জেলের মধ্যেই লিভ টুগেদার! ফুলন আর মান সিংয়ের
আবার চম্বল কাহিনী, এবার মিশন ‘ফুলন’ !!! (পর্ব ১০)
সৌগত রায়বর্মন:
ফুলন সম্পর্কে এ হেন মন্তব্য শুনে আমরা তো থ। ব্যাপারটা কি? পরে শুনেছিলাম আসল কাহিনী।
স্বামীর হাতে ক্রমাগত লাঞ্ছিতা হতে হতে ফুলন একদিন শ্বশুর বাড়ি ছেড়ে পালায়। ছোট বেলা থেকেই সে অত্যন্ত মুখরা এবং জেদী। স্বামীর ওপর প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য তাকে আশ্রয় নিতে হলো ডাকু বাবুরাম গুর্জরের দলে। গুর্জরের কাছে সে অস্ত্র শিক্ষা নিতে চায়, যাতে স্বামীর ওপর প্রতিশোধ নিতে পারে।
বাবু গুর্জরের শুষ্ক রুক্ষ জীবনে এলো একটু রসের ধারা । কিন্তু ফুলন তো আর বাবুরামের শয্যা সঙ্গিনী হতে স্বামীর ঘর ছেড়ে আসেনি! সে এসেছে প্রতিহিংসা চরিতার্থ করতে।
বাবুরাম ফুলনের কাছে প্রত্যাখ্যাত হল।কিন্তু হরিণ এসেছে স্বেচ্ছায় বাঘের ডেরায়। বাঘ কি হরিণের মাংস খাবে না?
ফলত বাবুরাম ফুলনকে জোর করে ভোগ করতে লাগল। ভোগ না বলে সরাসরি ধর্ষণ বলাই ভালো। ফুলন বুঝল, বাবুরাম তাকে রক্ষিতা করে রাখতে চায়।
কিন্তু ফুলনকে রক্ষিতা করে এমন সাধ্য কার? ফুলন সুযোগের সন্ধানে ছিল। একদিন অপ্রত্যাশিত ভাবে তা পেয়েও গেল।
পালালো ফুলন। দুর্গম পথে দু’দিন টানা হেটে ফুলন পৌঁছে গেল সেই সময়কার ডাকু রাজ মালখানের ডেরায়। মালখানর আর যাই হোক নারীর প্রতি লোভ একদম ছিলনা।
মালখানের কিন্তু ফুলনের প্রস্তাব কোনো ভাবেই মনঃপুত হল না। কেনো ? সেই জাতপাত।
ফুলন মালহা। নিম্নবর্গের। মালখান উচ্চ বর্ণের গুর্জর ঠাকুর। ক্ষত্রিয়।
নিম্নবর্গের এক প্রান্তিক মহিলা প্রতিশোধ নেবে স্বামীর ওপর? এত সাহস? তাও আবার মালখানের সাহায্যে? না মুমকিন।
আরো একটা কারণ আছে। সেখানেও জাতপাত । ফুলনকে যে রক্ষিতা করে রাখতে চায় সেই গুর্জর ঠাকুর। তার নিজের জাতের ডাকু। বাবুরাম তার যতই প্রতিদ্বন্দ্বী হোক, জাতের নামে সে শত্রুতা করতে পারবে না।
সুতরাং মালখান ফুলনকে সব চাইতে সহজ উপদেশ দিল। ফুলন যেন বাবুরাম এর কাছেই ফিরে যায়।
ফুলনের দুই চোখ সেদিন আগুনের মতো জ্বলে উঠলেও তার তখন কিচ্ছু করার ছিল না। ফুলনের কাহিনী এখানেই শেষ নয়।
আমাদের গাইড সাহেব সেই মুহুর্তে যা বলেছিল মালখানের তর্জমায় তাই বর্ণিত হল। পরের কথা না হয় ফুলনের মুখ থেকেই শুনব!
মনে মনে ভাবলাম, দুই দুশমন পাশাপাশি সেলে থাকে। কবে যে কী কাণ্ড ঘটে যাবে কে জানে!
মলখানের উষ্ণ আলিঙ্গনে আমাদের বিদায় পর্ব সাঙ্গ হল। ভাবলাম কলকাতার মাস্তানরা বা আমাদের সার্জেন্ট যদি এই দৃশ্য দেখত, নিশ্চই আমায় বিনা পয়সায় তাদের দলে লাইফ মেম্বার করে নিত।
সেল বা ঘরের বাইরে বেরিয়ে বুঝলাম গরমের মাস্তানি কিছুটা কেটেছে। কিন্তু তাও যতটুকু আছে তাও কম কিছু নয়। ফুরফুরে মেজাজে দিব্যর দিকে তাকিয়ে বলে উঠলাম, কই রে আমাদের ফুল কি রানী কোথায়? তার মুখটি একটু দেখি!
