‘মাহেরী’ দেবতার প্রেমিকা থেকে পুরোহিতদের তৃপ্তি
[kodex_post_like_buttons]
কলকাতা টাইমস :
বিগত চারশো সাড়ে চারশো বছর আগে গতিপূয়া নৃত্যের আবির্ভাব বলা যেতে পারে ওড়িশার অন্তর্ভুক্ত পুরী এলাকায়। বর্তমানে এই প্রথা পরিচালনার ক্ষেত্রে INTACH এবং Ford Foundation-এর প্রফেসর P.C. Misra-র তত্ত্বাবধানে হয়ে চলেছে। ভগবান শ্রী চৈতন্য মহাপ্রভুকে স্মরণ করে খ্রিস্টপূর্ব ষোড়শ শতাব্দীতে শুভারম্ভ ও জমির মালিক প্রখ্যাত জিমন্যাস্টিক শিল্পি আক্কাদাস-এর অনুপ্রেরণায় সপ্তদশ শতাব্দীতে এই অনুষ্ঠানের প্রারম্ভিক সূচনা হলেও স্বাধীনভাবে পথ চলা শুরু ১৯-এর দশকে।
কথিত আছে মহাপ্রভু শ্রীচৈতন্য যখন ওড়িশায় জগন্নাথ দেবের পাদপদ্মে নিজেকে নিবেদন করেন তখন ওনার মূলমন্ত্র ছিল সঙ্গীত ও নৃত্য প্রদর্শন। এই প্রথা অবলম্বন করেই প্রথমে পুরুষ ও পরে নারীদের (মাহেরী) দেবতাকে তার প্রেমিক বা স্বামী হিসেবে বরণ করে নিয়ে মন্দিরের নর্তক ও নর্তকী হিসেবে নির্ণয় করা হত। এই ব্যবস্থাই মাহেরী তথা দেবদাসী নামে পরিচিত।
দেবদাসী (মাহেরী) দের প্রথম ও প্রধান কাজই ছিল প্রত্যহ গীতগোবিন্দ থেকে নৃত্য ও সঙ্গীত মহাপ্রভু জগন্নাথ দেবের চরণে নিবেদন করা।
মাহেরীদের নৃত্যের প্রথম শিক্ষক ছিলেন রাজা প্রতাপ রুদ্র দেব। যার মূলমন্ত্র ছিল ‘মধুর ভক্তি উপাসনা’। মাহেরী প্রথার মূলমন্ত্র জগন্নাথদেবকে স্বামী মেনে তার সেবায় নিজেকে আত্মসমর্পণ করা।
প্রসঙ্গত, শোনা যায় এ ব্যাপারে নারী তথা মাহেরীদের ওপর নানাভাবে মন্দিরের পুরোহিত সম্প্রদায় শারীরিক ও মানসিক বলপ্রয়োগ করতেন। পরবর্তীকালে মুসলিম সাম্রাজ্যের আধিপত্য হলে পরে পুরুষ দেবদাস প্রথা (বিশেষভাবে ওড়িশা থেকে) অবলুপ্ত হয়। কিন্তু মহিলা (মাহেরী) প্রথা একইভাবে বলবৎ থাকে।
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন গোপনীয়তা ও কিংবদন্তীর প্রলেপ পরেছে এই মাহেরীদের জীবনে। বিগত ৩০-৩৫ বছর আগেও পুরী মন্দিরের গর্ভগৃহে দেবদাসী নির্বাচন প্রথা প্রচলিত ছিল। যদিও তৎকালীন ওড়িশা সরকার এ ব্যাপারে কোনো তথ্য প্রমাণাদি রাখতেন না। এবং বহু সমীক্ষাতেও এর প্রমাণ মেলা দায়।
জনশ্রুতি অনুযায়ী মন্দিরের প্রধান পুরোহিতের ভোগের সম্পত্তি ছিলেন এই দেবদাসী তথা মাহেরীরা। সম্পূর্ণ বিবস্ত্র অবস্থায় প্রভু জগন্নাথ দেবকে সাক্ষী রেখে ভগবানের দোহাই দিয়ে মন্দিরের প্রধান পুরোহিত তার বিকৃত কামনা বাসনার পরিতৃপ্তি ঘটাতেন, যা মানবজাতির লজ্জা।
