এই সময় কথা বলা কি স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকারক ?
[kodex_post_like_buttons]
কলকাতা টাইমস :
আমরা অনেকেই ঘুমনোর সময় কথা বললেও এ সম্পর্কে আমাদের কোনও জ্ঞানই থাকে না। শুধু তাই নয়, অন্যরা যখন এই বিষয়ে আমাদের জানায়, তখন ৯০ শতাংশ ক্ষেত্রেই এই বাস্তব সত্যটাকে মেনে নেওয়া আমাদের পক্ষে খুব কষ্টকর হয়। তাই তো কখনই আমাদের মনে প্রশ্ন জাগে না যে ঘুমের ঘোরে কথা বলার কারণে আমাদের শরীরের উপর কোনও কু-প্রভাব পরে কিনা! আচ্ছা, সত্যিই কি ঘুমনোর সময় কথা বলাটা ক্ষতিকারক? চলুন জানার চেষ্টা চানানো যাক এই বিষয়ে।
কী এই “স্লিপ টকিং” বা ঘুমনোর সময় কথা বলা: ঘুমনোর সময় কথা বলার সমস্যাকে চিকিৎসা পরিভাষায় “সমনিলোকিউই” বলা হয়ে থাকে। এটা এক ধরনের রোগ। তবে এই নিয়ে ভয় পাওয়ার কোনও কারণ নেই। কিছু ক্ষেত্রে আপনা থেকেই এই সমস্যা কমে গেলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই নিদিষ্ট চিকিৎসার প্রয়োজন পরে। রোগী ঘুমনোর সময় যেহেতু এই বিষয়ে সচেতন থাকেন না, তাই ভাষা এবং কথা বলার ধরণ একেবারে বদলে যায়। কিছু ক্ষেত্রে তো কথার বিষযবস্তু সম্পর্কে ধারণাই করা যায় না। অনেক ক্ষেত্রে আবার স্লিপ টকিং-এর ধরণ গোঙানির মতোও হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে একটা জিনিসই বলার যে, যখনই জানতে পারবেন যে আপনি এমন সমস্যায় আক্রান্ত হয়েছেন, বিষয়টিকে উড়িয়ে না দিয়ে চিকিৎসকের পরমর্শ নেবেন। তাহলেই আর কোনও চিন্তা থাকবে না।
জেনে নিন পুরুষ না মহিলা, কারা বেশি আক্রান্ত হন এই রোগে?
একাধিক গবেষণায় পর দেখা গেছে এই ধরনের সমস্যায় সাধারণত পুরুষ এবং বাচ্চারাই বেশি আক্রান্ত হয়ে থাকে। তবে কেন এমনটা হয়ে থাকে, সে বিষয়ে যদিও এখনও পর্যন্ত জানা যায়নি, গবেষণা চলছে। আশা করা যেতে আগামী কয়েক বছরের মধ্যে এই বিষয়েও স্পষ্ট ধারণা করে নেওয়া যাবে।
ঘুমের সময় কী ধরনের কথা বলে থাকি আমরা?
যেমনটা আগেও আলোচনা করা হয়েছে যে, ঘুমনোর সময় অবচেতন মনে যেহেতু কথা বলা হয়, তাই অন্যদের পক্ষে তা বোঝা বেশ কষ্টকর হয়। তবে বেশ কিছু গবেষাণায় প্রমাণিত হয়েছে যে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই স্লিপ টকিং-এর বিষয়বস্তু হয় পুরনো কোন ঘটনা অথবা খারাপ অভিজ্ঞতা।
স্লিপ টকিং কতটা ক্ষতিকারণ:
এই বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই যে স্লিপ টকিং-এর কারণে সরাসরি শরীরের কোনও ক্ষতি হয় না। তবে সামাজিক অপমাণের ভয়ে এমন রোগীরা নিজেদের বাড়ি ছাড়া অন্য কোথাও রাত কাটাতে চান না। কী কথা বলে বলে ফেলবেন সেই ভয়ে অনেকেই নিজের বাড়িতেও রাতের পর রাত জেগে কাটিয়ে দেন। ফলে অনিদ্রা বা ইনসোমনিয়ার মতো রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বাড়ে।
এই ধরনের সমস্যা কেন হয়? অনেক কারণে স্লিপ টকিং-এর মতো আপাত সাধারণ রোগটি হতে পারে। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই স্ট্রেস এবং ডিপ্রেশনের কারণে এই ধরনের সমস্যা মাথা চারা দিয়ে ওঠে। এছাড়াও আরও যে যে কারণগুলি এক্ষেত্রে দায়ি থাকে, সেগুলি হল- পর্যাপ্ত সময় না ঘুমনো, দিনের বেলা ঘুমের ঘোর, মাত্রাতিরিক্ত অ্যালকোহল সেবন, জ্বর প্রভৃতি। প্রসঙ্গত, কিছু গবেষণায় দেখা গেছে স্লিপ টকিং-এ আক্রান্ত হওয়ার পিছনে পারিবারিক ইতিহাসও অনেক সময় দায়ি থাকে। অর্থাৎ জিনগত কারণেও এই রোগ হতে পারে। শুধু তাই নয়, অনেক সময় স্লিপ অ্যাপনিয়া এবং আর ই এম স্লিপ বিহেভিয়ার ডিজঅর্ডারের মতো রোগের কারণেও অনেকে ঘুমনোর সময় কথা বলে থাকেন।
এমন রোগীরা কি প্রতিদিনই ঘুমের ঘোরে কথা বলেন?
