দীর্ঘশ্বাস না ফেললে কিন্তু মৃত্যু নিশ্চিত!
দুঃখ, যন্ত্রণা বা অতৃপ্তি থেকে মানুষ দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলেই মনে করা হয়। আসলে বিজ্ঞান বলছে ভিন্ন কথা। কোনো কারণ ছাড়াই মানুষ নিজের অজান্তে দীর্ঘশ্বাস ফেলে। আর এই কাজটি খুবই জরুরি। বেঁচে থাকতে হলে মানুষকে দীর্ঘশ্বাস ফেলতেই হবে।
ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া এবং স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটির গবেষকরা তাদের গবেষণায় জানান, মানুষ প্রতি ঘণ্টায় ১২ বার দীর্ঘশ্বাস বিসর্জন দেয়। এর অর্থ সে ক্লান্ত বা ক্রোধ প্রকাশ নয়। ফুসফুসের কাজ সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতেই দেহ সহজাতভাবে এ কাজ করে। এটি এমন প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে ফুসফুস সুস্থ থাকতে পারে এবং জীবন বাঁচিয়ে রাখে।
বিজ্ঞানীরা জানান, মানুষের ফুসফুসে বিস্তৃত খোলা অংশ রয়েছে যা কিনা একটি টেনিস কোর্টের মতো। এগুলো অসংখ্য ভাঁজ আকারে ছোট অংশ জুড়ে থাকে। দীর্ঘশ্বাসের মাধ্যমে ফুসফুসের ৫০০ মিলিয়ন বাতাস শোষণকারী অ্যালভিওলি অক্সিজের গ্রহণ করে। প্রতিটি অ্যালভিওলিগুলোর ডায়ামিটার প্রায় ০.২ মিলিমিটার। এরা রক্তে অক্সিজেনের প্রবাহ সুষ্ঠু করতে কাজ করে। এদের কাজ করত ফুসফুসের ফুলে উঠতে হয়। অ্যালভিওলিগুলো কাজ করতে করতে চুপসে যায়। তখন প্রচুর পরিমাণ বাতাসের দরকার হয়। প্রতি ৫ মিনিটে একবার হলেও দীর্ঘশ্বাসের প্রয়োজন হয়।
এই লম্বা ও গভীর শ্বাস স্বাভাবিক শ্বাসের দ্বিগুন হয়ে থাকে। এটা যে শব্দের সঙ্গে ঘটতে হবে এমন কোনো কথা নেই। এটা নিজের অজান্তেই নিঃশব্দে ঘটে যেতে পারে।
ফেল্ডম্যান স্ট্যানফোর্ডের বায়োকেমিস্ট্রি বিভাগের গবেষক মার্ক ক্রাসনোর সঙ্গে গবেষণার সমন্বয় করেন। মস্তিষ্কে রাসায়নিক উপাদান ক্ষরণের মাধ্যমে শ্বাসগ্রহণ নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি বোঝার চেষ্টার করেন তারা। বিজ্ঞানীরা এনএমবি এবং জিআরপি নামের দু্ই ধরনের উপাদান খুঁজে পান যা শ্বাস-প্রশ্বাসের জন্যে খুবই জরুরি। কিন্তু মস্তিষ্কে এদের দেখা কদাচিৎ মেলে।
বিজ্ঞানীরা ইঁদুরের ওপর গবেষণা চালান। জানান, মস্তিষ্কে ৪০০ নিউরনের দেখা মিলেছে যা তাদের লম্বা শ্বাস গ্রহণের কাজ করে। এ কাজের জন্যে অনেকগুলো নিউরন কার্যকর থাকে বলে জানান তিনি।
এ গবেষণার মাধ্যমে একটি বিষয় পরিষ্কার হয়েছে। একই উপায়ে মস্তিষ্কের সঙ্গে স্নায়বিক প্রক্রিয়ার অন্যান্য বিষয় আরো স্পষ্ট হতে পারে। এদের সমন্বয়ে মানবদেহের আরো জটিল সব কার্যক্রম সম্বন্ধে ধারণা লাভ করা যাবে। স্নায়বিক পদ্ধতি নিয়ে এ ধরনের গবেষণার অর্থ নতুন একটি ভাষা সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করার মতো, জানান ফেল্ডম্যান।
তবে দীর্ঘশ্বাস ফেলার সময় মস্তিষ্কের ওই ৪০০টি নিউরনের প্রত্যেকে আলাদাভাবে কি দায়িত্ব পালন করছে তা বুঝতে বিস্তারিত গবেষণা দরকার। ইঁদুরের মস্তিষ্কে পেপটাইডস প্রয়োগ করে দেখা গেছে, স্বাভাবিক শ্বাস প্রায় দ্বিগুন হয়ে যাচ্ছে। অর্থাৎ, তা দীর্ঘশ্বাসের আকার নিচ্ছে। এটা কেন হচ্ছে? তখন মস্তিষ্কে কি ঘটছে? গোটা পদ্ধতি কি কার্যক্রমে চলছে? এসব বহু প্রশ্নের জবাব মিলবে দীর্ঘশ্বাসের রহস্যে। এর মধ্যে স্নায়বিক প্রক্রিয়া এবং সংকেত সৃষ্টির বিষয়ে যাবতীয় জবাব লুকিয়ে রয়েছে।