জড়িয়ে ধরা যখন যৌনতা নয় পেশা
[kodex_post_like_buttons]
কলকাতা টাইমস :
একাকিত্ব কষ্টকর প্রক্রিয়া। কিছুক্ষণ একা থাকতে চাইলেও, মানুষ দলগতভাবে বসবাস করতে ভালোবাসে। তাই, একটা নির্দিষ্ট সময়ের পর মানসিকভাবে সে কারও উপস্থিতি খোঁজে। আর এই মানসিক আবেগে শারীরিক স্পর্শও অনেক বড় ভূমিকা পালন করে।
শারীরিক স্পর্শ যে সব সময় যৌন স্পর্শ হবে তা নয়। কখনো কি আপনার মনে হয়নি যে, এখন কেউ হাতটা ধরলে ভালো লাগত, কিংবা কেউ মাথায় হাত বুলিয়ে দিলে অনেক বেশি সাহস পেতেন মনে? স্পর্শটি ঠিক এমন।
বর্তমান সময়ে মানুষের কাছে প্রযুক্তি এবং সুযোগ-সুবিধা অনেক বেশি সহজলভ্য হলেও এই ছোটখাটো ভালোলাগার স্পর্শ দেওয়ার মতো কারও অভাবটা বেশ প্রকট হয়ে উঠেছে। অনেকে হয়তো দীর্ঘসময় ধরে হাতে হাত রেখে কথা বলার মতো কাউকে পাননি। আর এই সমস্যাকে দূর করতেই ব্রিটেন, ইউরোপ ও আমেরিকাসহ বেশ কিছু স্থানে শুরু হয়েছে প্রফেশনাল হাগ প্রোভাইডার।
কোনো একাকি মানুষকে একটু হাতে হাত রেখে কথা বলা, জড়িয়ে ধরার জন্য এই অভিজ্ঞরা নিচ্ছেন ৬৫ থেকে ৮০ ডলার পর্যন্ত। কখনো কখনো ঘণ্টাপ্রতি এই মূল্য বাড়ে বা কমে। এই পুরো ব্যাপারটিতে কামনার কোনো স্থান নেই। আছে নির্ভরতা, ভালোবাসা, বিশ্বাস, আশ্বাস আর স্নেহের ছোঁয়া। বয়স্ক থেকে শিশু- সবাইকেই সেবা দিয়ে থাকেন এই প্রফেশনাল কাডলাররা।
ব্যাপারটি এমন নয় যে, যে কেউ এই পেশায় আসতে পারবেন। এজন্য প্রয়োজন প্রশিক্ষণ ও অভিজ্ঞতার। নির্দিষ্ট কিছু প্রশিক্ষণ নেওয়ার পরই একজন মানুষ প্রফেশনাল কাডলার হিসেবে কাজ শুরু করতে পারবেন। ব্যাপারটি অবশ্য পশ্চিমা অঞ্চলের জন্য নতুন কিছু নয়। রাস্তায় ‘ফ্রি হাগস’ ধরনের ব্যাপার আগেও ছিল সেখানে।
একাকি মানুষেরা নিজেদের নিঃসঙ্গতা কাটাতে জড়িয়ে ধরতে পারতেন ফ্রি হাগ প্রোভাইডারদের। কিন্তু এবার এই পুরো ব্যাপারটিকেই নতুন আদল দেওয়া হয়েছে। কেবল একজন মানুষ নয়, পুরো একটি কোম্পানি কাজ করছে ব্যাপারটি নিয়ে। থাকছে সেখানে প্রফেশনাল ডিপ্লোমা নেওয়া সেবা প্রদানকারী। আর এজন্য খরচ করতে হচ্ছে নির্দিষ্ট অঙ্কের টাকা।
এমন সেবা প্রদানকারী একটি প্রতিষ্ঠানের মতে, বেশিরভাগ মানুষই জীবনে খুব কম সময় কারও কাছ থেকে নির্ভেজাল আশ্বাস ও ভালোবাসার ছোঁয়া পেয়ে থাকেন। অথচ, জীবনে সফল হওয়ার জন্য, আত্মবিশ্বাসের জন্য এই স্পর্শ প্রয়োজন। আপনার হাতে আরেকজনের হাত আপনাকে মানসিকভাবে অনেক বেশি দৃঢ় হতে সাহায্য করতে পারে। হয়তো আপনার কাছে ব্যাপারটি খুব অস্বাভাবিক ও খেলো বলে মনে হচ্ছে। তবে এটি আপনাকে মানসিকভাবে সহজ, হাসিখুশি, আত্মবিশ্বাসী ও সাহসী হতে সাহায্য করবে।
সাধারণত ঘণ্টাপ্রতি কাজটি হলেও, এই সময়সীমা বাড়িয়ে নেওয়া যায়। সেটা নির্ভর করে সেবাপ্রদানকারী ও সেবাগ্রহীতার ওপরে। নারী, পুরুষ- সবাইকেই পাওয়া যাবে সেবাকেন্দ্রে। মজার ব্যাপার হল, প্রথমে অনেকেই ব্যাপারটি নিয়ে সন্দেহ পোষণ করলেও, প্রতিনিয়ত এই সেবা গ্রহনকারীর পরিমাণ বেড়ে চলেছে। এমনই এক সেবাপ্রদানকারী সামান্থা জানান যে, সময়ের অভাবে অনেককেই এই সেবা দিতে পারেন না তিনি।
এখন অবধি বাংলাদেশের মতো দেশে সমস্যা এতো প্রকট না হয়ে উঠলেও, পশ্চিমা দেশগুলোতে একাকিত্ব ও এ থেকে হতাশা এবং আত্মহত্যার মতো ব্যাপারগুলোও ঘটছে প্রচুর পরিমাণে। সেই সংখ্যাকে এই প্রফেশনাল কাডল প্রক্রিয়া অনেকটা কমিয়ে আনবে বলে মনে করেন সবাই।
বাইরে থেকে দেখতে খুব সহজ কোনো ব্যাপার মনে হলেও, সামান্থার মতে প্রক্রিয়াটি বেশ কঠিন। একেবারে শূন্য থেকে এই প্রফেশনাল কাডলারের কাজটি শুরু করেন সামান্থা। একজন উকিলের সাহায্য নিতে হয়েছে তাকে। আইনি ব্যাপারেও পরিষ্কার থাকার ব্যাপার আছে এখানে। অনেকে যৌনমিলন আর কাডলিং-এর ব্যাপারটিকে মিলিয়ে ফেলেন বিধায় এক্ষেত্রেও পরিষ্কার নির্দেশনা দেওয়া আছে।
কাজটি যেন সেবাগ্রহীতা বা সেবাদাতা কারও জন্যেই কঠিন বা অস্বস্তিকর না হয়ে যায় সেটার দিকে কড়া নজর রাখতে হয় প্রফেশনাল কাডলারদের।
তো, কী ভাবছেন? আপনিও কি একা?