সুস্থ থাকতে চাইলে বাড়ি থেকেএখুনি বিদায় করুন ১০টি জিনিস
সুস্থ থাকাটাই এমন ভাগ্য মানা হচ্ছে। এমন বিভিন্ন ক্যামিকেল এবং দূষণের কারণে সুস্থ থাকাই দায়। তারপরেও আজকাল অনেকে অনেক কিছুই করি। যেমন মশলাদার ও ভাজা খাবারের বদলে স্বাস্থ্যকর খাবার খাই‚ জিমে যাই‚ যোগা করি‚ তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়ার চেষ্টা করি‚ ইত্যাদি। কিন্তু জানেন কি আমাদের বাড়িতেই এমন অনেক অস্বাস্থ্যকর জিনিস আছে যার থেকে আমাদের শরীর খারাপ হতে পারে। তাই সবার আগে ওই অস্বাস্থ্যকর জিনিসগুলোকে বাড়ি থেকে বিদায় করুন।
পুরনো টুথব্রাশ: বার বার ব্যবহারের ফলে টুথব্রাশের ব্রিসেলস নষ্ট হয়ে যায় । পুরনো টুথব্রাশ দিয়ে দাঁত মাজলে জমে থাকা প্লাক এবং Calculus পরিষ্কার হয় না। তাই দাঁতের ক্ষতি এড়াতে পুরনো দাঁত মাজার ব্রাশ ফেলে দিন । প্রতি তিন মাস অন্তর ব্রাশ পাল্টান।
বহু পুরনো রানিং শ্যু: দৌড়ানো‚ জগিং বা হাঁটা শরীরের জন্য ভালো কিন্তু ক্ষয়ে যাওয়া জুতো পরে তা যদি করেন তাহলে তা আপনার পায়ের জন্য খুবই ক্ষতিকারক। ক্ষয়ে যাওয়া জুতো কম প্রেসার অ্যাবসর্ব করে ফলে পায়ের মাসল‚ হাড়ের ওপর প্রেসার পড়ে। চোট লাগার সম্ভাবনাও অনেকটা বেড়ে যায়।
খাবার রাখার প্লাস্টিকের সরঞ্জাম ও বোতল: যদি হেলদি থাকতে চান তাহলে ভুলেও প্লাস্টিকের বোতল থেকে জল খাবেন না বা প্লাস্টিকের সরঞ্জামে খাবার জিনিস রাখবেন না। প্লাস্টিকের জিনিসপত্র ব্যবহার করলে Bisphenol A (BPA), Bisphenol S (BPS) এবং Phthalates-এর মতো স্মূহ ক্ষতিকারক পদার্থের সঙ্গে এক্সপোজারের সম্ভবনা বৃদ্ধি পায়। BPA এক ধরণের কম্পাউন্ড যা পলিকার্বোনেট এবং প্লাস্টিক তৈরি করতে কাজে লাগে। এটা আমাদের শরীরের জন্য খুবই ক্ষতিকর।
অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল সাবান ও ডিটারজেন্ট: আপনি যদি নিয়মিত অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল সাবান ও ডিটারজেন্ট কিনে থাকেন এইভেবে যে এগুলো আপনার শরীরের জন্য ভালো‚ তাহলে আপনি ভুল ভাবছেন। এই হ্যাবিট তাড়াতাড়ি পাল্টে ফেলুন। অ্যান্টিব্যাক্টরিয়াল সাবান ও ডিটারজেন্টে এক ধরণের কেমিক্যাল থাকে যার নাম ট্রাইক্লোসান‚ যা খুবই ক্ষতিকারক । এছাড়াও এতে ক্ষতিকারক Butoxyethanol, BPA, D-limonene, Dyes, Parabens, Phthalates এবং Chloride থাকে ।
রুম ফ্রেশনার: রুম ফ্রেশনার বা এয়ার ফ্রেশনারে Phthalates বলে এক ধরণের কেমিক্যাল থাকে যার সংস্পর্শে এলে ক্যান্সার বা অন্য শারীরিক অসুস্থতা হতে পারে। যদি রুম ফ্রেশনার ব্যবহার করতেই হয় তাহলে নিজেই তা ঘরে তৈরি করে নিন। এটা তৈরি করতে একটা বড় পাত্রে জল ভরুন। এতে লেবু‚ লেবুর খোসা বাটা‚ ল্যাভেন্ডার‚ দারচিনি‚ মিন্ট‚ রোসমেরী‚ তেজপাতা এবং স্টার অ্যানিস সব একসঙ্গে মিশিয়ে জল ফুটিয়ে নিন। দেখবেন সুন্দর সুগন্ধে ভরে উঠবে আপনার বাড়ি।
