১৮ বছর পর জানা গেল খুনি মা’এর হাতে ছেলের ভয়ঙ্কর পরিণতি
কলকাতা টাইমস :
পরিস্থিতি কোন পর্যায়ে গেলে একজন মা তার সন্তানকে খুন করতে বাধ্য হন! এমনই এক পরিস্থিতির খোলসা হল ১৮ বছর পর। ঘটনাটি হায়দরাবাদের। জুয়াড়ি ছেলের আচরণে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছিলেন মা। চেয়েছিলেন একটা হেস্তনেস্ত করতে। তারপর খুনি ভাড়া করে ছেলেকে সরিয়ে দেন পৃথিবী থেকে। কিন্তু অপরাধ চাপা থাকেনি। দেড় যুগ পর সামনে এল সেই খুনের ঘটনা।
ভারতের জাতীয় নির্বাচন উপলক্ষে হায়দরাবাদে এই মুহূর্তে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। রাস্তায় গাড়ি থামিয়ে তল্লাশি চালানো হচ্ছে। তেমনই একদিন গাড়িতে তল্লাশি চালাতে গিয়ে বশির আহমেদ কুরেশি নামে পেশায় কসাই এক ব্যক্তির সন্ধান পাওয়া যায়। মাতাল অবস্থায় গাড়ি চালাচ্ছিলেন ওই ব্যক্তি। তার গাড়ি থেকে একটি বড় ছুরি উদ্ধার হয়। এই ছুরি নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের সময় নেশার ঘোরে পুলিশকে ১৮ বছর আগের খুনের ঘটনা ফাঁস করে দেয় বশির!
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, জিজ্ঞাসাবাদ শুরু হলে নিজেকে কসাই বলে পরিচয় দেয় বশির আহমেদ কুরেশি। মাংস কাটার কাজে ওই ছুরি ব্যবহার করে বলে জানায়। তখনই কথায় কথায় ১৮ বছর আগের কথা বেরিয়ে পড়ে। তার বক্তব্য থেকে জানা যায়, তার শাশুড়ি মাসুদা বিবি স্বামীর মৃত্যুর পর তিন ছেলে ও পাঁচ মেয়েকে নিয়ে অসহায় অবস্থায় দিন কাটাচ্ছিলেন। একা হাতে সব সামলাতে হচ্ছিল তাকে। ছেলে-মেয়েদের বিয়ের ব্যবস্থাও করতে হচ্ছিল। কষ্ট করে হলেও সংসার চলছিল। কিন্তু মেজ ছেলে মোহাম্মদ খাজা তার দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
বশির জানায়, কসাইখানাতে কাজ করলেও জুয়া খেলে সব টাকা উড়িয়ে দিত মোহাম্মদ খাজা। বন্ধুদের ডেকে এনে বাড়িতেও জুয়ার আসর বসাত। টাকা চেয়ে মায়ের উপর নির্যাতন করত। মা যদি টাকা দিতে অস্বীকার করতেন, তাহলে মারধরও করত মাকে! ঘরের জিনিসপত্র তুলে নিয়ে গিয়ে বিক্রি করত। তার এমন আচরণে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছিল সকলে। সম্মান বাঁচাতে খাজাকে ফেলে চন্দ্রায়ণগুট্টার হাশামাবাদের বাড়ি ছেড়ে আলজুবালি কলোনিতে উঠে আসেন তারা।
কিন্তু সেখানেও এসে অশান্তির সৃষ্টি করে খাজা। বাধ্য হয়ে দুই জামাই মোহাম্মদ রশিদ এবং বশির আহমেদ কুরেশির সঙ্গে শলা-পরামর্শ করতে বসেন মাসুদা বিবি। পেশায় অটোচালক খাজার বন্ধু সৈয়দ হাশামকেও দলে নেন তিনি। টাকার বদলে খাজাকে সরিয়ে দিতে সম্মত হয় হাশাম। এরপর ২০০১ সালের ৪ জুন বিকালে তাড়ি (মদ) খাওয়ানোর লোভ দেখিয়ে মোহাম্মদ খাজাকে ডেকে পাঠায় মোহাম্মদ রশিদ, বশির আহমেদ কুরেশি এবং সৈয়দ হাশাম।
তবে তখনই তাকে হত্যা করা হয়নি। সূর্যাস্তের পর তাড়ি খেয়ে হাশামের অটোয় ঘুরতে বের হয় খাজাসহ বাকী তিনজন। শৌচকর্ম করার বাহানায় শাস্ত্রীপুরমে একটি আঙুর বাগানের কাছে অটো থামানো হয়। সেখানে নামতেই খাজার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে ওই তিনজন। গ্রানাইট পাথর দিয়ে তার মাথা থেঁতলে ঝোপের মধ্যে দেহ ফেলে দেওয়া হয়। খাজাকে খুন করে মাসুদা বিবির কাছে ফিরে আসে তিনজন। কথামতো হাশামকে কিছু টাকা দেন তিনি। এত বছর পর জানা গেল এই ভয়ংকর গল্প। বশিরকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। বাকীদের ধরতে অভিযান চলছে।