খাবারে হরমোন? কোথায় দাঁড়িয়ে আপনার জীবন ?
সকাল হলেই এক ডেকচি গরুর দুধ, বাজারের বড় বড় সুন্দর ডিম, বড় সাইজের মনভরানো মাছ, মনের মত ফ্রেশ মাংস এই সবই তো আপনার মন খুশি করে দিচ্ছে। আপনিও কিনে নিচ্ছেন দাম নিয়ে বেশি দরাদরি না করেই। কিন্তু ভালো মনভোলানো খাদ্য পেয়েছি ভেবে এত আনন্দিত হচ্ছেন যাঁরা, তাঁরা ভেবে দেখেছেন কি, ব্যবসা বাড়াতে গেলে ঠিক কী কী উপায় ব্যবসায়ীরা অবলম্বন করে থাকেন? অনেকেই হয়তো জানেন মাছ, মাংসের স্বাস্থ্য ভালো করতে হরমোন ব্যবহারের কথা, এমনকী ডিম ও দুধের উৎপাদন বাড়াতে হলেও ব্যবহার করা হয়ে থাকে হরমোন। প্রযুক্তির ভালো দিক যেমন আছে, আছে খারাপ দিকও।
জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এর হাত ধরে বাজারে আসছে এমন কিছু খাবার, যা সাধারণভাবে প্রস্তুত খাবারের তুলনায় অনেক বেশি জেল্লাদায়ক, বলা যায় গ্ল্যামারাস। কিন্তু কে বলতে পারে এতে আপনার শরীরের কোনও ক্ষতি হচ্ছে না?
১। গবেষণার অভাব : প্রথমেই বলে রাখা ভালো, এই নতুন ধরনের খাবার আপনি খাবেন কি খাবেন না তা নিয়ে যখন ভাবছেন তখন খাবারের ভালো মন্দ যাচাইয়ের পথ হিসেবে থাকে বিজ্ঞানের দ্বারস্থ হওয়ার। কিন্তু আপনার সেই সুযোগ খুব কম। কারণ এ নিয়ে বিজ্ঞানমহলে খুব কম কাজ হয়েছে। যেহেতু শরীরে উৎপন্ন প্রাকৃতিক হরমোনের উপাদানের থেকে কৃত্রিম হরমোনের উপাদান আলাদা করা যায় না, তাই কৃত্রিম হরমোনের কুপ্রভাবগুলো খুঁজে বের করাও সহজ নয়।
২। গ্রোথ হরমোন : গরুর দুধের উৎপাদনের সময় গরুর শরীরে প্রবেশ করানো হয় গ্রোথ হরমোন। মুরগি, মাছদের ক্ষেত্রেই একই ঘটনা ঘটে। এতে ওই প্রাণীগুলি স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি হারে বাড়ে। গরু দুধ দেওয়ার উপযোগী হয়ে ওঠে। মুরগির মাংস বাড়ে, মাছের আয়তন বৃদ্ধি পায়। হরমোন প্রবেশ করানো গরু যখন দুধ দেয় তার দুধে থাকে দশগুণ বেশি IGF নামক একটি উপাদান। কিছু গবেষণা বলছে ব্রেষ্ট ক্যান্সার ও প্রোষ্টেট ক্যান্সার, উভয়েরই বড় কারণ এই IGF বা ইনসুলিন গ্রোথ ফ্যাক্টর। কিন্তু অনেক বিজ্ঞানীই এই মতের বিরুদ্ধে গিয়ে জানাচ্ছেন, যে পরিমাণটুকু এই প্রাণীজ খাদ্যে থাকে তা একেবারে নগণ্য। শরীরেও এর কোনও প্রভাব নেই।
৩। সেক্স হরমোন : সেক্স হরমোন প্রাণীজ খাদ্যের সরবরাহ বজায় রাখতে অনেকটাই জরুরি। সেক্স হরমোন স্টেরয়েড হরমোন, এটা গরু থেকে মুরগি সবার দেহেই প্রয়োগ করা হয়, যাতে তাদের দেহে উত্তেজনার সৃষ্টি হয় ও সময়ের আগেই মিলনে সক্ষম হয়ে ওঠে। সেক্স হরমোন প্রয়োগ করলে মুরগি তাড়াতাড়ি ডিম পাড়ে, মাছের (রুই, কাতলা) চাষে সেক্স হরমোনের ব্যবহার প্রচুর। এতে মাছ ডিম পাড়ে তাড়াতাড়ি ফলে মাছ ব্যবসায়ীদের প্রভূত সুবিধা। মুরগির ক্ষেত্রেই ডিমের উৎপাদন বেড়ে যায়, মুরগি বাচ্চা দেয় সময়ের থেকে আগে। কিন্তু পরীক্ষা করে জানা গেছে প্রাণীজ খাদ্য থেকে মানুষের শরীরে এই হরমোন যায় ও সময়ের আগে মানুষের শরীরে যৌবন পর্যায়ের সূচনা করে। মানুষের শরীরেও যেহেতু এই একই হরমোনগুলো উপস্থিত তাই বাইরে থেকে আসা হরমোনের কাজও এক্ষেত্রে একই। ফলে পরিমাণের তুলনায় হরমোনের মাত্রা বেড়ে গেলে ছেলে ও মেয়ে উভয়ের ক্ষেত্রেই একই ঘটনা ঘটে। যাদের শরীরে হরমোনের নিঃসরণ কম হয়, তাদের জন্য এটা উপকারী হলেও অনেকের ক্ষেত্রেই কিন্তু তা নয়। ফলে চিন্তা থেকেই যায়। কিন্তু জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এর সমর্থকেরা আবার এই তত্ত্ব মানতে নারাজ। তাদের মতে রান্নার পর যখন প্রাণীজ খাদ্য আমাদের শরীরে প্রবেশ করে তখন কিন্তু তাতে সেক্স হরমোনের উপাদানগুলো থাকেই না। ফলে খাবার খাওয়ার এত চিন্তার কোনও কারণই নেই।
৪। বেছে নিন : প্রযুক্তি যত উন্নত তত তার ব্যবহার বাড়বে, কখনও তা মানুষের কল্যাণে, কখনও অকল্যাণে। হরমোন দিয়ে পশুপাখিকে খাবার উপযুক্ত করে তোলার পর আপনি তাকে বেছে নেবেন কিনা তা আপনার সিদ্ধান্ত। তবে জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এর বিজ্ঞানীরাও সঠিক। খাদ্যে এই হরমোনের পরিমাণ কমে থাকে। কিন্তু নিয়মিত খাওয়ার ফলে শরীরের যে কুপ্রভাব পড়বে না তা কে বলতে পারে?