প্রেম করলেই জেল!
চির শত্রু দু’দেশ। কোনোকিছুতে কেউ কাউকে ছাড় দিতে নারাজ। একটা মারলে দুটো মারার হুমকি। তবে প্রেমের ক্ষেত্রেও কি একই অবস্থা? হ্যাঁ, এ ক্ষেত্রেও ছাড় দিতে নারাজ। প্রেম করলেই জেল!
ভারতের উত্তরাঞ্চলের শহর রামপুরের মোহাম্মদ জাভেদ পাকিস্তানি মেয়ের প্রেমে পড়ে জেল খেটেছেন। কূটনৈতিক বৈরিতার মধ্যে থাকা দেশ দুটির নাগরিকরাও এখন নিজেদের সম্পর্ক রাখতে পারছেন না।
মোহাম্মদ জাভেদ ১৯৯৯ সালে মাকে নিয়ে পাকিস্তানের করাচি গিয়েছিলেন আত্মীয়র বাড়িতে। তখন মবিনা নামের এক মেয়ের সঙ্গে প্রথম দেখায় প্রেম হয় মোহাম্মদ জাভেদের।
মাসখানেক কথা বলার পর প্রেম নিবেদন শুরু হয়। মবিনা তার পরিবারের সঙ্গে জাভেদের পরিচয়ও করিয়ে দেন। প্রায় সাড়ে তিন মাস করাচিতে থেকে ভারতে ফিরে আসেন জাভেদ।
ভারতে আসার পরও মবিনার সঙ্গে ফোনে কথা বলতে বলতে টিভি মেকানিক জাভেদের নিজের উপার্জনের অধিকাংশ টাকা টেলিফোন বুথে দিতে হয়েছে।
বছরখানেক পর আবারো জাভেদ পাকিস্তানে গিয়ে মবিনার সঙ্গে দেখা করেন।
এবার তাদের প্রেমের কথা জানতে পেরে মবিনাকে বিয়ে করে জাভেদকে পাকিস্তানে এসে থাকতে বলে মবিনার পরিবার। জাভেদ সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগেন। মবিনা তাকে দেশে ফিরে যাওয়ার কথা বলে এবং পরে নিজের পরিবারকে বুঝিয়ে বিয়ে ভারতে চলে যাবে বলে আশ্বস্ত করেন।
তার কথা অনুযায়ী জাভেদ ভারতে ফিরে চিঠি ও টেলিফোনে প্রেম চালিয়ে যান। তাদের প্রেম এতই গভীর ছিল যে, প্রেমপত্র লিখতে ১০/১২ পাতা খরচ হতো।
হঠাৎ একদিন সব উলট-পালট হয়ে যায়। বিবিসিকে দেয়া সাক্ষাৎকারে জাভেদ বলেন, ‘দিনটি ছিল শনিবার, ২০০২ সালের ১০ আগস্ট। একজন লোক এসে তার বাসায় টিভি সারানোর কথা বলে। আমি রাজি না হলে তিনি অনেক জেদ করেন। যখন আমি যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হলাম তখন একটি গাড়ি এসে আমাকে উঠিয়ে নিয়ে গেল। তাদের কথাবার্তায় আমি বুঝতে পারলাম যে, তারা পুলিশের লোক।
পুলিশ জাভেদকে পাকিস্তানি গোয়েন্দা বলে অভিযোগ দেয়। জাভেদের ১১ বছর ৬ মাস জেল হয়। তবে ২ বছর পর সব অভিযোগ প্রত্যাহার হলে মুক্তি পান জাভেদ। কিন্তু ততদিনে তার জীবন নষ্ট হয়ে গেছে।
বিয়ে হয়ে গেছে ভেবে জাভেদ আর মবিনাকে ফোন দেন না। কান্না চেপে জাভেদ বলেন, আমার মাথা থেকে মবিনাকে সরিয়ে ফেলেছি, কিন্তু মন থেকে নয়’। আমার মনের মাঝে আজীবন বেঁচে থাকবে মবিনা’।