এই সময় ধরে ব্রাশ না করলে দাঁতের কী হাল হয় জানলে…
[kodex_post_like_buttons]
কলকাতা টাইমস :
দাঁত ভাল রাখতে সকাল-বিকাল অনেকেই ব্রাশ করে থাকেন। তবু মুখ গহ্বরের নানা সমস্যা যেন থামতেই চায় না। কখনও ভেবে দেখেছেন কেন এমনটা হয়? আসলে দামি টুথপেস্ট এবং ব্রাশ ব্যবহার করে আমরা দাঁতের খেয়ালও তো রাখি, কিন্তু কতক্ষণ ব্রাশ করলে দাঁতের স্বাস্থ্য ভাল থাকে সে সম্পর্কে অনেকেই জানি না। ফলে কেউ ৩০ সেকেন্ড, তো কেউ ১ মিনিট ব্রাশ করেই মুখ ধুয়ে ফেলেন। ফলে দাঁতের ভাল তো হয়ই না, উল্টে সময় এবং পেস্ট নষ্ট হয়। এখন প্রশ্ন হল দাঁত ভাল রাখতে কতক্ষণ ব্রাশ করা জরুরি? একাধিক কেস স্টাডি করে দেখা গেছে কম করে ২ মিনিট ব্রাশ করতেই হবে। তবে দাঁতের ক্ষয় রোধ হবে। সেই সঙ্গে নানাবিধে রোগের প্রকোপও কমবে।
২ মিনিটই কেন?
একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে টানা ২ মিনিট ব্রাশ করেল তবেই দাঁতের প্রতিটি অংশ এবং মাড়ি পরিষ্কার হয়। এর থেকে কম সময় ব্রাশ করলে ময়লা ঠিক মতো পরিষ্কার হয় না। ফলে ক্যাভিটি সহ একাধাকি মুখ গহ্বরের রোগের প্রকোপ বৃদ্ধি পায়। প্রসঙ্গত, আরেকটি কারণেও ঘড়ি ধরে ব্রাশ করা উচিত। বেশ কিছু কেস স্টাডিতে দেখা গেছে ২ মিনিটের কম সময় ব্রাশ করলে দাঁতের ফাঁকে ফাঁকে ঘর বেঁধে থাকা ব্যাকটেরিয়ারা মারা যায় না। ফলে দিনের দিন এদের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে পেরিডন্টাইটিস এবং জিঞ্জিভাইটিসের মতো সমস্যা দেখা দেয়। সেই সঙ্গে একাধিক দাঁতের ক্ষয় হয়ে যাওয়ার আশঙ্কাও বৃদ্ধি পায়।
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ঠিক পদ্ধতিতে দাঁত মাজছেন কিনা সে দিকেও খেয়াল রাখাটা জরুরি: পরিসংখ্যান বলছে সারা বিশ্বে সঠিক পদ্ধতি মেনে দাঁত মাজেন মাত্র ৩০-৪০ শতাংশ মানুষ। ভাবুন এই পৃথিবীতে সিংহভাগ মানুষই জানেন না কীভাবে দাঁত মাজতে হয়। এবার বুঝতে পারছেন তো সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কেন দাঁতের রোগের প্রকোপ এতটা বৃদ্ধি পেয়েছে।
দাঁত মাজার সময় সহজ কতগুলি জিনিস মাথায় রাখবেন, তাহলেই কেল্লাফতে! রোজ সকালে মোবাইলের স্টপ ওয়াচে ২ মিনিট সেট করে ব্রাশ শুরু করুন। প্রথমে দাঁতের বাইরের অংশটা মাজুন। এই সময় ব্রাশটা উপর থেকে নিচের দিকে যাবে। এমনবাবে দাঁত মাজলে দাঁতের ফাঁকে জমে থাকা খাবার, ময়লা এবং ব্যাকটেরিয়া ধুয়ে যাবে। তারপর নিচের পাটির দাঁতের উপরিঅংশ ভাল করে ব্রাশ করুন। এবার উপর এবং