কালের বিবর্তনের মাধ্যমে বর্তমানে পরিস্থিতি অনেকটাই স্থিতিশীল। এখন সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়, মাহেরী সম্প্রদায় অবলুপ্ত । ‘ধারা নৃত্য প্রতিযোগিতা’ বলতে এখন আমরা সারা ভারতবর্ষব্যাপী ধ্রুপদী নৃত্যের প্রতিযোগিতা বুঝি। এখানে বিভিন্ন বড় বড় প্রতিষ্ঠানের নৃত্য শিল্পীরা নৃত্য পরিবেশন করেন। এবং যোগ্য বিচারপতির মাধ্যমে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় নির্বাচন করা হয়। এই নৃত্যের মধ্যে বর্তমানে এখনও জিমন্যাস্টিক প্রথা প্রচলিত আছে।
প্রসঙ্গক্রমে বলে রাখা উচিত, বর্তমানে মাহেরী নির্বাচন প্রথা একেবারেই বন্ধ। যে গুটিকয় মাহেরী বর্তমানে এখনও জীবিত তারা মন্দিরের নিচে জগন্নাথ দেবের যে গর্ভগৃহ আছে, যার সঙ্গে পুরীর সমুদ্রের সরাসরি যোগাযোগ এখনও অক্ষুণ্ণ, সেই গর্ভগৃহের চারপাশে ছোট ছোট কুঠুরিতে বসবাস করেন। এদের মধ্যে যিনি বয়সে সবার থেকে বয়ঃজ্যেষ্ঠ তাকে মন্দির কর্তৃপক্ষ ‘বড়া মাহেরী’ সম্মানে ভূষিত করেছেন। এদের সমস্ত রকম ব্যয় বহন করে চলেছে মন্দির কর্তৃপক্ষ।
অনুষ্ঠানের দিন জগন্নাথ দেবের মূল গর্ভ গৃহেই এই নৃত্য প্রতিযোগিতা হয়। এবং যে সকল বিচারক ওই প্রতিযোগিতায় বিচারকের আসন অলঙ্কৃত করার সৌভাগ্য অর্জন করেন তাদের ‘বড়া মাহেরী’-র সঙ্গে প্রসাদ ভক্ষণের সৌভাগ্য ঘটে।
যাই হোক দেবদাসী প্রথা অবলুপ্তির পর আজ যে মাহেরীরা এই পুরুষশাষিত সমাজে খানিকটা হলেও তাদের যোগ্য সম্মান পাচ্ছেন সে বড়ো আশার কথা। বর্তমান সমাজ ব্যবস্থায় প্রতিনিয়ত নারী নির্যাতন, লাঞ্চনা, গঞ্জনা সত্ত্বেও নারী শক্তি যে আদ্যাশক্তির এক অনন্যরূপ, মাতৃমূর্তির এক অনবদ্য প্রতিকৃতি একথা অনস্বীকার্য।
কথিত আছে মহাপ্রভু শ্রীচৈতন্য যখন ওড়িশায় জগন্নাথ দেবের পাদপদ্মে নিজেকে নিবেদন করেন তখন ওনার মূলমন্ত্র ছিল সঙ্গীত ও নৃত্য প্রদর্শন। এই প্রথা অবলম্বন করেই প্রথমে পুরুষ ও পরে নারীদের (মাহেরী) দেবতাকে তার প্রেমিক বা স্বামী হিসেবে বরণ করে নিয়ে মন্দিরের নর্তক ও নর্তকী হিসেবে নির্ণয় করা হত। এই ব্যবস্থাই মাহেরী তথা দেবদাসী নামে পরিচিত।
দেবদাসী (মাহেরী) দের প্রথম ও প্রধান কাজই ছিল প্রত্যহ গীতগোবিন্দ থেকে নৃত্য ও সঙ্গীত মহাপ্রভু জগন্নাথ দেবের চরণে নিবেদন করা।
মাহেরীদের নৃত্যের প্রথম শিক্ষক ছিলেন রাজা প্রতাপ রুদ্র দেব। যার মূলমন্ত্র ছিল ‘মধুর ভক্তি উপাসনা’। মাহেরী প্রথার মূলমন্ত্র জগন্নাথদেবকে স্বামী মেনে তার সেবায় নিজেকে আত্মসমর্পণ করা।
