‘ভালোবাসার ওপরে স্থান দিয়েছিলাম অর্থ-বিত্তকে, তারপর…’
কলকাতা টাইমস :
মানুষের জীবনের নানা সমস্যা থাকে যা কখনো বলা হয় না। বলার সুযোগও মেলে না আসলে। এমন কিছু সমস্যা রয়েছে যা সবার সামনে বললে মানসম্মানও যেন থাকে না। এমন নানা আতঙ্ক আর সামাজিক বিধিনিষেধের চুলচেরা হিসেব করে মনের কষ্টের কথা না বলাই থেকে যায়। এখানে নিজের জীবনের তেমনই কিছু কথা শেয়ার করলেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক তরুণী। দাম্পত্য বিষয়ক বিশেষজ্ঞরা সেই অভিজ্ঞতার জানান দিতে চান সবাইকে।
তরুণী লিখেছেন, আমার বয়স তখন বিশের কোঠায় মাঝামাঝি। পরিবারে বিয়ের কথা উঠতে একটু অন্যভাবে ভাবতে শুরু করলাম। অন্যভাবেও হয়তো নয়। এমনটা সব মেয়েই ভাবতে পারে। এমন কারো সঙ্গে বিয়ে হবে যার সঙ্গে জীবনটা রূপকথার গল্পের মতো এগিয়ে যাবে। এই দেশ সেই দেশ ঘুরতে যাবো। শপিংয়ের সময় মূল্যের দিকে তাকাতে হবে না। প্রচুর অর্থ থাকবে। কোনো টেনশন নেই। তেমন এক ছেলের সঙ্গেই বিয়ে হলো আমার।
বিয়ের পর প্রথম বছরটা সত্যিকার অর্থেই স্বপ্নের মতো কেটেছে। আমরা ৭টি দেশ ঘুরেছি। আমার ওয়ার্ডরোব দামি সব পোশাকে পূর্ণ ছিল। ব্যাগ কিংবা জুতা ছিল বিভিন্ন ব্র্যান্ডের। কোনো কিছু কেনার আগে দ্বিতীয়বার ভাবিনি আমি। মনে হচ্ছিল, সত্যিকার অর্থেই আমার চিন্তা আর্শীবাদ হয়ে দেখা দিয়েছে।
এরপর জীবন যত আগাতে থাকলো, আমাদের মাঝে নতুন উপলব্ধি আসতে থাকলো। খুব দ্রুত বুঝতে পারলাম, আমরা আর দশটা দম্পতির চেয়ে ভিন্ন নই। দুজনের চাওয়া-পাওয়া ভিন্ন। শ্বশুরবাড়ির সঙ্গে আমার সম্পর্ক মোটেও ভালো যাচ্ছিল না। ক্রমেই স্বামীর সঙ্গে নানা বিতণ্ডা একটা পর্যায়ে ভয়াবহ হয় যাচ্ছিল। স্বামীর আরেকটা সমস্যা ছিল। আমার বাবা-মা মেয়েকে দেখতে আসুক এটা সে চাইতো না। আমাকেও বাবার বাড়িতে যেতে দিতো না।
ক্রমেই আমি নিজ বাড়িতে আগন্তুক হতে থাকলাম। আমি বিভিন্ন পার্টিতে যাই, শপিং করি, বাড়ির কাজ করি। কিন্তু আমাদের দুজনের মধ্যে কোনো গভীর সম্পর্ক নেই বুঝতে শুরু করলাম। আমার চারদিকে বিলাসিতার ছড়াছড়ি। কিন্তু তার ভালোবাসা পাওয়ার জন্যে কাঙাল হয়ে উঠলাম। আমাদের সন্তানরাও এলো পৃথিবীতে। স্বামীর ব্যবসায়ী ভ্রমণ ঘন ঘন হতে থাকলো। একটা সময় সে বেশিরভাগ সময়ই দেশের বাইরে কাটাতে থাকলো। এ নিয়ে কথা বলতে গেলেই দুর্ব্যবহার শুরু হতো।
আমরা দুজনই বাচ্চাদের খুবই ভালোবাসতাম। সন্তানদের বড় করার বিষয়ে সে সচেতন ছিল। কিন্তু আমি বিলাসিতার মানদণ্ডে তাকে আর বিচার করি না। এক সন্তানকে বাবা দেশের বাইরে পড়ানোর ব্যবস্থা করলো। কিন্তু ভর্তির দিন আমি তা জানতে পারলাম। ছোট ছেলেটা স্কুলে ভালো ফলাফল না করলে স্বামী আমাকে দোষারোপ করতো।
এক পর্যায়ে বুঝতে পারলাম, আমাদের এই জীবনটা এক কথিত বিবাহিত জীবন হিসেবে টিকে রয়েছে। এটা সামাজিক নিয়ম পালন ছাড়া আর কিছুই নয়। সামাজিকভাবে আমরা সুখী পরিবারের চিন্তা করি। কিন্তু বাস্তবে তার কিছুই হয়নি। এমনকি আমাদের একসঙ্গে পাশাপাশি বসাটাও বিরল ঘটনা হয়ে গেলো। নিয়ম-কানুনের সঙ্গে মানানসই হয়ে জীবন চালিয়ে নিতে বাধ্য হলাম আমি। বন্ধুদেরও পেলাম না। কারণ সবাই যার যার পরিবার নিয়ে ব্যস্ত।
কিন্তু আজ যখন আমি অতীতে তাকাই, তখন বুঝতে পারি ভুলটা কোথায় ছিল। ভালোবাসার ওপরে স্থান দিয়েছিলাম পয়সাকে। ভেবেছিলাম, এই এক পয়সা জীবনের সব সমস্যা সমাধান করতে সক্ষম। কিন্তু এই ভুল ধারণা আজা আমাকে প্রতিনিয়ত বিক্ষত করছে। বিলাসী জীবন আপনাকে আরাম-আয়েশ দিতে পারে। কিন্তু কারো সঙ্গে নিজের জীবনটাকে শেয়ার করতে না পারলে এসবই অর্থহীন। আমি তাই বুঝেছি। যদিও এসব পুরনো কথা। কিন্তু বুঝতে আমার অনেক দেরি হয়ে গেছে।