একেবারেই নয়। এই রোগটিকে তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়ে থাকে, মাইল্ড, মডাকেট এবং সিভিয়ার। মাইল্ড স্টেজে থাকাকালীন রোগী সপ্তাহে ১-২ বার ঘুমের ঘোরে কথা বলেন। যেখানে দ্বিতীয় স্টেজে এমন ঘটনা ৩-৪ দিন ঘটে থাকে।
আর একেবারে শেষ বা সিভায়ার স্টেজে কী হয়?
রোগী এই পর্যায়ে পৌঁছে গেলে প্রতিদিন ঘুমের ঘোরে কথা বলা শুরু করে দেন। প্রসঙ্গত, ঘুমনোর সময় আমরা কিন্তু পুরোটা সময় একইভাবে ঘুমাই না। কখনও আমাদের ঘুম খুব গভীর হয়, তো কখনও খুব পাতলা। দেখা গেছে, ঘুম পাতলা হওয়ার সময় যারা কথা বলেন, তাদের কথার ধরন বেশ স্পষ্ট হয় এবং কী বলছেন তা বোঝা যায়। অন্যদিকে গভীর ঘুমের সময় কথা বললে একেবারে উল্টো ঘটনা ঘটে।
চিকিৎসা:
এই ধরনের সমস্যায় সাধারণত কোনও চিকিৎসার প্রয়োজন হয় না। এক্ষেত্রে কতগুলি নিয়ম মানলেই সুফল মেলে। যেমন-
ঘুমনোর আগে বিছানা ভাল করে পরিষ্কার করে নিতে হবে, স্ট্রেস লেভেল কমাতে হবে, ডিপ্রেশনে ভুগছেন এমনটা মনে হলে চিকিৎসকের সঙ্গে আলোচনা করবেন, অ্যালকোহল কম খাবেন এবং রাতে টানা ৬-৮ ঘন্টা ঘুমনোর চেষ্টা করবেন। এই নিয়মগুলি মানলেই দেখবেন এই রোগ একেবারে কমে যাবে।
তবে এইসব ঘরোয়া পদ্ধতিগুলির কাজে লাগানোর পরেও যদি রোগের প্রকোপ না কমে, তাহলে জেনারেল ফিজিশিয়ানের পরামর্শ নেওয়া ছাড়া অন্য কোনও উপায় থাকবে না।
ঘুমের ঘোরে কী কথা বলছেন সে বিষয়ে কী জানতে চান?
এক্ষেত্রে কতগুলি অ্যাপ আপনাকে সাহায্য করতে পারে। যেমন- ড্রিম টক রেকর্ডার, স্লিপ টক রেকর্ডার, ওয়েকআপ প্রো প্রভৃতি। ঘুমনোর সময় কথা বলা মাত্র এই অ্যাপগুলি আপনার কথা রেকর্ড করতে শুরু করে দেয়। ফলে সকালে উঠে আপনার পক্ষে জেনে নেওয়া সম্ভব হয়, রাতের বেলা অবচেতন মনে কী কী কথা বলেছেন অপনি। প্রসঙ্গত, আজ পর্যন্ত প্রায় ২০ লক্ষ মানুষ এইসব অ্যাপ ব্যবহার করে সুফল পেয়েছেন। এবার আপনিও এইসব আধুনিক প্রয়ুক্তিগুলি কাজে লাগিয়ে দেখুন না ফল পান কিনা!