চমকে দেবে এই স্বাধীন রাষ্ট্র যার নাগরিক মাত্র দু’জন
কলকাতা টাইমস :
স্বামী ও স্ত্রী দুই জন মিলেই একটি রাষ্ট্র। তাও আবার লেবাননের দক্ষিণ তীরবর্তী ইসরায়েলের উপকূলবর্তী রাষ্ট্র। ইসরায়েলের সংসদীয় নির্বাচনে সমগ্র দেশের ভোটাধিকার প্রাপ্ত নাগরিকরা তাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিয়ে মনোনিত করবেন। তবে এর ব্যতিক্রম ইসরায়েলের উত্তরে এই ক্ষুদ্র অঞ্চলটি, যা থাকে পুরোপুরি ভোটের আওতা মুক্ত।
শুধু আজ নয়, বিগত ৪০ বছর যাবত দেশটিতে যত নির্বাচন হয়েছে তাতে সবাই অংশগ্রহন করলেও এই ক্ষুদ্র অঞ্চলটি অংশগ্রহন করেনি। বলা যায়, ইসরায়েলের ভেতর থাকা স্বত্ত্বেও এই অঞ্চলটি ক্ষুদ্র স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে পরিচালিত হয়ে আসছে সুদীর্ঘদিন।
লেবাননের দক্ষিণের তীরবর্তী ইসরায়েলের উপকূলবর্তী ওই অঞ্চলটির নাম আচিভল্যান্ড। গোটা অঞ্চলটি লোহার পুরু দরজা এবং বিভিন্ন চিহ্ন দিয়ে ঘেরা। অনেক দূর থেকে পর্যটকরা স্থানটিতে ঘুরতে আসলেও স্রেফ বিশাল লোহার দরজার বাইরে থেকে ফিরতে হয়। হয়ত গোটা মধ্যপ্রাচ্যে এরকম একটি স্বাধীন ভূখন্ড আছে যা কল্পনা করাই যায় না। তার উপর এই ভূখন্ডের আছে তাদের নিজস্ব পতাকা(মৎসকুমারী) এবং নিজস্ব জাতীয় সঙ্গীত। সবচেয়ে বড় কথা এর আছে একেবারেই ভিন্নধর্মী একটি সংবিধান। যে সংবিধানের আওতায় এখানে নির্বাচনও হয় এবং একজন প্রেসিডেন্টও নির্বাচিত হয়।
আচিভল্যান্ডের আছে নিজস্ব সংসদ ভবন। একটি মাত্র কাঠের চেয়ার এবং টেবিল সম্বলিত এই সংসদে কোনো মন্ত্রী বা সাংসদ নেই সত্যি, কিন্তু নিয়ম করে প্রেসিডেন্ট ঠিকই সংসদ অধিবেশনে বসেন। এই সংসদ থেকেই প্রেসিডেন্ট নিজ ক্ষমতা বলে তৈরি করেছেন ডাকটিকিট এবং পাসপোর্ট। এই রাষ্ট্রের পাসপোর্ট না থাকলে কাউকেই ঢুকতে দেয়া হয় না। একবার ইসরায়েলের কয়েকজন সাংসদ একবার এই ক্ষুদ্র রাষ্ট্রটিতে ঢোকার চেষ্টা করলে বন্দুকের গুলির মুখে ফিরে আসতে হয়। পরবর্তীতে এই রাষ্ট্র থেকে এক বিবৃতিতে জানানো হয়, অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের ঠেকাতে গুলি চালানো হয়েছে।
পাঠক হয়তো গুলিয়ে ফেলছে, রাষ্ট্র ছোটো হলেও তার জনগন থাকবে, থাকবে পুলিশ-সেনাবাহিনী ইত্যাদি সব বন্দোবস্ত। কিন্তু আচিভল্যান্ডে এসবের কোনো বালাই নেই। এমনকি নেই কোনো জনগণ। আলী আভিভি নামের ৮৫ বছর বয়সী এক ব্যাক্তি ও তা স্ত্রী দুজনে থাকেন এই রাষ্ট্রে। তিনিই এই রাষ্ট্রের সর্বময় ক্ষমতা অধিকারী।
সাদা চুল-দাড়ি এবং মেঘপালকদের ঐতিহ্যবাহী পোশাক কাফতান পরিধান করেই তিনি এই রাষ্ট্র পরিচালনা করেন। আভিভির বসবাসের প্রসাদটিও দেখতে ভিন্ন। ছোট একটি কাঠের ঘর হলো তার প্রাসাদ। ঘরে কোনো বৈদ্যুতিক সংযোগ না থাকায় তেমন কোনো অসুবিধা হয় না আভিভির, কারণ কাছেই সমুদ্র থাকায় এর শীতল বাতাসে গোটা বছরই আরামে কেটে যায় তাদের। ১৯৫০ সাল থেকে ক্রমাগত চেষ্টার ফলে তিনি এই স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠাতা করতে সমর্থ্য হয়েছেন।