কুকুরের মতো ডেকে নিমেষে গোটা মানুষ চিবিয়ে খেতে পারে এই মাছ!
কলকাতা টাইমস :
সৃষ্টি বড়ই অদ্ভূত। পৃথিবী জুড়ে এমন অনেক কিছুই রয়েছে, যেগুলি সম্পর্কে ন্যূনতম কোনও ধারণাই আমাদের নেই। বেশি দূরে যেতে হবে না। ‘ঘর হতে শুধু দুই পা ফেলিয়া’ই যে কত সৃষ্টি, কত ঘটনা এদিক-ওদিক ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে, তা-ই অনেক সময় আমাদের গোচরে আসে না।
১) কয়েক কোটি বছর ধরে দক্ষিণ আমেরিকার মিষ্টি জলের হ্রদ, খাঁড়ি আর নদীতে পিরানহারা বসবাস করে আসছে। ভেনেজুয়েলার ওরিনোকো নদীর অববাহিকা থেকে আর্জেন্টিনার পারানা নদী পর্যন্ত এদের ঝাঁকে ঝাঁকে দেখা যায়
মোট ৩০টি প্রজাতির পিরানহা দেখেত পাওয়া যায়। প্রায় আড়াই কোটি বছর আগেও দক্ষিণ আমেরিকায় বসবাসকারী পিরানহা প্রজাতির জীবাশ্ম মিলেছে। মেগাপিরানহা প্যারানেনসিস নামের সেই আদি সংস্করণ থেকেই আধুনিক পিরানহা মাছের উত্পত্তি বলে দাবি বিজ্ঞানীদের।
২) শিকারি হিসেবে পিরানহার খ্যাতি মূলত তার দাঁত এবং নিরন্তর কামড় দেওয়ার ক্ষমতার সুবাদে। পূর্ণবয়স্ক মাছের দুই পাটি অত্যন্ত ধারালো দাঁত থাকে। কামড়ালে পাটি দু’টি পরস্পরের খাঁজে বসে যায়। পিরানহার দাঁতের আকৃতি অনেক সময় ছুরির ফলার সঙ্গে তুলনা করা হয়। এরা মাংসাশী বলে দাঁতের এমন গঠন খাবার খেতে সাহায্য করে। সারা জীবনে একাধিক বার দাঁত খোয়ায় পিরানহারা। তবে একসঙ্গে তাদের ৪টি উপড়ে যাওয়া দাঁত ফের গজিয়ে ওঠে।
৩) সাহিত্য ও সিনেমায় পিরানহাদের ভয়াল কামড় সম্পর্কে বহু হাড়-হিম বর্ণনা পাওয়া যায় যা অতিরঞ্জিত, তবে শিকার বা শত্রুর শরীরে দাঁত বসানোর সময় বিপুল শক্তি খরচ করে এই মাছ। ২০১২ সালের এক গবেষণায় দেখা গিয়েছে, লালচোখো পিরানহাদের (Serrasalmus rhombeus) প্রতি কামড়ের ওজন হয় ৩৪.০১৯৪ কেজি, যা তাদের নিজস্ব ওজনের তিন গুণ। জানা গিয়েছে, প্রাগৈতিহাসিক মেগাপিরানহা প্যারানেনসিসদের মুখগহ্বরে ২টির বদলে ৪টি দাঁতের পাটি থাকত।
৪) জলের নীচে পেলে মানুষকে মাত্র কয়েক মিনিটে ছিঁড়ে খেতে পিরানহাদের না কি জুড়ি নেই। কল্পকাহিনীর এই বর্ণনার সঙ্গে বাস্তবের কোনও মিল নেই। প্রথমত, জ্যান্ত মানুষকে পিরানহারা কখনই আক্রমণ করে না। তবে দক্ষিণ আমেরিকার নদীতে নেম হঠাত্ মারা যাওয়া মানুষের দেহে এই মাছের ঝাঁক দাঁত বসিয়েছে, এমন নজির বিরল নয়।
কিন্তু তা বলে কয়েক মিনিটে জ্যান্ত মানুষকে কঙ্কালে পরিণত করার ক্ষমতা তাদের নেই। তেমন ঘটনা ঘটতে হলে ৩০০-৫০০ পিরানহার ঝাঁককে অন্তত ৫ মিনিট পরিশ্রম করতে হবে। আর একটি কথা– রক্তের স্বাদ পেলে পিরানহা ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। তাই জখম কোনও প্রাণীকে জলে পেলে, পিরানহার ঝাঁক আক্রমণ করবেই।
৫) গবেষণায় দেখা গিয়েছে, পিরানহার কয়েকটি প্রজাতি গর্জন করতে পারে। মত্স্যব্যবসায়ীদের জালে ধরা পড়া লাল-পেটওয়ালা পিরানহাদের এমন শব্দ করতে শোনা গিয়েছে। শব্দটি অনেকটা কুকুরের ঘেউ ঘেউয়ের মতো। বেলজিয়ামের একদল গবেষক লক্ষ্য করেছেন, নিজের শরীরের ভিতর থাকা সুইমব্লাডার কাজে লাগিয়ে আওয়াজ তৈরি করে পিরানহারা। শত্রুকে ভয় দেখাতে, শিকারকে ঘাবড়ে দিতে এবং নিশানার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ার প্রাক মুহূর্তে তারা তিন রকম আওয়াজ করে। দাঁতে দাঁত পিষেও এক ধরনের শব্দ তৈরি করতে পারে এই শিকারি মাছ