বাসন মাজার স্পঞ্জ: প্রতি দু‘সপ্তাহ অন্তর বাসন মাজার স্পঞ্জ পাল্টে ফেলুন। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন একটা স্পঞ্জের প্রতি বর্গক্ষেত্রে ১০ মিলিয়ান ব্যাকটেরিয়া থাকে। স্পঞ্জের বদলে সুতির কাপড় ব্যবহার করতে পারেন। যেহেতু কাপড় স্পঞ্জের থেকে পাতলা হয় তাই তাড়াতাড়ি শুকিয়ে যায়। ফলে ব্যাকটেরিয়া কম জন্মায়। তবে কাপড় ব্যবহার করলেও তা রোজ ভালো করে সাবান দিয়ে ধুতে হবে।
পুরনো ননস্টিক পাত্র: এই ধরণের পাত্রে রান্না করতে সুবিধা হয় ঠিকই কিন্তু একটা সময়ের পর অবশ্যই পাল্টে ফেলুন। নিয়মিত ব্যবহারের ফলে নন স্টিক পাত্রের ওপরের টেফলন কোটিং উঠে যায়। এই ধরণের বাসনে যখন রান্না করা হয় তখন টক্সিক গ্যাস এবং পার্টিকল রান্নাঘরের মধ্যে মিশে যায়। এর থেকে ফ্লু এর সম্ভাবনা অনেকটা বেড়ে যায়।
কন্ট্যাক্ট লেন্স রাখার পাত্র: এমনিতে কন্ট্যাক্ট লেন্স চোখের জন্য সেফ এবং আরামদায়ক। কিন্তু একে যদি নিয়মিত পরিষ্কার না করেন তাহলে চোখের বিভিন্ন অসুখ হতে পারে এমনকী দৃষ্টিশক্তি অবধি হারাতে পারেন। কন্ট্যাক্ট লেন্স ব্যবহার করার সময় আমরা অনেকেই কন্ট্যাক্ট লেন্স কেস পরিষ্কার করি না। তাই অপরিছন্ন কেস চোখের ইনফেকশনের প্রাথমিক কারণ। এটা এড়াতে সব সময় সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে কন্ট্যাক্ট লেন্স ধরুন । নিয়মিত কেস পরিষ্কার করুন আর ভালো করে শুকিয়ে রাখুন ।এছাড়াও অন্য ম্যানুফ্যাকচারের ডিসইনফেক্টিং সলিউশন ব্যবহার করবেন না । আর ক‘দিন অন্তর কেস পাল্টে ফেলুন ।
কেমিক্যাল এনরিচড কসমেটিকস: শ্যাম্পু হোক বা লিপস্টিক বা নেল পলিশ বা সানস্ক্রিন‚ পুরুষ ও মহিলারা যে সব কসমেটিকস ব্যবহার করে তাতে বহু রকমের ক্ষতিকারক কেমিক্যাল থাকে। অনেক কসমেটিকসে যেমন ফাউন্ডেশন‚ পাউডার‚ ব্লাসার‚ মাস্কারা‚ আই লাইনার‚ আই শ্যাডো এবং লিপস্টিকে Lead, Beryllium, Thallium, Cadmium, Arsenic ইত্যাদি থাকে যা খুবই ক্ষতিকারক। কসমেটিকস কেনার আগে ভালো করে দেখে নিন। যাতে মিনারেল বেসড পিগমেন্টস এবং প্রাকৃতিক তেল আছে সেই ধরণের জিনিস ব্যবহার করুন। যে সাবান ও শ্যাম্পুতে Triclosan থাকে সেগুলো এড়িয়ে চলুন।
স্ট্রেচড আউট ব্রা: সময়ের সঙ্গে এবং নিয়মিত ব্যবহারের ফলে অন্তর্বাস একসময় লুজ হয়ে যায়। এটা কিন্তু শরীরের জন্য খুব ক্ষতিকারক। প্রতি ছ্মাস অন্তর অন্তর্বাস পরিবর্তন করতে হবে। এই ধরণের ব্রা ব্যবহার করার ফলে শ্যাগিং ব্রেস্ট‚ গলায় ও পিঠে ব্যথা হওয়ার সম্ভাবনা অনেকটা বেড়ে যায় ।
এছাড়াও মেনে চলুন নির্দেশগুলো:
পুরনো জামাকাপড় জমিয়ে না রেখে তা ডোনেট করে দিন। ফ্রিজে রাখা দুদিনের বেশি বাসি খাবার খাবেন না। ফ্রিজে যদি কোল্ডড্রিংকসের বোতল থাকে তা সত্ত্বর ফেলে দিন। এমনকী ডায়েট সোডাও সমান ক্ষতিকারক।
ক্ষতিকারক কেমিক্যাল দিয়ে তৈরি ক্লিনিং প্রডাক্ট ব্যবহার না করে বেকিং সোডা‚ সাবান‚ ভিনিগার‚ লেবু দিয়ে জিনিসপত্র পরিষ্কার করুন।
যে সব ওষুধ এক্সপায়ার হয়ে গেছে তা ফেলে দিন।