নিচের পাটির দাঁতের ভিতরের অংশ পরিষ্কার করার পালা। সবশেষে দাঁতের যে অংশটা ব্যবহার করে আমরা খাবার চিবোই সেই অংশটা ভাল করে ব্রাশ করবেন। প্রসঙ্গত, এক্ষেত্রে একটি বিষয় মাথায় রাখবেন দাঁতের ডান দিন এবং বাঁদিকের অংশ মাজার সময় ব্রাশটা বৃত্তাকার ভাবে ঘোরাবেন। এমনটা করলে দাঁত ভালভাবে পরিষ্কার হবে। সেই সঙ্গে জিভ পরিষ্কার করতেও ভুলবেন না। না হলে কিন্তু মুখ দিয়ে বাজে গন্ধ বেরবে।
কী ধরনের ব্রাশ ব্যবহার করতে হবে? অস্ত্রই যদি ঠিক না হয়, তাহলে প্রতিপক্ষ ঘায়েল হবে কীভাবে! তাই তো ঠিক ঠিক ব্রাশ চুজ করাটা একান্ত প্রয়োজন। না হলে ঠিক পদ্ধতি মেনে ২ মিনিট ব্রাশ করলেও কোনও উপকার পাবেন না। এক্ষেত্রে নরম ব্রিস্টল বা দাঁড়ের ব্রাশ ব্যবহার করবেন। তাতে দাঁত ভাল পরিষ্কার হবে। সেই সঙ্গে খেয়াল রাখবেন ব্রাশের মাথা যেন ছোট হয়। কারণ ছোট মাথা ওয়ালা ব্রাশ দাঁতের প্রতিটি কোনায় পৌঁছে যেতে পারে। ফলে ভেতরের দিকের দাঁতে ব্যাকটেরিয়া বা খাবার জমে থাকার সম্ভাবনা কমে।
কতদিন অন্তর অন্তর ব্রাশ পরিবর্তন করা উচিত: দাঁতের স্বাস্থ্য় ভাল রাখতে প্রতি তিন মাস অন্তর ব্রাশ পরিবর্তন করতেই হবে। এক্ষেত্রে আরেকটি বিষয় মাথায় রাখবেন। ভাইরাল ফিবারের পর মনে করে ব্রাশ পরিবর্তন করবেন। কারণ জ্বর থাকাকীলন আপনি যখন ব্রাশ করেছেন, তখন তাতে ক্ষতিকর ভাইরাসেরা জায়গা করে নিয়েছে। সুস্থ হওয়ার পরও যদি পুরনো ব্রাশ দিয়ে দাঁত মাজেন তাহলে পুনরায় ভাইরাল ফিবারে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বৃদ্ধি পায়। দিনে কবার ব্রাশ করতে হবে? বারং বার ব্রাশ করলে ভাববেন না দাঁতের উন্নতি ঘটবে। বরং একেবারে উল্টো ঘটনা ঘটে। তাই ভুলেও দিনে ২ বারের বেশি ব্রাশ করবেন না। সকাল একবার, আর রাতে শুতে য়াওয়ার আগে একবার করলেই চলবে। তাহলেই আর দাঁতকে নিয়ে কোনও চিন্তা থাকবে না।
দাঁতকে সুস্থ এবং সুন্দর রাখতে আরও যে যে নিয়মগুলি মানা জরুরি:
১. ভাল করে জিভ পরিষ্কার করবেন। প্রয়োজনে জিভ ছোলা ব্যবহার করতে পারেন।
২. ফ্লরোইড রয়েছে এমন টুথপেস্ট এবং মাউথ ওয়াশ বেশি ব্যবহার করবেন না।
৩. পুষ্টিকর খাবার খাবেন। এমনটা করলে দাঁতের স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটবে।
৪. মুখ গহ্বরে কোনও সমস্যা হলেই চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন।
৫. দাঁত ঠিক রাখতে ধূমপান কমাতে হবে।
৬. ময়লা জায়গায় ব্রাশ রাখবেন না। প্রতিবার দাঁত মাজার আগে ভাল করে ব্রাশটা ধুয়ে নেবেন।