কলকাতা টাইমস :
নিজেকে তিনি একটা পচা-গলা শবদেহ বলে মনে করছেন। তাঁর মনে হচ্ছে, তিনি আত্মাহীন। তাঁর আহার-পানীয়েরও প্রয়োজন নেই।
না, এ কোনও জোম্বি মুভি নয়। অথবা কোনও দুস্বপ্নও নয়। এ এমন এক অসুখ, এমন এক মানসিক বৈকল্য, যখন নিজেকে মৃত বলে ভাবতে শুরু করেন জীবন্ত মানুষ। ‘জীবন্মৃত’ কথাটি সেই সময়ে যেন একেবারে আক্ষরিক অর্থেই সত্য বলে দেখা দিতে থাকে।
‘ওয়াকিং কর্পস সিনড্রোম’ হিসেবে পরিচিত এই মানসিক ব্যাধিটির কেতাবি নাম— ‘কোতার ডিলিউশন’। চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের মতে এটি একটি বিরল শ্রেণির মনোবিকলন, যেখানে রোগগ্রস্ত মানুষ নিজেকে মৃত অথবা অস্তিত্বহীন বলে মনে করেন।
১৮৮০ সালে ফরাসি নিউরোলজিস্ট জুল কোতারের কাছে এক মহিলা আসেন এক আজব অসুখ নিয়ে। তিনি জানান, তাঁর মনে হচ্ছে তাঁর মস্তিষ্ক বা স্নায়ু কিছুই নেই। সেই সঙ্গে তিনি বুক, পেট, হাত, পা— কোনও কিছুর অস্তিত্বই টের পাচ্ছেন না। নিজেকে তিনি একটা পচা-গলা শবদেহ বলে মনে করছেন। তাঁর মনে হচ্ছে, তিনি আত্মাহীন। তাঁর আহার-পানীয়েরও প্রয়োজন নেই।
চিকিৎসক কোতার লিখে গিয়েছেন, এই রোগিনী শেষ পর্যন্ত অনাহারেই মারা যান। পরে তিনি এই অসুখটিকে নিয়ে দীর্ঘ ভাবনাচিন্তা করেন। তাঁর নামানুসারেই এই অসুখের কেতাবি নামকরণ হয়। আসলে, এই দেহহীন অবস্থার বোধ জন্ম নেয় এক বিশেষ ধরনের উদ্বেগ থেকে। এটি আসলে বাস্তবের বোধ লোপ পাওয়ারই একটি রূপভেদ।
২০১৩ সালে লন্ডন থেকে সান ফ্রান্সিসকো যাওয়ার পথে বিমানে এক মহিলা অসুস্থ হয়ে পড়েন। তিনি পরে জানান, তাঁর মনে হয়েছিল, তিনি বিমানের মধ্যেই মারা গিয়েছেন। গ্রাহাম হ্যারিসন নামে আর এক রোগী আত্মহত্যার চেষ্টা করে হাসপাতালে ভর্তি হন। তিনি জানান, তাঁর মনে হতো তাঁর মস্তিষ্কের মৃত্যু ঘটেছে। ‘নিউ সায়েন্টিস্ট’ পত্রিকাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, নিজেকে কিছুতেই জীবিত বলে ভাবতে পারছিলেন না তিনি। গ্রাহামের চিকিৎসকরা জানান, তাঁর মস্তিষ্কের ক্রিয়া এমন হয়ে দাঁড়িয়েছিল, যেমনটা কারোকে অ্যানাস্থেশিয়া করলে হয়। নিয়মিত সাইকোথেরাপি আর ওষুধের প্রয়োগে গ্রাহাম সুস্থ হন। কিন্তু এই রোগে আক্রান্ত বেশিরভাগ মানুষই শেষপর্যন্ত আত্মহত্যা করেন।
মনোবিদদের মতে, অস্তিত্ব ও অস্তিত্বহীনতার দোলাচলকে সহ্য করতে না পেরেই কোতার ডিলিউশনে আক্রান্তরা আত্মহত্যা করেন। আজ পর্যন্ত এই মনোবিকলনের প্রকৃত চিকিৎসার সন্ধান পাওয়া যায়নি।