September 29, 2024     Select Language
৭কাহন Editor Choice Bengali KT Popular

হঠাৎ শরীরটা কেমন যেন ভারী হয়ে গেল!

[kodex_post_like_buttons]

কলকাতা টাইমস :

টনাটা ২৩ মার্চ ২০১৪ সালের। সেদিন বিকেলে দীর্ঘদিন অসুস্থ্য থাকার পরে মারা যান আমার ঠাকুরমা। আমাদের দাদুর পুরনো বাড়ির কিছুটা দূরে আমার আরেক কাকা নতুন বাড়ি করেছে। আর ওই বাড়িতেই সেদিন আমার ঠাকুরমা মারা যান । সেই বিকেল থেকে ওখানেই ছিলাম রাত সাড়ে ১২টা পর্যন্ত।

এক পর্যায়ে শরীরটা ক্লান্ত হওয়ায় আমাদের বাড়ি যেতে ইচ্ছে হলো। কিন্তু ছোটবেলা থেকেই আমাদের বাড়ি থেকে ওই কাকার বাড়িতে রাতে কাউকে একা যেতে দেখিনি। কারণ, ওই বাড়িতে একা যেতে সবাই কম বেশি ভয় পায়। এর কারণ হিসেবে তারা বলতো, ওই বাড়ি যেতে যে সড়কটি পার হয়ে যেতে হতো ওই সড়কে নাকি ভয়াবহ কিছু ঘটনা তাদের চোখে পড়তো।

তবে ওই দিনের ঘটনার আগে আমি কখনো একা ওই পথে যাইনি আর ভয়াবহ কোনো ঘটনার সাক্ষীও হইনি। তবে বরাবরই ভয় পেতাম ওই সড়কের দুই পাশে থাকা কম করে হলেও একশো কবরকে। পুরনো আর নতুন কবরের যেন মেলা বসেছে ওইখানটায়।

যা বলছিলাম, বাড়িতে একা যেতে ভয় পাওয়ায় কাউকে খুঁজছিলাম আমার সঙ্গী হিসেবে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কাউকে না পেয়ে একটু সাহস করে একাই রওনা দিলাম কাকার বাড়ি থেকে নিজেদের বাড়ির পথে। তখন আমার কাছে টর্চ লাইট না থাকলেও সঙ্গে ছিলো একটা মোবাইল ফোন। মোবাইলটার ফ্লাশ লাইট না থাকলেও স্ক্রিনের আলো ছিলো অনেক। আর সেই আলোতেই পথ চলা শুরু হলো আমার।

ঘুটঘুটে অন্ধকার পুরো সড়কের অর্ধেকটা পার হয়েছি নির্ভয়ে। কিন্তু ভৌতিকতা শুরু হলো এর পরে। আমার শরীর হঠাৎ করে কেমন যেন ভারী হয়ে গেল। মনে হচ্ছে যেন আমার হাত পা ফুলে মোটা হয়ে কলা গাছের মতো হয়ে যাচ্ছে। মনে হলো আমার শরীরের পেছন থেকে কে যেন আমাকে টানছে। রোবটের মতো মনে হচ্ছে নিজেকে।

তখন অনেক কষ্টে সামনে কয়েক পা এগোলাম। এর মধ্যে আমার ডানে বামে ও উপরের দিয়ে ঝড় শুরু হয়ে গেছে। তীব্র বাতাস, সোঁ সোঁ শব্দ ও অনেক মানুষের জোড়ালো চিৎকার কানে বাজছে। তখন ভয়ে আমি এমন জোড়ে কাঁপছি যেন আমার কাঁপুনিতে পুরো পৃথিবী কাঁপছে। এতো দৌড়ানোর চেষ্টা করছি, কিন্তু কোনো এক অদৃশ্য শক্তি আমাকে টেনে ধরছে- বুঝতে পারছি। অদৃশ্য চাপ থেকে কোনো মতে একটু নিজেকে আলগা করতে পেরে হঠাৎ ভোঁ দৌড়, আর সঙ্গে সঙ্গে মনে হলো উঁচু পাহাড় থেকে হোঁচট খেয়ে নিচে পড়ছি।

অনেকগুলো গড়ান শেষে একপর্যায়ে থামলাম।ছোট ছোট গাছ আর উঁচু-নিচু মাটির ঢেলার ধাক্কায় শরীরে প্রচণ্ড ব্যথা শুরু হলো। তখন শুয়ে ছিলাম, ব্যথাভরা শরীর নিয়েই খুঁজছি হাতে থাকা মোবাইল ফোনটি। মাথাটা বাম দিকে কাত করতে একটু নিচেই দেখলাম ফোনটা মিট মিট করে জ্বলছে। ফোনটা হাতে নিয়ে চার দিকে ঘুরিয়ে দেখলাম আমি পুরনো ভাঙা একটা কবরের মধ্যে শুয়ে আছি।

আতঙ্কে আমার মনে হলো পুরনো ওই কবরের মৃতব্যক্তি আমাকে চেপে ধরেছে। হাঁচড়েপাঁচড়ে কোনোমতে উঠে দিকবিদিক না দেখেই দৌড় দিলাম পাগলের মতো। এবার আর কেউ আটকালো না। যতদূর আমার মনে আছে ওই দৌড়ে আমাদের বাড়ির উঠান পর্যন্ত আমি পৌঁছেছিলাম। এর পরে আর আমার কিছুই মনে নেই। পরে শুনেছি ১৮ ঘণ্টা পরে নাকি আমার জ্ঞান ফিরেছে।

ওই দিনের  থেকে আমি আর কোনো নিয়ম-কানুন মেনে চলি আর না চলি, একটা নিয়ম সঠিকভাবে মেনে চলছি এখনো। তা হলো, শুধু রাতে নয় দিনেও আমি ওই সড়ক দিয়ে আর হাঁটি না। হয়তো আর কখনো হাটবোও না।

Related Posts

Leave a Reply