চোখের সামনে লুটিয়ে পড়ল, ভাই, স্ত্রীকে বাঁচাতে-বাঁচাতে স্বামীও
কলকাতা টাইমস :
ভোপাল গ্যাস দুর্ঘটনা যেন উস্কে দিল লুধিয়ানার ঘটনা। রবিবার সকালে লুধিয়ানার কারখানায় গ্যাস লিকের ঘটনায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১১। গ্যাস লেকের আসল ঘটনা পুলিশ না জানালেও স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, কারখানার বন্ধ থাকা নর্দমা থেকে এই গ্যাস লিক করেছে। সেই গ্যাস ছড়িয়ে পড়তেই এলাকায় দমবন্ধ করা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।
লুধিয়ানার ইস্টম্যান চকের কাছে সুয়া রোড সেটি বাজার এলাকা। সেখানেই ঘটনাটি ঘটে। ঘটনা প্রসঙ্গে পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী ভগবত মান টুইটে জানিয়েছেন, পুলিশ, জেলা প্রশাসন এবং ন্যাশনাল ডিজাস্টার রেসপন্স ফোর্স দল উদ্ধার ও ত্রাণের কাজ শুরু করেছে। মৃত ১১জনের মধ্যে ছয়জন পুরুষ ও পাঁচজন মহিলা।
মুখ্যমন্ত্রী আরও জানিয়েছেন, দমকল ও এনডিআরএফ গ্যাসের চরিত্র বোঝার চেষ্টা করছে। লুধিয়ানার পুলিশ কমিশনার মনদীপ সিং সিধু জানান, কেউ ছাদে বা অন্য কোথাও অচেতন অবস্থায় জানতে এলাকায় ড্রোন ব্যবহার করা হয় ।
লুধিয়ানার গিয়াসপুরের জনবহুল এলাকায় এই ঘটনা ঘটে। শুধু কারখানার শ্রমিক বা কর্মীরা নন, এলাকার বহু মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়েন। ঘটনার খবর পাওয়া মাত্র জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী দ্রুত উদ্ধারকাজ শুরু করে। কিন্তু এলাকার মানুষের চোখে-মুখে ফুটে উঠেছে আতঙ্কের ছবি। প্রত্যক্ষদর্শীদের বয়ানেও উঠে এসেছে সেই কথা। জানা গিয়েছে, মৃতদের মধ্যে অধিকাংশই পরিযায়ী শ্রমিক। অসুস্থের অনেকে অজ্ঞান হয়ে পড়েন, প্রত্যক্ষদর্শীদের গলাতে আতঙ্কের সুর।
অরবিন্দ চৌবে সংবাদমাধ্যমে এক সাক্ষাৎকারে দাবি করেন যে, তিনি কারখানার নর্দমা থেকে ধোঁয়া বের হতে দেখেন। তিনি বলেন, ‘আমার চোখের সামনেই একজন রাস্তায় অজ্ঞান হয়ে পড়েন।’ রবিবার ছুটির দিনে ভাইয়ের সঙ্গে ক্রিকেট খেলার প্ল্যান বানিয়েছিলেন অরবিন্দ। কিন্তু সকাল ৭টা নাগাদ ভাইয়ের থেকে জানতে পারি এই ঘটনা। তাঁর কথায়, ‘তৎক্ষনাৎ ছুটে যাই ঘটনাস্থলে। হাত লাগাই উদ্ধারকাজে। আমাদের গ্যাসে কষ্ট হচ্ছিল।’
অরিন্দমের ভাই আশিসের কথায়, ‘রাস্তায় বেশ কয়েকজনকে অজ্ঞান হয়ে পড়ে থাকতে দেখি। আমাদের চোখের সামনেই একজন পড়ে যান। আমরা তাঁকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করি।’ তিনি আরও বলেন, কিছুদূর এগোতেই চোখে পড়ে একজন লোক তাঁর স্ত্রীর মুখে জলের ছিটে দিচ্ছেন। জ্ঞান ফেরানোর চেষ্টা করছেন। সাহায্যের জন্য এগিয়ে যেতেই দেখি সেও রাস্তায় ঢলে পড়ে যায়।
আশিস বলেন, ‘সর্বত্র ধোঁয়ায় ঢেকে গিয়েছিল। আমারও দম প্রায় বন্ধ হয়ে আসছিল। তার মধ্যেই কোনওরকমে পুলিশ ও উদ্ধারকারী দলকে খবর দিই। তাঁরা এসেই সকলকে উদ্ধার করে নিরাপদ জায়গায় নিয়ে যায়।’
এলাকার আর এক বাসিন্দা আরজু খানের মুখে শোনা গেল আরও মর্মান্তিক কাহিনি। গ্যাস লিকের কারণে চোখের সামনে তাঁর ১২ বছরের ভাই মারা যায়। কান্না ভেজা গলায় তিনি বলেন, ‘আমার ভাই ঘরেই ছিল। ঘরের জানলা খোলা ছিল। সেখান থেকেই বিষাক্ত গ্যাস ঢুকে পড়ে ঘরে। ছুটে গিয়ে দেখি ভাই বিছানায় পড়ে আছে। জ্ঞান নেই।’ কাঁদতে কাঁদতে আরজু বলেন, ‘বাঁচাতে পারলাম না ভাইটাকে।’
ভোপালের গ্যাস দুর্ঘটনার স্মৃতি ফিরে এসেছে লুধিয়ানায়। এক স্থানীয় বাসিন্দা দাবি করেন, তাঁর আত্মীয় সৌরভ গোয়েল (২৮), স্ত্রী ত্রিতি, ভাই গৌরব, মা এবং আট বছরের পুত্রসন্তান আটকে পড়েন এই গ্যাস দুর্ঘটনায়। সৌরভ, তাঁর স্ত্রী ও মায়ের মৃত্যু হয়েছে। বাচ্চাটির অবস্থা আশঙ্কাজনক।