আবেগ নয়, বাধ্য হয়েই শিশু বা কুকুরছানা দেখলেই আদর করতে ইচ্ছে করে?
এই ব্যাপারটিকে ‘কিউট অ্যাগ্রেশন’ বলে স্বীকৃতি দিয়েছে বিজ্ঞান। ক্যালিফোর্নিয়া ইউনিভার্সিটির বিজ্ঞানীরা এই কিউট অ্যাগ্রেশন নিয়ে গবেষণা চালাচ্ছেন। সম্প্রতি ‘ফ্রন্টায়ার্স’ জার্নালে প্রকাশিত ব্যবহারিক স্নায়ুবিদ্যা বিভাগে এই গবেষণা নিয়ে বিস্তারিত একটি রিপোর্ট প্রকাশিত হয়। তাতেই শিশু বা কুকুরছানার প্রতি মানুষের এমন ব্যবহারের নেপথ্যে মস্তিষ্কের আচরণকেই দায়ী করছেন বিজ্ঞানীরা।
গবেষক দলের প্রধান ক্যালিফোর্নিয়া ইউনিভার্সিটির সহ-অধ্যাপক ক্যাথরিন স্ট্যাভরোপোলাস বলেছেন, ‘এই গবেষণার মাধ্যমে মানুষের ব্যবহারিক মনস্তত্ত্বকেই বোঝার চেষ্টা চালানো হয়েছে। দেখা গেছে, যখনই মিষ্টি বা সুন্দর কোনোকিছু দেখি, তখনই মস্তিষ্কের রিওয়ার্ড সিস্টেম (স্নায়বিক অংশ যেখানে নানা রকম আবেগ, ভাললাগা, মন্দলাগা, চাওয়া-পাওয়ার অনুভূতি জাগে) আগ্রাসনের সঙ্গে উত্তেজিত হয়। বিশেষ করে মস্তিষ্ক কী চাইছে বা কোন বিষয়ে ঠিক কেমন অনুভূতির প্রকাশ প্রয়োজন তা তখনই কিছুটা নির্ধারণ হয়ে যায়। এর সঙ্গেই যোগ হয় আবেগ নিয়ন্ত্রণকারী সেনসরি অংশের কাজ।
এই গবেষণায় কেবল স্নায়ুবিদ্যা ও শারীরবিদ্যাই নয়, বিজ্ঞানীরা সাহায্য নিয়েছিলেন পদার্থবিদ্যারও। ইলেকট্রোসাইকোলজির মাধ্যমে মস্তিষ্কেরস্নায়ুর কার্যকলাপ দেখে এই বিষয়ে বেশ কিছু সিদ্ধান্তে আসেন বিজ্ঞানীরা। এতে মস্তিষ্কের নিউরনে বিদ্যুতের সক্রিয়তার পরিমাপ করা যায়। তা থেকেই অনুভূতির অঙ্ক কষে ফেলতে পারেন বিজ্ঞানীরা।
গবেষণায় ১৮ থেকে ৪০ বছর বয়সী ৫৪ জন নারী-পুরুষের উপর একটি বিশেষ পরীক্ষা চালান স্ট্যাভরোপোলাস ও তার সহকারী লরা অ্যালবা। এদের প্রত্যেককে বিশেষ পদ্ধতির বিদ্যুৎ পরিবাহী টুপি পরানো হয়। এমনভাবে সে টুপি বানানো হয়, যাতে বিদ্যুত্স্পৃষ্ট না হন তারা। টুপি পরানোর সময় ৩২টি ছবির চারটি করে ব্লক দেখানো হয় তাদের। প্রতিটি ব্লক কম্পিউটার স্ক্রিনে ভেসে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে তাদের কোনো একটি অনুভূতিব্যঞ্জক মন্তব্য করতে বলা হয় ও ১ থেকে ১০ এর মধ্যে নম্বর দিতে বলা হয়।
স্ট্যাভরোপোলাস আরও বলেছেন, ‘গবেষণায় দেখা গেছে, কিউট কিছু দেখার সঙ্গে মস্তিষ্কের রিওয়ার্ডসিস্টেমের সঙ্গেআবেগের সেনসরি অর্গ্যান খুব শক্তিশালী যোগাযোগ স্থাপন করছে। তা থেকেই মস্তিষ্কে এক আগ্রাসন ঘটে (কিউট অ্যাগ্রেশন)। তাই শিশু বা কুকুরছানা দেখলেই আদর করার ইচ্ছা জাগে।’