গেরুয়া পড়লেই কালো থেকে সাদা!
কলকাতা টাইমস :
গেরুয়া শিবিরকে কংগ্রেস, তৃণমূলসহ সব বিরোধীরাই কয়লা ধোয়ার মেশিনের তকমা দিয়েছে৷ আরোপ-প্রত্যারোপ বাদ দিলে যদি বিশ্লেষণের চোখে দেখা যায় তাহলে ২০১৪ সালে বিজেপির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি গদিতে বসার পর থেকে বিরোধী শিবিরগুলি থেকে এমন ২৫ জন নেতা দলবদল করে গেরুয়াধারী হয়েছেন যারা একসময় কেন্দ্রীয় এজেন্সিগুলির দুর্নীতির মামলায় অভিযুক্ত ছিলেন৷
দেশের প্রখ্যাত সংবাদ মাধ্যম দি ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের একটি অনুসন্ধানী রিপোর্টে এই তথ্য প্রকাশ বলছে মোদি জমানায় কংগ্রেস থেকে দলবদল করেছেন ১০ জন, শারদ পাওয়ারের এনসিপি এবং শিবসেনা থেকে চারজন করে, তৃণমূল কংগ্রেসের ৩, তেলুগু দেশম পার্টির ২ এবং সমাজবাদী পার্টি এবং ওয়াইএসআরসিপি থেকে একজন করে বিজেপির পদ্ম পতাকা হাতে নিয়েছেন৷
দলবদলকারি এই সমস্ত নেতাদের মধ্যে বেশকিছু নেতা এমন আছেন যাদের বিরুদ্ধে দিনের পর দিন মামলা করতে চেয়ে আবেদন করেছে সিবিআই৷ যেমন ২০১৯ সাল থেকে বর্তমান বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সিবিআই লোকসভা স্পিকারের অনুমোদনের অপেক্ষায় দিন গুনেছে৷ তৎকালীন তৃণমূলের সাংসদ শুভেন্দু নারদ স্টিং অপারেশনে অভিযুক্ত৷ এরপর ২০২০ সালে শুভেন্দু তৃণমূল ছেডে় বিজেপিতে যোগ দেন৷ একইভাবে অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা এবং প্রাক্তন মারাঠা মুখ্যমন্ত্রী অশোক চব্যনের মামলাতেও দাঁডি় পডে় যায়৷ সারদা চিটফান্ড মামলায় ২০১৪ সালে হিমন্তকে জিজ্ঞাসাবাদ এবং তাঁর বাডি়তে তল্লাশি চালায়৷ ২০১৫ সালে বিজেপিতে যোগ দেওয়ার আগে পর্যন্ত তাঁর বিরুদ্ধে মামলা চলেছিল৷ চ্যবনের ক্ষেত্রেও আদর্শ হাউজিং মামলায় সিবিআই-ইডি থমকে দাঁডি়য়ে রয়েছে৷ এ কারণেই বিরোধী দলরা একেই ওয়াশিং মেশিন থিওরি বলে প্রচার চালাচ্ছে৷ নিজের দল ছেডে় বিজেপিতে যোগ দিলেই তাঁদের অতীতে কলঙ্ক ধুয়ে যাচ্ছে বলে বহুবার অভিযোগ তুলেছেন রাহুল গান্ধি থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷
তার আগে অবশ্য বিজেপিতে যোগ দেওয়ার প্রাক্তন কংগ্রেস এমপি জ্যোতি মির্ধা এবং প্রাক্তন তেলুগু দেশম পার্টির এমপি ওয়াইএস চোধুরির নাম বড় উদাহরণ৷ আগে দূর্নীতিতে জড়িত এই দুই নেতা বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পরই তাদের বিরুদ্ধে কোনও সাক্ষ্যপ্রমাণ জোগাড় করতেই ব্যর্থ হয় ইডি৷ এ বিষয়ে সিবিআইয়ের এক কর্তা নামপ্রকাশ না করে বলেন, আমরা প্রমাণের ভিত্তিতে চলি৷ প্রমাণ সংগ্রহ হলেই পদক্ষেপ হয়৷ বিজেপিতে যোগদানের পরেই মামলার মোড় ঘুরে যাওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কিছু সময় বিভিন্ন কারণে পদক্ষেপে দেরি হয়, কিন্ত্ত সেগুলির ফাইল খোলাই থাকে৷
উল্লেখযোগ্য, দলবদলকারী এই ২৫ বিজেপি নেতাদের মধ্যে ২৩ জনের ক্ষেত্রে মামলা ধামাচাপা পডে় গিয়েছে৷ তিনটি মামলায় তালা পডে়ছে৷ ২০টি মামলা থেমে রয়েছে অথবা হিমঘরে ঢুকে গিয়েছে৷ সব মিলিয়ে দলবদলু ওইসব নেতানেত্রীদের প্রতি তদন্তকারী সংস্থার পদক্ষেপ সেখানেই থেমে রয়েছে৷ বর্তমান লোকসভা ভোটের আগের চিত্রও যদি দেখা যায় তাহলে দেখা যাবে এই ভোটের বছরেই ৬ জন এমন রাজনীতিক বিজেপিতে নাম লিখিয়েছেন যারা বিরোধী দলে থাকাকালীন ইডি এবং সিবিআই তৎপরতায় বিদ্ধ ছিলেন৷
২০০৯ সালে কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউপিএ সরকারের জমানায় এনডিএ-র সঙ্গে মাখামাখি থাকায় বহুজন সমাজ পার্টির মায়াবতী এবং সমাজবাদী পার্টির মুলায়ম সিং যাদবকে নিয়ে টানাটানি করে সিবিআই৷ সাম্প্রতিক ক্ষেত্রে মহারাষ্ট্রের রাজনৈতিক সংকটে কেন্দ্রীয় পদক্ষেপ কাজ করেছে বলে অনেকেরই সন্দেহ৷
প্রথমে শিবসেনা ভেঙে বেরিয়ে আসেন একনাথ শিন্ডে৷ ২০২২ সালের ওই ঘটনার পরের বছরই শরদ পাওয়ার ঘর ভেঙে চলে আসেন তাঁর ভাইপো অজিত পাওয়ার৷ এরপরেই দেখা যায়, এনসিপি-র দুই দোর্দণ্ডপ্রতাপ নেতা অজিত পাওয়ার এবং প্রফুল প্যাটেলের বিরুদ্ধে মামলাগুলিতে ইতি পডে় যায়৷ ২৫ জনের এই তালিকার ১২ বড় নেতাই হলেন মারাঠা৷ যাঁদের ২০২২ বা তার পরে বিজেপিতে ভিডে়ছেন৷ এনসিপি, শিবসেনা ও কংগ্রেস ছেডে় তাঁরা মোদীর নেতৃত্বে বিকশিত ভারত গড়ার লক্ষ্যে নেমেছেন আপাতত৷ তারপর থেকেই অতীতের কলঙ্ক ধুয়ে সাফ হয়ে গিয়েছে৷