মায়ের দ্বিতীয় বিয়ে থেকে নিজের পরকীয়া … বাকিটা আপনাকে চমকে দেবে !
কলকাতা টাইমস :
তার তৈরি মাংস ভাজা খেয়ে আঙুল চাটেনি এমন মানুষ বিরল। জানতে চান তার নিজের জীবন কীরকম ছিল? রেসিপির থেকে কম মুখরোচক নয় কিন্তু। প্রথম সাফল্যের মুখ দেখতে অপেক্ষা করতে হয়েছিল ৬২ বছর বয়স অবধি। তবু হার মানেননি। তিনি KFC-র প্রতিষ্ঠাতা।
> পুরো নাম হারল্যান্ড ডেভিড সন্ডার্স। জন্ম ১৮৯০-এর ৯ সেপ্টেম্বর। আমেরিকার ইন্ডিয়ানায়। তিন ভাইবোনের মধ্যে বড়। বাবা উইলবার ছিলেন ফার্মের মালিক। ৮০ একর জমি ছিল তার। মা মার্গারেট ছিলেন গৃহবধূ এবং ধর্মভীরু ক্যাথলিক খ্রিস্টান।
> ডেভিড যখন পাঁচ বছরের‚ হঠাৎ মারা যান তার বাবা। মাকে ঘর সংসার ফেলে বেরোতে হতো কাজে। দুই ভাইবোনকে খাওয়াতেন বালক ডেভিড। দু বছরের মধ্যে তিনি দিব্যি শিখে গেলেন পাউরুটি আর মাংসের নানা পদ।
> ১০ বছর বয়সে ডেভিড নিজেই গেলেন খামরবাড়ির কাজে। তার দু বছর বাদে আবার বিয়ে করলেন মার্গারেট। কিন্তু সৎ বাবা সহ্য করতে পারতেন না তিন ভাইবোনকে। বীতশ্রদ্ধ ডেভিড স্কুলের পড়াশোনা ছেড়ে দিলেন ক্লাস সেভেনেই। মায়ের দ্বিতীয় বিয়ের ফলে বদলে গিয়েছিল ঠিকানা। এ বার নিজেই বাড়ি ছেড়ে ইন্ডিয়ানার অন্য প্রান্তে চলে গেলেন ডেভিড।
> কিছুদিন নানা কাজের পরে মায়ের কথায় আশ্রয় নিলেন এক আত্মীয়র বাড়ি। তারপর বিভিন্ন কাজ করেছেন। বাস কোম্পানিতে কন্ডাক্টর। সেনাবাহিনীর চাকরি। রেলে কামারের কাজ। রেলের ইঞ্জিন থেকে ছাই সাফাইয়ের কাজ। ইঞ্জিনে কয়লা জোগানের কাজ|
> এর মাঝেই বিয়ে করেন জোসেফিনকে। মাত্র উনিশ বছর বয়সে। জন্ম এক ছেলে‚ দুই মেয়ের। ছেলে অল্প বয়সে মারা যান টনসিলের সংক্রমণে।
> করেসপন্ডেন্স কোর্সে আইন পড়তে শুরু করলেন। কিন্তু তার মাঝেই চলে গেল রেলবোর্ডের চাকরি। কর্মক্ষেত্রে বিবাদের জেরে। দুই মেয়েকে নিয়ে স্ত্রী চলে গেলেন তাঁর বাবা মায়ের কাছে।
> আইন পাশ করে প্র্যাক্টিস শুরু করলেন বটে। ভালই উপার্জন চলছিল। কিন্তু বন্ধ হয়ে গেল বদমেজাজের জন্যই। নিজের মক্কেলের সঙ্গেই জড়িয়ে পড়লেন ঝামেলায়।
> এরপর জীবন বীমায় কাজ করেছেন। শুরু করেছেন নিজের ফেরি কোম্পানি। সেটা বন্ধ করে খুললেন অ্যাসিটিলিন বালব তৈরি। তাও চলল না। বাজারে এসে গেল ইলেক্ট্রিক বালব।
> জীবন স্রোতে ভাসতে ভাসতে এলেন কেন্টাকিতে। একাজ সেকাজের পরে থিতু হলেন অয়েল কোম্পানির কাজে। পাশাপাশি শুরু করলেন শৈশব থেকে চেনা কাজ। রান্না। চিকেনের নিজস্ব প্রিপারেশন খাওয়াতে লাগলেন স্থানীয়দের। সেই যে মায়ের অনুপস্থিতিতে রান্না করে খাওয়াতেন ভাইবোনদের‚ সেই অভ্যাস রয়ে গিয়েছিল ভিতরে।
> দ্রুত জনপ্রিয় হল তাঁর মাংস ভাজার সেই রেসিপি। সুখ্যাতির স্বীকৃতিস্বরূপ পেলেন কর্নেল অফ কেন্টাকি উপাধি। এর মাঝে আবার জড়িয়ে পড়লেন খুনের মামলাতেও।
> দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের জন্য বন্ধ হয়ে গেল তাঁর মোটেল ব্যবসা। দীর্ঘ কয়েক বছর পরে নবরূপে আবির্ভূত হল তাঁর গোপন রেসিপি। ‘Kentucky Fried Chicken’ বা KFC নামে। আমেরিকার উটাহ-তে‚ সাউথ সল্টলেক এলাকায়। তখন সন্ডার্সের বয়স ৬২ বছর।
> বাকিটা ইতিহাস। “It’s Finger Lickin’ Good” কার্যত মেনে নিয়েছে সারা বিশ্ব। তবে এই ব্যবসাতেও কিন্তু বেশিদিন মন বসাননি চির বাউন্ডুলে ডেভিড সন্ডার্স। ১৯৬৪ সালে বেচেই দিলেন। ২ মিলিয়ন ডলারে। কেএফসি-র ব্যবসার তুলনায় আহামরি কিছুই নয়। লোগোতে তাঁর ছবি থাকবে‚ এই মর্মে মোটা বেতন পেতেন তিনি।
> পরে নিজের লোকসান বুঝতে পেরে KFC-কে মামলায় ফাঁসাতে চেয়েছিলেন। অভিযোগ করেছিলেন‚ তাঁর রেসিপি ব্যবহৃত হচ্ছে না। কিন্তু সুবিধে করতে পারেননি।
> ফিরে আসি ব্যক্তিগত জীবনে। ১৯৪৭ সালে বিচ্ছেদ হয়ে যায় স্ত্রী জোসেফিনের সঙ্গে। তখন তিনি পরকীয়া ডুবে আছেন। তাঁর প্রথম রেস্তোরাঁর কর্মী ক্লডিয়ার সঙ্গে। ক্লডিয়াকে বিয়ে করেন ১৯৪৯ সালে। মূলত ক্লডিয়ার উৎসাহ আর অনুপ্রেরণায় বাস্তবায়িত হয় KFC।
> ১৯৮০-র ১৬ ডিসেম্বর প্রয়াত হন কর্নেল অফ কেন্টাকি‚ হারল্যান্ড ডেভিড সন্ডার্স। মৃত্যুর কয়েকদিন আগে অবধি ছিলেন কর্মঠ। তিনি দেখে যেতে পেরেছিলেন ৪৮ টা দেশে KFC-র ৬ হাজার আউটলেট। তখন বার্ষিক ব্যবসা ছিল ২ বিলিয়ন ডলারের। এখন সেটা ৫.৮ বিলিয়ন ডলার।