এই বেদনাদায়ক সত্য জানলে ভালোবাসার নামেও ভয় পাবেন
কলকাতা টাইমস :
যুগে যুগে বহু চিন্তাবিদ ভালোবাসার অনুভূতি নিয়ে গবেষণা করেছেন। প্লেটো থেকে শেক্সপিয়ার, এবং পপ স্টার টেইলস সুইফট পর্যন্ত ভালোবাসা নিয়ে করেছেন গবেষণা। তাদের চিন্তায় বিভিন্নভাবে এই রহস্যময় আবেগ আরো বেশি রহস্যময়তা পেয়েছে। ভালোবাসার যত বেদনাদায়ক সত্যের কথা তুলে ধরা হয়েছে ইনডিপেনডেন্টের প্রতিবেদনে।
চিকিৎসাবিজ্ঞান আবার ভালোবাসা অনুভূতিতে দেহজুড়ে ছড়িয়ে পড়া রাসায়নিক পদার্থের সন্ধান করেছে। তবে যে যাই বলুক না কেন, প্রেম-ভালোবাসা যে দারুণ জটিল ও কুটিল তা বলার অপেক্ষা রাখে না। সোশাল মিডিয়া ‘কুয়োরা’তে জানতে চাওয়া হয়, ভালোবাসার সবচেয়ে যন্ত্রণাদায়ক সত্যগুলো কি? এর জবাব দিয়েছে বিশেষজ্ঞরা।
ভোগান্তি :
ফ্রেঞ্চ সাহিত্যিক আনাইস নিন বলেছিলেন, ভালোবাসা মনে যায়। কারণ একে আবারো আগের মতো করে তোলার উৎস সম্পর্কে জানি না আমরা। ভালোবাসার মৃত্যু ঘটে চোখ থেকেও না দেখা, ভুল আর প্রতারণার কারণে। আবার ১৯৭৫ সালের উডি অ্যালেনের ‘লাভ অ্যান্ড ডেথ’ চলচ্চিত্রের ডায়ালগ থেকেও একজন লিখেছেন, ভালোবাসা মানেই ভোগান্তির শিকার হওয়া। কাজেই এ অনুভূতির আরেক দিকে রয়েছে দারুণ ভোগান্তি যা একমাত্র ভুক্তভোগীরাই জানেন।
আত্মবিসর্জন
এক কুয়োরা সদস্য অ্যাডাম তাহা লিখেছেন, ভালোবাসা বিরক্তিকর। কারণ এটা পছন্দ করে নেওয়ার কোনো বিষয় নয়। মানুষ প্রেমে পড়ে যায়। মানুষের মাথায় একটা চিন্তা কাজ করে। প্রেমিক বা প্রমিকা কেমন হবে, তার তখনই কেউ তেমনি কেউ একজন সামনে চলে আসেন। আত্মবিসর্জনের বিষয়টি তখনই আসে, যখন কাউকে ভালোবাসছেন, কিন্তু তিনি পাল্টা ভালোবাসা দিচ্ছেন না। এটা একতরফা হলেই আত্মবিসর্জন দিতে হবে।
আরেক কুয়োরা সদস্য ডেভিড ফারের মতে, অবচেতন মনে আত্মবিসর্জন দেওয়াটাকে সবচেয়ে বেদনাদায়ক বলে মনে হয়। এটাই ভালোবাসার সবচেয়ে অপ্রিয় সত্য বলে ধরে নেওয়া যায়। এটা এমন এক অনুভূতি যখন আপনি প্রিয় মানুষটির জন্যে নিজের জীবন দিতে ইচ্ছুক। আত্মরক্ষা এ ক্ষেত্রে তালিকার দ্বিতীয়তে থাকে।
জিন-ফ্রাঙ্ক চিউজি লিখেছেন, জীবনের নূন্যতম স্বাধীনতা বিসর্জন দেওয়াটাও বিরক্তিকর। যখন ভালোবাসায় জড়াচ্ছেন তখন আপনাকে তা করতেই হচ্ছে। আপনার তা ভালো লাগুক বা নাই লাগুক। এটা আত্মবিসর্জন। অথচ ভালোবাসা শর্তহীন নয়। এমনকি সন্তানের প্রতি বাবা-মায়ের ভালোবাসাও শর্তাধীন বলে তিনি লিখেছেন।
২০০৯ সালে আমেরিকার ইমোরি ইউনিভার্সিটির ইয়ের্কেস ন্যাশনাল প্রাইমেট রিসার্চ সেন্টারের গবেষক ল্যারি ইয়ং তার গবেষণাপত্রে লিখেছেন, দেহ-মস্তিষ্কের রাসায়নিক ক্রিয়া-বিক্রিয়ার ফলাফল ভালোবাসা। ‘নেচার’ জার্নালে প্রকাশিত ওই গবেষণাপত্রে তিনি বিভিন্ন পরীক্ষার কথা তুলে ধরেন। ভালোবাসা ক্রমাগত ঘটে চলা জৈবরসায়নের এক চক্র।
চীনের ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনলজির গবেষক দল সম্প্রতি নারী-পুরুষের মস্তিষ্কে স্ক্যানিং করেন। এর ফলাফল তুলনা করা হয় সেই সকল মানুষের সঙ্গে যারা কখনো প্রেমে পড়েননি। গবেষণায় দেখা যায়, এ অনুভূতি মস্তিষ্কের এক ডজন অঞ্চলের সঙ্গে যুক্ত। এসব অংশ উদ্দীপনা, আবেগ এবং সামাজিক কার্যকলাপের সঙ্গে সক্রিয় হয়।
তবে ভালোবাসার এই যে যন্ত্রণাদায়ক অনুভূতি, এসব থেকে মুক্তি পেতে হয়তো চিকিৎসা রয়েছে। তবে তা এখনো বিকাল লাভ করেনি।