ভারতও ডিজিটাল মুদ্রার জাদুতে, জানাল বাজেট
কলকাতা টাইমস :
ভারতে সাধারণ বাজেট পেশ করলেন দেশটির কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামণ। মঙ্গলবার দেশটির সংসদে ২০২২-২৩ অর্থ বছরের জন্য পেপারলেস বাজেট পেশ করেন অর্থমন্ত্রী। এসময় সংসদে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং, রেলমন্ত্রী অশ্বীনি বৈষ্ণব, সংসদীয় বিষয়ক মন্ত্রী প্রহ্লাদ জোশী, অর্থপ্রতিমন্ত্রী ড: ভগবত কিষাণরাও কারাদ ও পঙ্কজ চৌধুরী সহ মন্ত্রিসভার সদস্যরা, কংগ্রেস সাংসদ রাহুল গান্ধীসহ বিভিন্ন দলের সাংসদরা।
বাজেট বক্তৃতায় তিনি বলেন, ‘আত্মনির্ভর ভারতে বিপুল কর্মসংস্থান হওয়ার সুযোগ রয়েছে। এই বাজেটই আগামী ২৫ বছরের আর্থিক দিশা দেখাবে।’ তার অভিমত কেন্দ্রীয় সরকারের লক্ষ্যই হল দরিদ্র ও প্রান্তিক মানুষদের আর্থিক সহায়তা করা। সকলকে সাথে নিয়ে এবং সকলের প্রচেষ্টায় দেশ সামনের দিকে এগিয়ে যাবে বলেও আশা প্রকাশ করেন অর্থমন্ত্রী।
এবারের বাজেটে দাম কমেছে হীরা ও মূল্যবান রত্ন, দেশে তৈরি কৃষি যন্ত্রপাতি, পোশাক, চর্মজাত দ্রব্য, জুতো, মোবাইল ফোন, মোবাইল চার্জার, পেট্রোলিয়াম পণ্য উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় রাসায়নিক, স্টিলের উপজাত দ্রব্য। অন্যদিকে দাম বেড়েছে বিদেশি ছাতা, বিদেশ থেকে আমদানিকৃত যে কোনো পণ্য।
এই বাজেটে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা দেন তিনি। যার মধ্যে অন্যতম দেশের ১.৫ লাখ পোস্ট অফিসকে কোর ব্যাংকিং সিস্টেমের আওয়ায় হচ্ছে। এর ফলে নেট ব্যাংকিং, অনলাইন ব্যাংকিং ও এটিএম’এর সুবিধা পাওয়া যাবে। এতে কৃষক, বয়স্ক মানুষ, পেনশন প্রাপক, গ্রামীন এলাকার মানুষ বেশি উপকৃত হবে। অবকাঠামোর ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। করোনার আবহে অনলাইন শিক্ষাদান জরুরী হয়ে পড়েছে। সেদিকে তাকিয়ে পঠনপাঠন নিয়ে একগুচ্ছ নতুন ঘোষণা করেছেন অর্থমন্ত্রী। সারা দেশের শিক্ষার্থীদের জন্য ‘ডিজিটাল বিশ্ববিদ্যালয়’ তৈরির কথা জানান। একইসাথে ‘ওয়ান ক্লাস উইথ ওয়ান টিভি চ্যানেল’ চ্যানেলের সংখ্যা বাড়ানো হবে।
দেশের পার্বত্য এলাকাগুলিতে উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। যাতায়াত সুগম করার জন্য পিপিপি মডেলে তৈরি হবে রোপওয়ে। জোর দেওয়া হয়েছে চিপ যুক্ত ই-পাসপোর্ট পরিসেবা, গ্রামাঞ্চলে ব্রডব্যান্ড পরিষেবা, চলতি বছরেই ৫জি পরিষেবা চালু, ব্যাটারিচালিত পরিবহন ব্যবস্থা, কৃষিকাজের সহায়তায় ড্রোনের ব্যবহারে। দেশের নারী, কৃষক, যুব সমাজ, তফশিলী জাতি ও উপজাতির মানুষদের জন্য একগুচ্ছ প্রকল্পের ঘোষনা দেওয়া হয়েছে। আগামী তিন বছরে ৪০০ টি নুন সুপারফাস্ট বন্দে ভারত ট্রেন চালু করা হচ্ছে, ২৫ হাজার কিলোমিটার নতুন রাস্তা নির্মাণ।
বাজেটের অন্যতম প্রতাশ্যা ছিল কর্মসংস্থান। সেক্ষেত্রে আগামী পাঁচ বছরে ৬০ লাখ কর্মসংস্থান তৈরির লক্ষ্য মাত্রা আছে বলে জানান তিনি।
তবে এই বাজেটে হতাশ হয়েছেন চাকুরিরত শ্রেণি। প্রতি বাজেটেই তাদের অন্যতম প্রত্যাশাই হল আয়করের ওপর ছাড়। কিন্তু সেই আয়কর কাঠামো অপরিবর্তিত থাকছে। অর্থমন্ত্রী জানান অর্থনীতিতে ভারসাম্য বজায় রাখতে আয়কর কাঠামোতে কোনও বদল আনা হচ্ছে না। কর্পোারেট ট্যাক্স ১৮ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১৫ শতাংশ করা হয়েছে। তবে এই বাজেটে প্রত্যক্ষ কর ব্যবস্থা সরলীকরণে জোর দেওয়া হয়েছে। আয়কর রিটার্নের সময়সীমা ২ বছর বাড়ানো হয়েছে।
কেন্দ্রীয় বাজেটে এবার অন্যতম আকর্ষণ ডিজিটাল অর্থনীতির ওপর জোর দেওয়া। সেদিকে লক্ষ্য রেখেই চলতি বছর থেকেই বাজারে ডিজিটাল মুদ্রা আনবে রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়া। ক্রিপ্টো কারেন্সির মোকাবিলা করতেই নতুন এই উদ্যোগ কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীর। পাশাপাশি ক্রিপ্টো কারেন্সি আয়ে ৩০ শতাংশ করে কথা ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।
বিজেপি এই বাজেটকে জনমুখী বললেও এই বাজেটের কড়া সমালোচনা করেছে কংগ্রেস, সিপিআইএম, তৃণমূল কংগ্রেস। ট্যুইট করে কংগ্রেস সাংসদ রাহুল গান্ধী লেখেন ‘মোদি সরকারের জিরো সাম বাজেট। বেতনভোগী শ্রেণি, মধ্যবিত্ত, দরিদ্র ও বঞ্চিত শ্রেণি, যুব সমাজ, কৃষকদের জন্য এদের জন্য কিছুই না।’
অন্যদিকে এই বাজেটকে ‘শূণ্য’এর সাথে তুলনা করেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী ও তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী মমতা ব্যানার্জি। ট্যুইট করে তিনি লেখেন ‘সাধারণ মানুষের জন্য এই বাজেট একেবারে শূণ্য মাত্র। সাধারণ মানুষ এমনিতেই বেকারত্ব ও মুদ্রাস্ফীতিতে জর্জরিত। এই বাজেটে শুধু বড় বড় কথা বলা হয়েছে। কোন কিছুই কেন্দ্রীয় বাজেটে গুরুত্ব পায়নি।’ তার অভিমত ‘এটি পেগাসাস-স্পিন বাজেট।’