November 22, 2024     Select Language
৭কাহন Editor Choice Bengali KT Popular শারীরিক

আমি মরে গেছি! আমাকে চিতায় তুলছো না কেন?

[kodex_post_like_buttons]

কলকাতা টাইমস :

মৃত্যু পরবর্তী সময়ে পারিপার্শ্বিক অবস্থা জানার এক ধরনের ইচ্ছে আমাদের সবার মনেই আছে। মৃত্যুর পর কে কে কাঁদবে, কে কে মিস করবে, কে আপনাকে নিয়ে কি বলবে, অবচেতন মনে আমরা অনেকসময় এসব ভাবনাও ভেবে থাকি।

আমি যদি বলি, এসব সত্যি হতে পারে! খুব একটা অবাক হবেন? হ্যাঁ, তবে সেজন্য আপনাকে কোটার্ড সিনড্রোমে আক্রান্ত হতে হবে।

কোটার্ড সিনড্রোম হচ্ছে এক ধরণের মানসিক সমস্যা, যেখানে রোগী মনে করে সে বেঁচে নেই, তার শরীরটা কেবল পড়ে আছে, তার আত্মা তাকে ছেড়ে চলে গেছে অনেক আগেই।  বিষণ্ণতা মানুষের মনে যখন তার প্রভাব পুরোপুরি বিস্তার করে ফেলে, মানুষ এক সময় নিজেকে ছোট ভাবতে থাকে, ঘৃণা করতে থাকে, নিজেকে হেয় প্রতিপন্ন মনে করে, নিজেকে অসহায়, পৃথিবীতে তার থাকা না থাকায় কিছুই যায় আসে না এমন ভাবনা তার মধ্যে চলে আসে। এরকম নিজের কোনোকিছুর অস্তিত্ব নেই ভাবতে ভাবতে সে একসময় ভাবতে শুরু করে, তার নিজেরই কোনো অস্তিত্ব নেই!

কোটার্ড সিনড্রোমের মতো বিরল রোগের সর্বপ্রথম ব্যাখ্যা করেন ড. জুলিয়াস কোটার্ড ১৮৮২ সালে। তিনি বলেন, ‘কোটার্ড সিনড্রোম হচ্ছে এমন এক মানসিক সমস্যা যেখানে রোগী ডিল্যুশনে ভোগে নিজের শরীরের অভ্যন্তরীণ অঙ্গ, রক্ত, শরীরের অংশ কিংবা নিজের আত্মারও অস্তিত্ব খুঁজে পায় না।’

একটি কেস স্টাডিতে পাওয়া যায় ‘এমএস ল’ নামের একজন ফিলিপাইনি মহিলা নিজেকে মৃত দাবী করে এবং তাকে মৃতদের সাথে মর্গে রাখার দাবি জানায় যাতে সে তার মতো মৃত মানুষদের সাথে থাকতে পারে। তার পরিবার কি করবে খুঁজে না পেয়ে জরুরী ৯৯৯ নাম্বারে কল করে তাকে মানসিক হাসপাতালে পাঠায়। 

মাসিক স্বাস্থ্য ইউনিটের কাউন্সিলিংয়ে সে জানায়, তার ভয়টা শুরু হয় যখন তার বাড়ি কিছু লোক পুড়িয়ে ফেলে যেখানে সে তার ভাই এবং কাজিনের সাথে বাস করতো। এর পাশাপাশি একাকীত্ব, আবেগহীনতা, নিম্ন লেভেলের শারিরীক সক্ষমতাসহ অনেক কিছুই তাকে প্রভাবিত করেছে।

তিনি আরো জানান, তিনি সেজন্য আঠারো বছর বয়স থেকে এন্টিডিপ্রেসিভ ঔষুধ খেতে শুরু করে, কিন্তু গতমাসে ফিলিপাইন থেকে আমেরিকাতে চলে আসার প্রাক্কালে তিনি সে ঔষুধের নাম ভুলে যান, এবং এরপর থেকে সমস্যার শুরু।

কেস স্টাডিতে আরো জানা যায়, মহিলা বেশিরভাগ সময় বিছানাতেই কাটান, এবং ব্যক্তিগত পছন্দ-অপছন্দকে বেড়ে উঠতে দেন না।

চিকিৎসা শুরু হলে ভদ্রমহিলা পর্যাপ্ত পরিমাণ সাড়া দিচ্ছিলেন না। এই অসহযোগী মনোভাবের ফলে পরিবারের সহায়তায় তাকে আদালতে নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তারপর পর্যাপ্ত ট্রিটমেন্ট, এরকম রোগীর স্বাভাবিক মানসিক চিকিৎসার বাইরে ইলেক্ট্রো কনভালসিভ থেরাপির প্রয়োগ এবং পরিবারের সহায়তা ও উদ্বুদ্ধকরণে তিনি ধীরে ধীরে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরতে শুরু করেন। তিনি একসময় ভবিষ্যতের কথা ভাবতে শুরু করেন এবং মানসিক স্বাস্থ্য উন্নয়নে আগ্রহ প্রকাশ করেন।

প্রফেসর ডা. মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম তার ব্যক্তিগত ওয়েবসাইটে মিটফোর্ড হাসপাতালের কাজ করার সময়ের ‘কোটার্ড সিনড্রোমে’ আক্রান্ত এক রোগীর কথা উল্লেখ করেন।

একজন বৃদ্ধ হিন্দু লোক, সে মনে করে সে মারা গেছে, তার দেহ চিতায় রয়েছে এবং ডাক্তাররা তার আত্মাকে হাসপাতালে বেঁধে রেখেছেন বলে দাবি করতে থাকে। পরবর্তীতে পর্যাপ্ত চিকিৎসা পেয়ে সেই বৃদ্ধও সুস্থ হয়ে উঠেন। 

আমরা সবাই বাঁচতে চাই। শুধু বাঁচতে না, বাঁচার মতো বাঁচতে চাই। আর বাঁচার মতো বাঁচতে হলে আমাদের শুয়ে-বসে বিষণ্ণতাকে ডেকে আনা চলবে না। এভাবে চলতে থাকলে কে জানে, হয়তোবা কখনো আমরা বেঁচে থেকেও চিৎকার করে বলতে শুরু করবো, ‘আমি মরে গেছি! আমাকে চিতায় তুলছো না কেন?’  

Related Posts

Leave a Reply