September 29, 2024     Select Language
Editor Choice Bengali KT Popular শিল্প ও সাহিত্য

আমি জানি না, ঘোড়া জানে

[kodex_post_like_buttons]

সৌগত রায়বর্মন 

‘জেন’ জাপানের একটি প্রাচীন ধর্ম। কেউ কেউ মনে করেন, জেনরা বুদ্ধদেবের আদর্শ অনুসারী। আবার অনেকেই বলেন, জেনরা চিণের কনফুসিয়াস দর্শনের সঙ্গে বুদ্ধের মনোন মিশিয়ে একটা নতূন পথ সন্ধান করেছিলেন। জেনরা কিন্তু ঈশ্বরপ্রসঙ্গে বুদ্ধদেবের মতোই নিশ্চুপ ছিল। সুতরাং তারা আস্তিক না নাস্তিক তা নিয়ে স্পস্ট করে কিছু বলা সম্ভব নয়। তাদের মতবাদকে ঠিক ধর্ম না বলে জীবনধারাও বলা যেতে পারে। আশ্চর্য এটাই যে তাদের কোনো ধর্ম পুস্তকও নেই। তাদের যা কিছু বক্তব্য সবই গল্পের আকারে মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়ত। আজ থেকে প্রায় দুই হাজার বছর আগে লেখা এই চার ছ’ লাইনের কাহিনিগুলি ক্রমশ ক্রমশ হারিয়ে যাওয়ার আগে যেটুকু এখনও পাওয়া যায় তার কিছু নিদর্শন….

ঘোড়া জানে
এক ভদ্রলোক এক সকালে ঘোড়ার পিঠে চেপে বেড়াতে বেড়িয়েছেন। বেশ যাচ্ছিল ঘোড়া। হটাৎ যেতে যেতে পাহাড়ের কোলে এসে ঘোড়া খুব জোরে ছুটতে লাগল। উতরাই রাস্তা দিয়ে ঘোড়া ছোটানো খুব মুস্কিল। কিন্তু ঘোড়া লাফাতেই লাগল। বিপজ্জনক ভাবে। এই দৃশ্য দেখে আরেক পথচারী উদ্বিগ্ন হয়ে জিজ্ঞেস করল, আরে এই মারাত্মক পথে এত জোরে কোথায় যাচ্ছো? ঘোড়সওয়ার হাসতে হাসতে বলল, আমি কী জানি? জানে তো ঘোড়া।
 
সর্গ ও নরক।
নানা যুদ্ধ করে এক সামুরাই হটাৎ মনে করল, আচ্ছা মারা গেলে আমি কোথায় যাবো? স্বর্গ না নরক?
খুব মুশকিলে পড়ল সামুরাই। একদিন ঠিক করল স্বর্গের বা নরকের রাস্তাটা দেখে আসলে মন্দ হয় না! কিন্তু কে দেখাবে এই রাস্তা? 
সামুরাই শুনেছে ওই পাহাড়ের মাথায় একজন সাধু থাকে। সে নাকি সব দেখাতে পারে। সামুরাই ঠিক করল, তার কাছেই যাবে। সামুরাই তাই করল। দুর্গম পাহাড় টপকে সেই সাধুর কাছে গেল। সাধু তাকে বসতে দিল। সামুরাই জিজ্ঞেস করল, সাধু, স্বর্গ আর নরকের রাস্তা দেখিয়ে দাও তো। 
সাধু উলটে তাকে প্রশ্ন করল, তুমি কে হে বাপু? সামুরাই প্রচন্ড রেগে গেল। সে একজন সামুরাই, সাধুর কী সাহস! একজন সামুরাইয়ের পরিচয় জিজ্ঞেস করছে। সে তার তরোয়ালে হাত রাখল।তাই দেখে সাধু হো: হো: করে হেসে উঠল। বলল, ওটা আসল তো, না কি টিনের তরোয়াল নিয়ে ঘুরছো? এই কথাটা বলার সঙ্গে সঙ্গে সামুরাই সাধুর মাথায় লম্বা তরোয়াল রাখল। সাধু সঙ্গে সঙ্গে হাসতে হাসতে বলল এটাই নরকের রাস্তা। সামুরাই তৎক্ষণাৎ সাধুর পায়ে পড়ে বলল, আমায় ক্ষমা করে দেবেন। সাধু তার হাত ধরে বলল, আর এটা? এটা হল স্বর্গের রাস্তা।
 
যাই হও না কেন?
একটা ইঁদুর একবার ভগবানের তপস্যা করে তার সাক্ষাৎ পেল। ভগবান বললেন, কি চাই বল? ইঁদুর ভগবানের চরণে নতজানু হয়ে বলল, বেড়াল দেখলে খুব ভয় লাগে। ঠাকুর আমায় বেড়াল করে দাও। তাই হল, ইঁদুর বেড়াল হল। কিন্তু তখন তার ভয় লাগতে শুরু করল, যদি কুকুর ধরে! সে আবার ভগবানের কাছে আর্জি জানাল, হে ঠাকুর এখন বাঘের ভয় লাগছে। আমায় প্রভূ একটা বাঘ বানিয়ে দাও। ভগবান তাই করে দিল। এবার শুরু হল শিকারীর ভয়। প্রচন্ড ভয়ে সে আবার ভগবানের কাছে এসে বলল, ঠাকুর, ইঁদুরই ভালো। আমায় আবার ইঁদুর বানিয়ে দাও।
ভগবান তখন হেসে বললেন, তুমি যা যা বলেছিলে তাই তোমাকে বানিয়েছি। কিন্তু তোমার ভয় দূর হয়নি। কেননা তুমি তোমার মনের গভীরে যে ভয় পুষে রেখেছো তা দূর করতে বলনি। আমিও করিনি।

Related Posts

Leave a Reply