মস্তিষ্কে চোট লাগলে খেতেই হবে এই খাবারগুলি! নাহলে কিন্তু!
[kodex_post_like_buttons]
কলকাতা টাইমস :
একটি গবেষণা পত্র প্রকাশিত হয়েছে, যাতে এমনটা দাবি করা হয়েছে যে মাথায় হলকা হোক কী মারাত্মক, যে কোনও ধরনের চোট লাগলেই বয়স্কালে স্মৃতিলোপ বা ডিমেনশিয়ার মতো ভয়ঙ্কর রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বৃদ্ধি পায়। তাই একটা বয়সের পর যদি জড়ভূতের মতো জীবন কাটাতে না চান, তাহলে এই প্রবন্ধে আলোচিত খাবারগুলি খেতেই হবে। কারণ একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে এই খাবারগুলি ব্রেন পাওয়ার বাড়াতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। আর যেমনটা আপনাদের সকলেই জানা আছে যে একবার ব্রেন পাওয়ার বেড়ে গেলে যে শুধু বুদ্ধির বিকাশ ঘঠে, এমন নয়, সেই সঙ্গে স্মৃতিশক্তি এবং মনযোগ ক্ষমতাও বাড়াতে শুরু করে।
প্রসঙ্গত, সুইডিশ বিজ্ঞানীদের করা এই গবেষণায় দেখা গেছে মাথায় চোট লাগার এক বছরের মধ্যেই ধীরে ধীরে স্মৃতিশক্তি কমতে শুরু করে। আর চোট যদি গুরুতর হয়, তাহলে তো কথাই নেই! আসলে মাতায় চোট লাগালে সামান্য হলেও ব্রেন সেল ক্ষতিগ্রস্থ হয়, আর এমনটা হওয়া মাত্র মস্তিষ্কের অন্দরে বিশেষ কিছু কেমিকেলের ক্ষরণ কমে যেতে শুরু করে, যার প্রভাবে স্মৃতিলোপের মতো ঘটনা ঘটে থাকে। এবার বুঝেছেন তো এই প্রবন্ধে আলোচিত খাবারগুলি খাওয়া কতটাই না জরুরি। তবে এক্ষেত্রে আরেকটি বিষয়ও মাথায় রাখতে হবে।
কী সেই বিষয়? একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে সাধারণ মানুষ মস্তিষ্কের মাত্র ১০ শতাংশই ব্যবহার করে থাকে। আর বাকি ৯০ শতাংশ? সেটা আমৃত্যু অব্যবহৃতই থেকে যায়। সবথেকে মজার বিষয় হল মাত্র ১০ শতাংশ ব্রেনকে কাজে লাগিয়েই যদি আমরা মঙ্গল পর্যন্ত পৌঁছে যেতে পারি। তাহলে একবার ভাবুন, ১৫ শতাংশ বা তার বেশি ব্যবহার করতে পারলে কী কান্ডটাই না ঘটতো! এখন প্রশ্ন হল মস্তিষ্কের কতটা অংশ কেউ ব্যবহার করতে পারবে, তা কিসের উপর নির্ভর করে? অনেক কিছুর উপরেই বিষয়টি নির্ভর করে।
তবে একমাত্র আইনস্টাইন ছাড়া এখনও পর্যন্ত কেউই সেভাবে তার ব্রেনের ১০ শতাংশের বেশি কাজে লাগাতে পারেননি। তবে মস্তিষ্কের এই ক্ষমতা বাড়ানো সম্ভব! কীভাবে? এক্ষেত্রেও এই প্রবন্ধে আলোচিত খাবারগুলি সাহায্য় করতে পারে। তাই কী সিদ্ধান্ত নিলেন? এই খাবারগুলি খেয়ে আইনস্টাইনের মতো না হলেও বাকিদের থেকে কিছুটা বেশি মাত্রায় বুদ্ধিমান হয়ে উঠতে চান তো? নাকি…! সাধারণত যে যে খাবার এক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে, সেগুলি হল…
১. ব্রকলি: সালফারাফেন নামক একটি উপাদানে ভরপুর এই সবজিটি খাওয়া মাত্র শরীরে উপস্থিত ক্ষতিকর উপাদান বেরিয়ে যেতে শুরু করে। ফলে ব্রেন সেলের কোনও ধরনের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা একেবারে কমে যায়।
২. আখরোট: এতে রয়েছে প্রচুর মাত্রা ভিটামিন, ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড, কপার, ম্যাগনেসিয়াম এবং ফাইবার নানাভাবে মস্তিষ্কের ক্ষমতা বাড়াতে কাজে লাগে। সেই সঙ্গে দেহে উপকারি ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যাও বাড়ায়। ফলে সবদিক থেকে মস্তিষ্কের উপকার হয়।
৩. হলুদ: একেবারেই ঠিক শুনেছেন! এই প্রকৃতিক উপাদানটি ব্রেন পাওয়ার বাড়াতে দারুন কাজে আসে। আসলে হলুদে উপস্থিত বেশি কিছু কার্যকরি উপাদান একদিকে যেমন মস্তিষ্কের অন্দরে প্রদাহ কমায়, তেমনি অন্যদিকে বুদ্ধির বিকাশেও সাহায্য করে। প্রসঙ্গত, সম্প্রতি প্রায় ৩০০০ বছর পুরানো একটি আয়ুর্বেদিক পুঁথির খোঁজ মিলেছে, তাতেও ব্রেন পাওয়ার বাড়াতে হলুদ কিভাবে কাজে আসে, সে বিষয়টির উল্লেখ রয়েছে।