পাশের গাইড বাবুটি আমার ডানহাতে এমন একটা চিমটি কাটল যে মনে হল মৌমাছির চাকে ঢিল মেরেছি। পাশ ফিরতেই দেখি সে এমন ভাবে চোখ বিস্ফারিত করে ইশারায় আমাদের কি যেন ইশারা করছে, যেন রানী এলিজাবেথ ভারতের জেলে বসে পেপসি খাচ্ছে। দিব্য ব্যাপারটা বুঝে গিয়েছিলো। আমার দিকে তাকিয়ে ঠোঁটে আঙ্গুল রেখে চুপ করতে বলল।
ওর চোখ অনুসরণ করে দেখলাম, জেলের যে বিশাল জাম গাছটা আছে তার তলায় গোল করে বসে আছে বেশ কিছু ডাকাত। বুঝলাম গপ্প করছে। আমি তো তেমন কাউকে দেখতে পাচ্ছি না।
আমাদের গাইড বাবুটি ততক্ষণে বেদীর দিকে হাঁটা দিয়েছে। তাকে অনুসরণ করে আমরাও এগোলাম। দেখলাম ওই দলে বসে আছেন তিনি। পরনে সাদা শার্ট। সাদা প্যান্ট। গুজে। কোমরে চওড়া বেল্ট। কাঁধে পুলিশি বক্লোস। ছোট করে কাটা চুল। দুর থেকে দেখে বোঝার উপায় নেই, তিনি নারী না পুরুষ !
মুখের দিকে তাকাতেই বুঝলাম ইনিই তিনি।চম্বল কি রানী ফুলন দেবী। সেই গণহত্যার পর দেশের এমন কোনো কাগজ ছিলনা যেখানে তার ছবি ছাপা হয়নি। তাই মুখ দেখেই চেনা গেলো।
মাঝারি হাইট। রোগাও না, আবার মোটা ও না। মুখে দীর্ঘ বিপদ সঙ্কুল জীবনের রুক্ষতা টের পাওয়া যাচ্ছে। এক পলকে বোঝাই যাবে না, এই সেই ফুলন। সুন্দরী কিনা বলা কঠিন। অন্তত সেই মুহুর্তে বিচারের ক্ষমতা আমাদের ছিলনা । চোখের দিকে ভালো করে তাকাতে ভয় লাগছে। ফুলনের নামে এতটাই আতঙ্ক তখন সমস্ত উপত্যকা জুড়ে, সেই আতঙ্ক আমাদের মধ্যেও বোধ হয় সঞ্চারিত হয়েছিলো।
দেখলাম ফুলনের কোমর জড়িয়ে একেবারে কেস্টা ব্যাটার স্টাইলে বসে আছে এক অপূর্ব সুন্দর যুবক। লম্বা, টকটকে ফর্সা, একমাথা চুল ঝুঁটি করে বাঁধা, হর্স টেল।
এই যুগল মুর্তি দেখে আমাদের মধ্যেও কেমন যানি একটা ভক্তি ভাব এসে গেল।মনে মনে ভাবলাম, রাধিকার হয়েও তাহলে বন্দুক ওঠে?
আরো একটা ব্যাপার জানা গেল পরে, ফুলন আর সেই যুবক, মান সিং, একই সেলে থাকে স্বামী স্ত্রীর মতন। লিভ টুগেদার এখন খুবই জনপ্রিয়, কিন্তু তখন এই সম্পর্কের কথা আমরা জানতামই না। তবে জেলে লিভ টুগেদার সম্ভবত বিশ্বে প্রথম করে দেখিয়ে ছিল এই ফুলন আর মান সিং। একেই বলে হিম্মত।
আমাদের গাইড কাম পুলিশবাবাজি ততক্ষণে ফুলনের পায়ের কাছে নতজানু হয়ে বসে পড়েছে। কিছু একটা বোঝানোর চেষ্টা করছে। বুঝলাম প্রসঙ্গ আমরাই। কিছুক্ষণ পরে দেখলাম নিজেই হাত নেড়ে আমাদের কাছে আসতে বলছে। আমরা আলোর চাইতেও দ্রুত গতিতে রানীর কাছে পৌঁছে গেলাম। নতজানু হবার পরের মুহূর্তেই শুনলাম সেই অমর বাণী।
ম্যায় ক্যায়া রেন্ডি হু? মেরে বারে মে গরম গরম কাহানি লিখোগে?
-ক্রমশ