একে না বাঁচালে ভবিষ্যতে আধপেটা খেয়ে থাকতে হবে
একেবারে গাণিতিক একটা হিসাব। আপনি প্লেট থেকে যা খাচ্ছেন, তার প্রতি ৩ কামড়ের এক কামড় পরিমাণ খাবার উৎপাদনে ভূমিকা রাখে কে জানেন? মৌমাছি। এই মধু উৎপাদনকারী পতঙ্গই পরাগায়ণের মাধ্যমে ফসল উৎপাদনে বিরাট ভূমিকা রাখে।
আমেরিকার বার্কেলের ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়ার এক গবেষণায় বলা হয়, গোটা বিশ্বে যে পরিমাণ ফসল উৎপন্ন হয় তার ৩৫ শতাংশ উৎপাদিত হয় পরাগায়ণের মাধ্যমে। আর এ কাজে দারুণ দক্ষ মৌমাছি। তাই খাদ্যের উৎপাদন ঠিক রাখতে মৌমাছি বাঁচাতে হবে।
সংযুক্ত আরব আমিরাতের জোসেলিন ম্যাকব্রিজ এবং জাহিরা নেজরাউয়ি বিষয়টি গভীরভাবে অনুসন্ধান করেছেন। তাই ভবিষ্যতের কথা মাথায় রেখে তারা গড়ে তুলেছেন ‘বিকিপার্স অ্যাসোসিয়েশন’ নামের এক এনজিও । মানুষের বেঁচে থাকার জন্য এবং ফসল উৎপাদনের জন্য এসব পতঙ্গের প্রয়োজন অনস্বীকার্য। আর এ তথ্য আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্মকে বোঝাতে সচেতনতা ছড়াবে প্রতিষ্ঠানটি।
সংশ্লিষ্ট বিষয়টি স্কুলের পাঠ্য বইয়ে অন্তর্ভুক্ত করতেও চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন তারা। এসব শিক্ষার মাধ্যমে এ যুগের প্রকৃতি বিচ্ছিন্ন শিশুদের সঙ্গে প্রকৃতির গভীর যোগাযোগ তৈরি করতে হবে।
জাহিরা বলেন, আমার সন্তান মনে করে আপেল বা স্ট্রবেরি সুপারমার্কেটেই তৈরি হয়। কিন্তু তাকে এখনই সময় এসব বোঝানোর। প্রকৃতি, ফসল এবং এর এসব উপকারী পতঙ্গের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে ধারণা দিতে হবে তাদের। তারা যা প্রতিদিন খাচ্ছে, সেই বার্গার থেকে চকোলেট সবকিছু উৎপাদনেই মৌমাছির কোনো না কোনো ভূমিকা রয়েছে। তাই খাদ্যের জোগান পেতে মৌমাছি বাঁচাতে হবে।
মৌমাছির জগতটা কিছু খুবই গোছালো। একটি মৌচাকের প্রতিটা কোষের দেখভাল করে রানি মৌমাছি। অন্যান্য কর্মী মৌমাছির থেকে দারুণ সহায়তা পায় রানি। মধু খেয়ে এবং ডিম পাড়ে রানি। এ বিষয়ে যাবতীয় প্রয়োজন মেটায় অন্য মৌমাছিরা।
জোসেলিন ব্যাখ্যা করে বলেন, রানি মারা গেলে মৌচাকের মৌমাছিরা একজোট হয়ে এমন একটি শূককীট নির্বাচন করে যা পরবর্তিতে রানি হবে।
নির্দিষ্ট বয়সে রানি কোনো পুরুষ মৌমাছির সঙ্গে মিলিত হওয়ার পর থেকে তার বাকি জীবন কাটে ডিম পেড়ে। প্রতিদিন রানি ২ হাজার পর্যন্ত ডিম দিতে সক্ষম। গোটা জীবনে সে ১০ লাখের মতো ডিম পাড়তে সক্ষম।
একটি রানিকে ডিম পাড়ার সময় এবং পরিবেশ দিতে হবে। তবেই মৌমাছিরা বেঁচে থাকবে এবং এদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে। মানুষকে সচেতন করতে হবে। মৌমাছির বাসস্থান ধ্বংস করা যাবে না। বরং তাদের টিকে থাকার ব্যবস্থা করতে হবে। এই সচেতনতা সবার মাঝে ছড়িয়ে দিতেই মাঠে নেমেছেন জোসেলিন এবং জাহিরা। যদি কোনো মৌচাক সরাতেই হয়, তো খবর দিলে তারাই নিরাপদে ওটা সরিয়ে নিয়ে যাবেন। কিন্তু কেউ যেন ধ্বংস না করেন, একটাই অনুরোধ তাদের।