বলে কি ! সাহারা নাকি আমাদেরই সৃষ্টি
রাইট বলেন, প্রাথমিকভাবে ছাগলকে আমরা সন্দেহ করছি বেশি। এই প্রাণী খাওয়ার বিষয়ে কখনও বাছ-বিচার করে না। তাদের আকার অনুসারে তারা প্রচুর খেতো। একটা তৃণভূমিকে খুব দ্রুত মরুময় করার জন্য খুব বেশি ছাগলের প্রয়োজন পড়ে না।
কিন্তু এখানে প্রশ্ন থেকে যায় যে, অন্যান্য বুনো তৃণভোজী প্রাণীরাও এখানে আসে ক্ষুধা মেটাতে। শুধুমাত্র গৃহপালিত পশুরা কেন এই পরিবর্তনের জন্য দায়ী? এর জবাবে তিনি বলেন, বুনো পশুরা এক স্থানে খুব বেশিক্ষণ থাকে না শিকার হবার ভয়ে। কিন্তু গৃহপালিত পশুরা মানুষের চোখের সামনে নিশ্চিন্তে চরে বেড়ায়। তৃণভোজী পশুরা যখন সব ঘাস, গাছ খেয়ে ফেলতো তখন এর নিচের মাটি সূর্যের আলোয় প্রতিফলিত হতো। আলোর এই প্রতিফলনে বায়ুমণ্ডল উষ্ণ হতো। উষ্ণ বায়ুমণ্ডলে মেঘ তৈরি হতো কম। তাই বৃষ্টিও বেশি হতো না। কমে যেতে শুরু করে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ। গৃহপালিত পশুদের অতিরিক্ত চরে বেড়ানোর কারণে সেখানে খরা দেখা দেয়। খরার জন্য সেখানকার গাছপালা বৃদ্ধি ব্যাহত হয়। যার ফলে শুকনা, ধূলিময় ও উষ্ণ মরু অঞ্চল তৈরি হয়।
এর আগে বিজ্ঞানীরা মনে করতেন, পৃথিবীর ঘূর্ণনেরি পরিবর্তনের জন্য এ অঞ্চলে বৃষ্টিপাত কমে যেয়ে মরু অঞ্চল সৃষ্টি করেছে। কিন্তু রাইট বলছেন, মানুষের স্থান পরিবর্তনের কারণে এই পরিবেশ তৈরি হয়েছে। যদি পৃথিবীর ঘূর্ণনের পরিবর্তনের কারণে এই অবস্থা হতো তাহলে এ অঞ্চলের পরিবেশ খুব ধীরে ধীরে পরিবর্তিত হতো। তৃণভোজী পশুর বিচারণের কারণে এ অঞ্চলের খুব দ্রুত পরিবর্তন হয়।রাইট জানান তারা এই তত্ত্বে অনেক প্রশ্ন এখনও রয়ে গেছে। তিনি এ বিষয়ে আরো গবেষণা করছেন। তিনি জানতে চান মানুষেরা এখানে আসলে কি কি করেছিলো।
অনেক বিশেষজ্ঞ রাইটের এ অনুসন্ধান নিয়ে একমত হতে পারছেন না। ক্যালিফোর্নিয়া অ্যাকাডেমি অব সায়েন্সের নির্বাহী পরিচালক ও পরিবেশবিদ জন ফলে বলেন, পৃথিবীর ঘূর্ণনের পরিবর্তনের ফলেই এ অঞ্চলের বর্তমান অবস্থার জন্য দায়ী। এ তত্ত্বে প্রচুর বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ আছে। এসময় গাছেরা মাটি থেকে সকল পানি শুষে নেয় এবং বায়ুমণ্ডলে তা জলীয়বাষ্প হয়ে ছাড়ে। যখন গাছ মারা যেতে শুরু করে তখন পানি সকল উৎস উধাও হতে শুরু করে। ফলে তা খরায় পরিণত হয়। তিনি রাইটের গবেষণার সমালোচনা করে বলেন, এ তত্ত্বে জন্য আরো বেশি গবেষণা প্রয়োজন। তার দাবি অনুসারে পর্যাপ্ত প্রমাণ এখনও পাওয়া যায়নি। তাই অনেক প্রশ্ন এখানে রয়ে গেছে।
রাইটের মতে, মানুষ যেখানে যায় সেখানকার আবহাওয়াতে ব্যাপক প্রভাব পড়ে। যেমন এশিয়া ও উত্তর আমেরিকায় তারা বিচারণ করে প্রকৃতিতে পরিবর্তন নিয়ে এসেছে। গাছের পরিমাণ কমে যাওয়ায় তা এখনই আবহাওয়ায় উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন এনেছে। বিজ্ঞানীরা বিশ্বাস করেন গাছ কাটার জন্যই আমাজনের বনে খরাপ্রবণতা তৈরি হচ্ছে। আমাজনের বৃষ্টিবনাঞ্চল বায়ুমণ্ডল থেকে কার্বন শুষে নিয়ে একটা ভারসাম্য বজায় রাখছিলো। কিন্তু এ বনের পরিমাণ কমে যাওয়াতে বৈশ্বিক উষ্ণতা বেড়ে চলছে।
রাইট বলেন, অতীত থেকে আমাদের শিক্ষা নিতে হবে। আমাদের পূর্বপুরুষের ভুল থেকে আমাদের ভবিষ্যতের সিদ্ধান্ত নিতে হবে। ৮ হাজার বছর আগে গৃহপালিত পশুদের অবাধ বিচরণের কারণে তা বৃষ্টির চক্রকে প্রভাবিত করেছিলো। একবার যখন বাস্তুসংস্থানের ভারসাম্যে সমস্যা দেখা দেবে তা সারা পৃথিবীতে বিপদ ডেকে আনবে। তাই আমাদের এখন থেকে সতর্ক থাকা উচিত।