প্রসঙ্গত, শোনা যায় এ ব্যাপারে নারী তথা মাহেরীদের ওপর নানাভাবে মন্দিরের পুরোহিত সম্প্রদায় শারীরিক ও মানসিক বলপ্রয়োগ করতেন। পরবর্তীকালে মুসলিম সাম্রাজ্যের আধিপত্য হলে পরে পুরুষ দেবদাস প্রথা (বিশেষভাবে ওড়িশা থেকে) অবলুপ্ত হয়। কিন্তু মহিলা (মাহেরী) প্রথা একইভাবে বলবৎ থাকে।
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন গোপনীয়তা ও কিংবদন্তীর প্রলেপ পরেছে এই মাহেরীদের জীবনে। বিগত ৩০-৩৫ বছর আগেও পুরী মন্দিরের গর্ভগৃহে দেবদাসী নির্বাচন প্রথা প্রচলিত ছিল। যদিও তৎকালীন ওড়িশা সরকার এ ব্যাপারে কোনো তথ্য প্রমাণাদি রাখতেন না। এবং বহু সমীক্ষাতেও এর প্রমাণ মেলা দায়।
জনশ্রুতি অনুযায়ী মন্দিরের প্রধান পুরোহিতের ভোগের সম্পত্তি ছিলেন এই দেবদাসী তথা মাহেরীরা। সম্পূর্ণ বিবস্ত্র অবস্থায় প্রভু জগন্নাথ দেবকে সাক্ষী রেখে ভগবানের দোহাই দিয়ে মন্দিরের প্রধান পুরোহিত তার বিকৃত কামনা বাসনার পরিতৃপ্তি ঘটাতেন, যা মানবজাতির লজ্জা।
কালের বিবর্তনের মাধ্যমে বর্তমানে পরিস্থিতি অনেকটাই স্থিতিশীল। এখন সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়, মাহেরী সম্প্রদায় অবলুপ্ত । ‘ধারা নৃত্য প্রতিযোগিতা’ বলতে এখন আমরা সারা ভারতবর্ষব্যাপী ধ্রুপদী নৃত্যের প্রতিযোগিতা বুঝি। এখানে বিভিন্ন বড় বড় প্রতিষ্ঠানের নৃত্য শিল্পীরা নৃত্য পরিবেশন করেন। এবং যোগ্য বিচারপতির মাধ্যমে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় নির্বাচন করা হয়। এই নৃত্যের মধ্যে বর্তমানে এখনও জিমন্যাস্টিক প্রথা প্রচলিত আছে।
প্রসঙ্গক্রমে বলে রাখা উচিত, বর্তমানে মাহেরী নির্বাচন প্রথা একেবারেই বন্ধ। যে গুটিকয় মাহেরী বর্তমানে এখনও জীবিত তারা মন্দিরের নিচে জগন্নাথ দেবের যে গর্ভগৃহ আছে, যার সঙ্গে পুরীর সমুদ্রের সরাসরি যোগাযোগ এখনও অক্ষুণ্ণ, সেই গর্ভগৃহের চারপাশে ছোট ছোট কুঠুরিতে বসবাস করেন। এদের মধ্যে যিনি বয়সে সবার থেকে বয়ঃজ্যেষ্ঠ তাকে মন্দির কর্তৃপক্ষ ‘বড়া মাহেরী’ সম্মানে ভূষিত করেছেন। এদের সমস্ত রকম ব্যয় বহন করে চলেছে মন্দির কর্তৃপক্ষ।
অনুষ্ঠানের দিন জগন্নাথ দেবের মূল গর্ভ গৃহেই এই নৃত্য প্রতিযোগিতা হয়। এবং যে সকল বিচারক ওই প্রতিযোগিতায় বিচারকের আসন অলঙ্কৃত করার সৌভাগ্য অর্জন করেন তাদের ‘বড়া মাহেরী’-র সঙ্গে প্রসাদ ভক্ষণের সৌভাগ্য ঘটে।
যাই হোক দেবদাসী প্রথা অবলুপ্তির পর আজ যে মাহেরীরা এই পুরুষশাষিত সমাজে খানিকটা হলেও তাদের যোগ্য সম্মান পাচ্ছেন সে বড়ো আশার কথা। বর্তমান সমাজ ব্যবস্থায় প্রতিনিয়ত নারী নির্যাতন, লাঞ্চনা, গঞ্জনা সত্ত্বেও নারী শক্তি যে আদ্যাশক্তির এক অনন্যরূপ, মাতৃমূর্তির এক অনবদ্য প্রতিকৃতি একথা অনস্বীকার্য।