September 24, 2024     Select Language
৭কাহন Editor Choice Bengali KT Popular

এদের প্রেম শুনলে ভুলে যাবেন লায়লা-মজনুকেও 

[kodex_post_like_buttons]
কলকাতা টাইমস :

ছেলেটির বয়স ছিল তখন মাত্র ছয় বছর। আর মেয়েটির ষোলো। সদ্যবিবাহিত সেই মেয়েটি পালকিতে চড়ে চলেছে স্বামীর ঘরে। দুজনের প্রথম দেখা তখনই।

১৯৪২ সালের জুন মাস। চীনের একটি ছোট্ট গ্রাম গাওতান। স্থানীয়দের বিশ্বাস ছিল, ছোট ছেলেদের দুধের দাঁত পড়ে যাওয়ার পরে, কোনও নববধূ তার মুখের ভিতরে হাত দিলে, ছেলেটির ভাগ্য ভাল হবে।

ছয় বছরের লিউ গুয়োজিয়াং-এর সঙ্গেও এমনই ঘটে সেদিন। কিন্তু পালকিতে বসে থাকা নতুন বউ জু ছাওকিং, লিউয়ের মুখে হাত দিতে গেলে, দুষ্টু ছেলেটি তার আঙুল কামড়ে দেয়। স্বাভাবিকভাবেই, রেগে গিয়ে দোলার পরদা সরিয়ে ছেলেটিতে দেখতে চায় জু ছাওকিং। ছোট্ট ছেলেটির সামনে ফুটে ওঠে সুন্দর একটি মুখ।

পরবর্তীকালে, লিউকে বিয়ের কথা বললেই সে বলতো, তার ওই পালকিতে থাকা মেয়েটির মতোই বউ চাই।

লিউ-এর গ্রামের সব থেকে ধনী ব্যক্তির সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল জু-এর। এবং দাম্পত্যের মাত্র ১০ বছর পরেই স্বামীহারা হয় জু। চার সন্তান নিয়ে তখন তাঁর অকুলপাথার অবস্থা। তখনই পাশে এসে দাঁড়ায় সদ্যযুবা ১৮ বছরের লিউ। জু ও তার সন্তানদের জন্য নানা কাজ করে দিত লিউ।

এমন করেই কেটে যায় প্রায় তিনটি বছর। এবং মিষ্টি এক সম্পর্ক তৈরি হয় জু ও লিউয়ের মধ্যে। কিন্তু, সমাজ তা মেনে নিতে পারেনি। তাই একদিন সব কিছু পিছনে ফেলে ২৯ বছরের জু ও তার চার সন্তানকে নিয়ে গ্রাম ছেড়ে চলে যায় ২১ বছরের লিউ।

পাহাড়ের ওপর একটি খড়ের ঘর তৈরি করে বসবাস শুরু করে প্রেমিক যুগল। প্রথম কয়েক বছর খুব কষ্ট করে জীবনযাপন করলেও, আস্তে আস্তে নিজেদের সংসার গুছিয়ে নেয় জু-লিউ।

প্রথম স্বামীর চার সন্তানের মধ্যে ছোট সন্তানের মৃত্যু হলেও, জুয়ের আরও চার সন্তান হয়। বড় হয়ে ছেলেমেয়েরা একে একে মা-বাবার পাহাড়ের বাড়ি ছেড়ে জনপদে সমতলে বসবাস শুরু করলেও, লিউ-জু তাঁদের ‘ভালবাসা’তেই কাটিয়ে দেয় সারা জীবন।

২০০১ সালে এক অভিযাত্রী দল হঠাৎই খোঁজ পায় লিউ-জুয়ের। পাহাড়ের গায়ে ধাপে ধাপে সিঁড়ি দেখে সন্দেহ হয়। তা বেয়ে উঠেই তাঁরা দেখা পায় বৃদ্ধ দম্পতির। এবং পৃথিবী জানতে পারে এক অসাধারণ প্রেমকাহিনির কথা।

পিচ্ছিল পথে ওঠা-নামা করতে যাতে জু-এর কোনও অসুবিধা না হয়, সেই জন্য লিউ ৫০ বছর ধরে পাহাড়ের গায়ে তৈরি করেছে ৬০০০ ধাপের সিঁড়ি!

কোনও যন্ত্রপাতি ছাড়াই, শুধুমাত্র ছেনি দিয়ে এই কীর্তি স্থাপন করে সে। চীনের এক সাপ্তাহিক পত্রিকা, ‘চাইনিজ উইমেন উইকলি’-র প্রতিবেদন অনুযায়ী, ভালবাসার ওই সিঁড়ি তৈরি করতে ৩৬টি স্টিলের ছেনি ভাঙে লিউ।

২০০৬ সালে হঠাতই মৃত্যু হয় লিউয়ের। তাদের এক সন্তান লিউ মিংশেং জানান, প্রতিদিনের কাজ সেরে ফেরার পরেই মারা যায় লিউ। মা-বাবার ভালবাসা এতটাই গভীর ছিল যে, মৃত্যুর পরেও তাদের মুঠি ছাড়াতে বেশ বেগ পেতে হয়েছিল। লিউয়ের বয়স তখন ৭২ বছর।

২০১২ সালের অক্টোবরে চলে যায় জু, প্রায় ৮৮ বছর বয়সে। কিন্তু, স্বামী ছাড়া যে কয়েকদিন বেঁচে ছিল জু, প্রতিক্ষণে একই কথা আউড়ে গিয়েছেন সে- আমাকে রেখে তুমি আগে চলে গেলে, তোমাকে ছেড়ে বাঁচব কী করে?

লিউ-জু চলে গিয়েছে পৃথিবী ছেড়ে। কিন্তু রয়ে গিয়েছে তাদের প্রেমের সাক্ষী- ৬০০০ ধাপের ‘ভালবাসার সিঁড়ি’।

প্রসঙ্গত, ২০০৬ সালে চীনের প্রথম ১০টি প্রেম কাহিনির মধ্যে নির্বাচিত হয়েছিল জু-লিউয়ের কাহিনি। এবং, চীনের সব থেকে জনপ্রিয় সার্চ ইঞ্জিন ‘বাইডু’তে ‘মোস্ট সার্চড টার্ম’ ছিল ‘ল্যাডার অফ লাভ’ বা ‘ভালবাসার সিঁড়ি’।

Related Posts

Leave a Reply