৪. মাছ: বেশি তেল রয়েছে এমন মাছে ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড নামে একটি উপাদান থাকে, যা মস্তিষ্কের ক্ষমতা বৃদ্ধিতে দারুন কাজে আসে। আসলে এই উপাদনটি ব্রেন সেলের ক্ষমতা বাড়ানোর পাশাপাশি মস্তিষ্কের যে অংশটা স্মৃতিশক্তির আঁধার, সেই অংশের ক্ষমতা বাড়াতেও সাহায্য করে।
৫. পালং শাক: আগা-গোড়াই বাঙালিদের এই শাকটির প্রতি একটু আলাদা রকমের একটা দুর্বলতা রয়েছে। যে কারণে দেখবেন বুদ্ধির গোড়ায় ধোঁয়া দেওয়ার প্রয়োজন পরে এমন কাজে বাঙালিরা সবসমই এগিয়ে। আর কেন থাকবে নাই বা বলুন! পালং শাকে উপস্থিত অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, ভিটামিন কে, ফলেট এবং লুটেইন ব্রেনের কর্মক্ষমতা বাড়াতে দারুন কাজে আসে। ফলে নিয়মিত এই শাকটি খেলে স্বাভাবিক ভাবেই ব্রেন পাওয়ার চোখ পরার মতো বৃদ্ধি পায়।
৬. অলিভ অয়েল: দক্ষিন এশিয়ায় সাধারণত রান্না করতে অলিভ ওয়েল ব্যবহার করা হয় না। কিন্তু যদি করা হয়, তাহলে দারুন উপকার মিলতে পারে। আসলে এই তেলটিতে রয়েছে পলিফনল নামে একটি উপাদান, যা ব্রেন পাওয়ার বাড়াতে দারুন কাজে আসে। প্রসঙ্গত, একাধিক কেস স্টাডি চলাকালীন বিজ্ঞানীরা লক্ষ করেছেন পলিফেনল নামক উপাদানটি নার্ভ সেলের কর্মক্ষমতা বাড়য়ে দেয়। ফলে মস্তিষ্কের ক্ষমতা বাড়তে শুরু করে।
৭. শতমূলী: এই প্রকৃতিক উপাদনটিতে রয়েছে প্রচুর মাত্রায় ফাইবার এবং এমন কিছু উপাদান, যা শরীরে মস্তিষ্কের উপকারি লাগে এমন ব্য়াকটেরিয়ার মাত্রা বৃদ্ধি করে। সেই সঙ্গে এতে উপস্থিত ফলেট এবং অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটারি উপাদানও এক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।
৮. নারকেল তেল: চুলের পরিচর্যায় কাজে লাগানো হলেও দক্ষিণ ভারতীয় ছাড়া আর কেউ সাধারণত নারকেলে তেলকে রান্নার কাজে লাগান না। কিন্তু যদি লাগাতে পারেন, তাহলে কেল্লাফতে! কারণ নারকেল তেলে উপস্থিত নিউরনের ক্ষমতা বাড়য়ে তোলে। সেই সঙ্গে শরীরে উপস্থিত নানাবিধ ক্ষতিকারক উপাদান যাতে মস্তিষ্কের অন্দরে কোনও ক্ষতি সাধন করতে না পারে, সেদিকেও খেয়াল রাখে।
প্রসঙ্গত, নিউরনের ক্ষমতা বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে মস্তিষ্কের মধ্যে তথ্যের আদান-প্রদান আরও দ্রুত গতিতে হতে থাকে। ফলে যে কোনও কাজ নিমেষে সম্পন্ন করতে কোনও কষ্টই করতে হয় না।
৯. জাম: এই ফলটিতে উপস্থতি শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ব্রেন সেল যাতে শুকিয়ে না যায় সেদিকে খেয়াল রাখে। সেই সঙ্গে ব্রেনের অন্দরে প্রদাহ কমানোর মধ্যে দিয়ে নানাবিধ ব্রেন ডিজিজকে দূরে রাখতেও বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। প্রসঙ্গত, যাদের পরিবারে অ্যালঝাইমারস বা ডিমেনশিয়ার মতো মস্তিষ্কের রোগের ইতিহাস রয়েছে, তারা যদি প্রতিদিন জাম খেতে পারেন, তাহলে দারুন উপকার মেলে।
১০.ডিম: এতে রয়েছে প্রচুর মাত্রায় কোলিন এবং উপকারি কোলেস্টেরল, যা নিউরনের ক্ষমতা বৃদ্ধির মধ্যে দিয়ে সার্বিকভাবে ব্রেন পাওয়া বাড়াতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। এখানেই শেষ নয়, একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে প্রতিদিন ডিম খেলে দেহে বিশেষ এক ধরনের অ্যান্টি-অক্সিডেন্টের মাত্রা বৃদ্ধি পেতে শুরু করে, যা ব্রেন সেলের যাতে কোনও ভাবে ক্ষতি না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখে। ফলে নানাবিধ ব্রেন ডিজিজে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা অনেকাংশে হ্রাস পায়।