ বর্ষা। একদিকে খাঁ-খাঁ রোদ, গরমে প্রাণ ওষ্ঠাগত। আর অন্যদিকে অঝোরে বৃষ্টি থামার নাম নেই। মাইলের পর মাইল জুড়ে শুধু জল আর জল। যদি পশ্চিমবঙ্গের ছবি এখন তাহলে দেখা যাবে বৃষ্টি যেন বঙ্গের ঠিকানাই ভুলে গেছেন। অন্যদিকে হিমাচল, উত্তরপ্রদেশ, দিল্লিতে উজাড় করে দিচ্ছেন বৃষ্টি। যার জেরে দেখা দিয়েছে বন্যা।

সোমবার সেই বৃষ্টির রুদ্র রূপেই হিমাচলে চোখের নিমেষে জলের তোড়ে ভেসে গেল আস্ত একটি গাড়ি । ভাসছে দোকান-বাজার, বাড়িতে জল থই থই। হিমাচল প্রদেশের শহরের রাস্তাঘাট রাতারাতি ডুবে গেছে। বাড়ছে নদীর জলস্তর। হড়পা বান-ভূমিধসে লন্ডভন্ড হিমাচল। এখনও অবধি ৯ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। ফুঁসছে বিপাসা নদী।  রাজ্যের অন্তত সাতটি জেলায় লাল সতর্কতা জারি হয়েছে। মৌসম ভবনের পূর্বাভাস, বৃষ্টি এখনই থামবে না। বরং আরও ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনায় সতর্কতা জারি হয়েছে। অন্যদিকে উত্তরপ্রদেশে ৩৪ জন মারা গিয়েছেন জলের কারণে, বজ্রপাতে প্রাণ গেল ১৭ জনের।

মেঘ ভাঙা বৃষ্টিতে গত ৩৬ ঘণ্টায় রাজ্যে ১৪টি ধস নেমেছে। ১৩টি হড়পা বানের খবর পাওয়া গেছে। এর জেরে বিপর্যস্ত হিমাচল প্রদেশের জনজীবন। আটকে পড়েছেন বহু পর্যটক। ভূমিধসে কুলু-মানালি হাইওয়ে বন্ধ। সাতশোর বেশি রাস্তা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

সূত্রের খবর, ভূমিধসের কারণে কুলু-মানালি হাইওয়ে বন্ধ হয়ে গিয়েছে, কুলু এবং মানালি থেকে অটল টানেল এবং রোহটাংয়ের দিকে যানবাহন চলাচল সম্পূর্ণভাবে বন্ধ হয়ে গেছে, রবিবার রাজ্য বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর (এসডিআরএফ) একটি দল কুলুর কাছে আটকে পড়া ৬ জন পর্যটককে উদ্ধার করেছে।

হিমাচলে বন্যা নিয়ে সতর্কতা জারি করেছে আবহাওয়া দফতর। সর্বশেষ পাওয়া পূর্বাভাস অনুযায়ী, চাম্বা, কাংড়া, মান্ডি, হামিরপুর এবং বিলাসপুর সহ রাজ্যের সাতটি জেলায় অতি ভারী বৃষ্টি এবং বন্যার জন্য লাল সতর্কতা জারি করা হয়েছে। নাগাড়ে বৃষ্টিতে বাড়ছে নদীর জলস্তর। শিমলার কোটগড় এলাকায় বৃষ্টিতে ধসের কারণে একটি বাড়ি ভেঙে পড়েছে। এই ঘটনায় একই পরিবারের তিন জনের মৃত্যু হয়েছে। শনিবার রাতে চম্বা কাতিয়ান তহসিল এলাকায় ধসে চাপা পড়ে মৃত্যু হয়েছে এক ব্যক্তির।

গত চারদিন ধরে ব্যাপক বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত গোটা উত্তর ভারত । মৃত্যু হয়েছে ২৮ জনের। বেলা বাড়তেই উত্তরপ্রদেশ সরকার জানাল, গত চার দিনের দুর্যোগে কেবল সেরাজ্যেই প্রাণ গিয়েছে ৩৪ জনের। গত ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যু হয়েছে ১০ জনের। গত কয়েক দিনে যোগীরাজ্যে বজ্রপাতে মৃত্যু হয়েছে ১৭ জনের। জলে ডুবে মৃত্যু হয়েছে ১২ জনের। এছাড়াও ধস নেমে, জলের তোড়ে ভেসে গিয়ে মৃত্যু হয়েছে ৫ জনের।

মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ ঘোষণা করেছেন, মৃতদের পরিবারকে ৪ লক্ষ টাকা করে আর্থিক সাহায্য করা হবে। আহতদের চিকিৎসার খরচ দেবে সরকার। আবহাওয়া দপ্তর সূত্রে খবর, মরসুমের শুরুতেই ১১ শতাংশ অতিরিক্ত বৃষ্টি হয়েছে উত্তরপ্রদেশে। এর ফলে গঙ্গা, রামগঙ্গা, যমুনা, রাপ্তি-সহ রাজ্যের অধিকাংশ নদীতে বিপদসীমার উপরে বইছে জল। বন্য কবলিত ৭৫টি জেলার নিচু এলাকাগুলি। ভারী বৃষ্টি চলছে ৬৮টি জেলায়। পাহাড়ি এলাকাগুলিতে ধস নেমেছে। বহু জায়গায় রাস্তা ভেঙে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। সব মিলিয়ে একটানা বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত যোগীরাজ্যে দুর্যোগের বলি হয়েছে ৩৪ জন।

আবার করুন অবস্থা লে, লাদাখের। এবছর ৬০ শতাংশ বেশি বৃষ্টি হওয়ায় দুরবস্থার শেষ নেই।

যেখানে প্রতি বছর অনেক বৃষ্টি হয়, সেখানে এ বছর বৃষ্টির পরিমাণ তুলনামূলক কম। আবার যেখানে খুব বেশি বৃষ্টি হতে দেখা যায় না, সেই এলাকাগুলিই এ বার বর্ষায় কার্যত ভেসে গিয়েছে। মৌসম ভবনের প্রকাশিত পরিসংখ্যানে এই তথ্য উঠে এসেছে।

মৌসম ভবন রবিবার একটি পরিসংখ্যান প্রকাশ করে দেখা গিয়েছে, উত্তর এবং মধ্য ভারতের একটা বড় অংশে এ বছর বৃষ্টির পরিমাণ স্বাভাবিকের চেয়ে ৬০ শতাংশ বেশি। গুজরাত, রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ এবং মহারাষ্ট্রের কিছু অংশ এবং তামিলনাড়ু এবং কেরলে অন্যান্য বছরের তুলনায় ২০ থেকে ৫৯ শতাংশ বেশি বৃষ্টি হয়েছে।

গত কয়েক দিন ধরেই বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত উত্তর ভারত। পরিসংখ্যান বলছে, গত তিন দিনের দুর্যোগে উত্তর ভারতে মোট ১৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। প্রবল বৃষ্টিপাতের কারণে মৌসম ভবনের তরফে বিভিন্ন এলাকায় লাল এবং কমলা সতর্কতা জারি করা হয়েছে। বিভিন্ন জেলায় হড়পা বান এবং ভূমিধসের সতর্কতাও জারি করেছে মৌসম ভবন।

পরিস্থিতি পর্যালোচনার জন্য দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীওয়াল সোমবার বৈঠক ডেকেছেন। দিল্লিতে বাতিল করা হয়েছে সরকারি কর্মীদের সপ্তাহান্তের ছুটি। গত শনিবার থেকে রবিবার পর্যন্ত দিল্লিতে বৃষ্টি হয়েছে ১৫৩ মিমি। ১৯৮২ সালের পর জুলাই মাসে কোনও এক দিনে এই প্রথম এত পরিমাণে বৃষ্টি হল দিল্লিতে।

কেরলেও বৃষ্টিতে সরকার স্কুলে ছুটি ঘোষণা করে দিয়েছে বেশ কিছু দিনের জন্য। একই সঙ্গে কর্নাটক, তামিলনাড়ু এবং তেলঙ্গানাতেও বৃষ্টি হয়েছে।

Related Posts

Leave a Reply