আদৌ ‘মার্শিয়ান’ জন্ম দেওয়া সম্ভব?
কলকাতা টাইমস :
পৃথিবী ছেড়ে মঙ্গল গ্রহে গিয়ে বসবার করা নিয়ে চলছে অনেক পরিকল্পনা। কিন্তু মঙ্গলে গিয়ে বসতি স্থাপনের পর একটি বড় সমস্যার মুখোমুখি হতে হবে মানুষের। মঙ্গল গ্রহে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন এবং সন্তান ধারণের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বিজ্ঞানীরা।
পৃথিবীতে মানুষের স্বাচ্ছন্দ্যে জীবনযাপনের সব উপকরণই আছে। পৃথিবীর জল আমরা পান করতে পারি, বাতাসে নিঃশ্বাস নিতে পারে। পৃথিবীর আবহাওয়া আমাদের সূর্যের তেজস্ক্রিয় রশ্মি থেকে নিরাপদ রাখে। পৃথিবীর সব প্রাণীই এর মহাকর্ষের সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নিয়েছে। পৃথিবী বাদে অন্য কোথাও জীবনধারণ করা যায় কি না তা নিয়ে বিজ্ঞানীরা চেষ্টা করে যাচ্ছেন। তাদের পছন্দের প্রথমেই আছে মঙ্গল গ্রহ। মঙ্গল গ্রহে মানব বসতি স্থাপন করতে গেলে বেশকিছু বিষয় নিয়ে চিন্তা করতে হবে। পৃথিবী থেকে মঙ্গলে যাত্রা, খাবার, জল, নিঃশ্বাসের জন্য বাতাস, তেজস্ক্রিয়তার পাশাপাশি আরও একটি চিন্তার ব্যাপার আছে, আর তা হলো মানবসন্তান জন্ম।
ফিউচার জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণায় মঙ্গল গ্রহে সন্তান জন্ম দেওয়ার শারীরিক ও সামাজিক দিকগুলো নিয়ে আলোচনা করা হয়। গবেষণায় বলা হয়, মঙ্গলে বসতি স্থাপন এক সময় বিজ্ঞানের কল্পকাহিনী ছিল। কিন্তু আগামী বিশ বছরের মাঝেই তা সম্ভব হতে পারে। তবে মঙ্গলে মানুষের বসতি টিকিয়ে রাখতে হলে অবশ্যই মানব সন্তান জন্ম দেওয়ার প্রয়োজনীয়তা আছে। মঙ্গলে জন্ম দিতে হবে মানুষের বংশধর, মঙ্গলবাসী বা ‘মার্শিয়ান’। কিন্তু তা কী আদৌ সম্ভব?
মহাশূন্যে সময় কাটানোর ফলে মহাকাশচারীদের শরীরে অনেক পরিবর্তন আসে। মহাকর্ষের অভাবে চোখে সমস্যা দেখা দেয়, হাড় পাতলা হয়ে যায়, মাসল অ্যাট্রফি (অসাড়তা) দেখা দেয়। তবে নিয়মিত ব্যায়াম করলে এসব সমস্যা দূর করা যায়। এ ছাড়া মানুষের শরীর লম্বা এবং ছিপছিপে হয়ে যায়। আর তেজস্ক্রিয়তার ভয় তো আছেই। এসব সমস্যা নিয়ে সন্তান ধারণ ও জন্ম দেওয়া সম্ভব কি না, তা ভাবার ব্যাপার।
মঙ্গলে জন্ম নেওয়া শিশুরা সহজে সে গ্রহের আবহাওয়ার সাথে খাপ খাইয়ে নিতে পারবে, এমন সম্ভাবনা আছে। তবে এ ব্যাপারে নিশ্চিত করে কিছুই বলা যায় না। মঙ্গল গ্রহে বসতি স্থাপন করলে সে বসতি স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে হবে, আর তার জন্য অন্তত পাঁচ হাজার মানুষ নিয়ে বসতি তৈরি করতে হবে। সেখানে গর্ভধারণ এবং সন্তান জন্মদান হবে নিঃসন্দেহে ঝুঁকিপূর্ণ একটি কাজ, সুতরাং গর্ভপাতের সুযোগ থাকা উচিৎ।
যারা সন্তান ধারণ ও জন্ম দিতে চান, তাদেরকে এ প্রক্রিয়ার প্রতিটি ধাপে সাহায্যের প্রয়োজন হবে। সন্তান জন্মদানের পরেও তাদের সাহায্যের প্রয়োজন হবে। শুধু তাই নয়, মঙ্গল গ্রহে টিকে থাকতে গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্যগুলো মানুষের ডিএনএ’র মাঝে ‘প্রোগ্রামিং’ করে দেওয়ার প্রযুক্তিও ব্যবহার করার সম্ভাবনা নিয়ে কথা বলা হয় এই গবেষণায়। আর তা যদি আসলেই করা হয়, তাহলে পৃথিবীর মানুষ আর মঙ্গলের মানুষের মাঝে বিস্তর পার্থক্য দেখা যাবে।