পুরুষরা সাবধান! চুল যত পড়ছে ততই হার্টের সর্বনাশ !
কলকাতা টাইমস :
শুনতে একটু আজব লাগলেও একথা ইতিমধ্যেই প্রমাণিত হয়ে গেছে সময়ের আগে টাক পড়া অথবা চুল সাদা হয়ে যাওয়ার অর্থ হল হার্ট খরাপ হতে শুরু করেছে। তাই আপনার সঙ্গেও যদি এমনটা হয়ে থাকে, তাহলে সময় নষ্ট না করে যত শীঘ্র সম্ভব কার্ডিওলজিস্টের সঙ্গে পরামর্শ করুন। না হলে কিন্তু বেজায় বিপদ! সম্প্রতি একদল গবেষক এমনটা দাবি করেছেন যে ‘মেল প্যাটার্ন হেয়ার লস’ বা ছেলেদের মাত্রাতিরিক্ত পরিমাণে চুল পড়তে থাকলে বুঝতে হবে হার্টের পেশীরা ঠিক মতো কাজ করতে পারছে না। আর এমনটা যদি ৪০ বছরের আগে হয়ে থাকে, তাহলে কিন্তু ভিষণ বিপদ! কারণ এমন ক্ষেত্রে হঠাৎ করে হার্ট অ্যাটাক হওয়ার আশঙ্কা মারাত্মকভাবে বৃদ্ধি পায়।
কার্ডিওলজিকাল সোসাইটি অব ইন্ডিয়ার ৬৯ তম বার্ষিক সম্মেলনে এ বিষয়ে আলোচনা করতে গিয়ে এই গবেষণাটির সঙ্গে যুক্ত চিকিৎসকেরা জানান, ৪০ বছরের কম বয়সী প্রায় ৭৯০ জন পুরুষের উপর এই পরীক্ষা চালাতে গিয়ে তারা খেয়াল করেছেন যাদের হার্টের অবস্থা খুবই দুর্বল, তাদের হয় চুল পড়ার হার সাধারণ মানুষদের থেকে বেশি, নয়তো অসময়েই তাদের চুল পেকে গেছে। এমনটা কেন হয়েছে সে বিষয়ে আরও জানতে গবেষণা চলছে ঠিকই। কিন্তু গবেষকরা একটা বিষয়ে নিশ্চিত হয়েছেন যে চুল পড়া বা আকাল পক্কতার সঙ্গে হার্টের ভাল-মন্দের একটা সম্পর্ক রয়েছে।
এখন প্রশ্ন হল আপনাদের মধ্যে যদি কারও এমন হয়ে থাকে, তাহলে কী করণীয়? এক্ষেত্রে নিয়মিত কতগুলি খাবার খেতে হবে। কারণ ভিন্ন এক গবেষণায় দেখা গেছে যে কোনও পরিস্থিতিতে হার্টকে সুস্থ রাখতে এই খাবারগুলি বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। তাই দীর্ঘদিন যদি সুস্থভাবে বাঁচতে চান, তাহলে প্রতিদিনের ডায়েটে এই খাবারগুলিকে অন্তর্ভুক্ত করতেই হবে…
১. মাছ
একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে নিয়মিত মাছ খাওয়ার অভ্যাস করলে শরীরে ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিডের মাত্রা বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। সেই সঙ্গে বেশ কিছু উপকারি অ্যামাইনো অ্যাসিডের ক্ষরণও বেড়ে যায়। এই উপাদানগুলি হার্টের কর্মক্ষমতা বাড়ানোর মধ্য দিয়ে করোনারি আর্টারি ডিজিজকে দূরে রাখতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। সেই সঙ্গে হার্ট অ্যাটাকের আশঙ্কাও কমায়। তাই যদি লক্ষ্য করে থাকেন যে চুল পড়া বেড়ে গেছে, তাহলে মাছের সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে ভুলবেন না যেন!
২. বাদাম
অফিসে কাজের ফাঁকে পেট ভরাতে এবার থেকে চিপস বা স্যান্ডউইচের মতো খাবার না খেয়ে বরং এক মুঠো করে বাদাম খাওয়া শুরু করুন। এমনটা করলে হার্ট নিয়ে দেখবেন আর কোনও চিন্তাই থাকবে না। আসলে বাদামে থাকা একাধিক উপকারি উপাদান একদিকে যেমন শরীরে উপস্থিত খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায়, তেমনি রক্তচাপকে স্বাভাবিক রাখতেও বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। আর একবার কোলেস্টেরল এবং রক্তচাপ যদি স্বাভাবিক মাত্রায় চলে আসে, তাহলে হার্টকে নিয়ে আর কোনও চিন্তাই থাকে না।
৩. জাম
চুল পড়া যদি বেড়ে গিয়ে থাকে, তাহলে নিয়মিত এক বাটি করে জাম খাওয়া মাস্ট! কারণ একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে জামে থাকা ফাইটোনিউট্রিয়েন্টস, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ফাইবার শরীরের ভেতরে প্রবেশ করার পর এমন খেল দেখাতে শুরু করে যে হার্টের স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটতে শুরু করে। তাই মাথা ফাঁকা হতে শুরু করলে জামের ওপর ভরসা রাখতে ভুলবেন না যেন!
৪. শণ বীজ বা ফ্ল্যাক্স সীড
আপনারা নিশ্চয় এতক্ষণে একথা জেনে গেছেন যে, হার্টকে সুস্থ রাখতে যে যে উপাদানগুলি বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে, তাদের মধ্যে অন্যতম হল ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড। আর এই উপাদানটি মাছের পাশাপাশি প্রচুর মাত্রায় মজুত থাকে শণ বীজে। তাই হার্টকে যদি দীর্ঘদিন চাঙ্গা রাখতে চান, তাহলে নিয়মিত এই প্রাকৃতিক উপাদানটি গ্রহণ করতে হবে। এমনটা যদি করতে পারেন, তাহলে যতই চুল পড়ুক না কেন, হার্টকে নিয়ে আর কোনও চিন্তাই থাকবে না।
৫. ওটস মিল
বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে নিয়মিত ব্রেকফাস্টে ওটস মিল খাওয়া শুরু করলে শরীরে এত মাত্রায় পুষ্টিকর উপাদানের প্রবেশ ঘটে যে খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা বৃদ্ধি পাওয়ার কোনও আশঙ্কাই থাকে না। সেই সঙ্গে রক্তচাপও স্বাভাবিক থাকতে বাধ্য হয়। ফলে হার্টের কোনও ধরনের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা থাকে না।
৬. পালং শাক
কয়েক মাস ধরে কি চুল পড়ার হার বেড়ে গেছে? তাহলে তো বন্ধু এখনই চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করা উচিত। সেই সঙ্গে নিয়মিত পালং শাক খাওয়ার প্রয়োজনও রয়েছে। কারণ বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে এই সবুজ সবজিটির ভেতরে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরে প্রবেশ করার পর দেহে উপস্থিত ক্ষতিকারণ টক্সিক উপাদানদের বের করে দেয়। ফলে স্বাভাবিকভাবেই হার্টের কোনও ধরনের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা একেবারে কমে যায়।
৭. কমলা লেবু এবং পেঁপে
এই দুটি ফলে বিটা-ক্যারোটিন নামক এক ধরনের উপাদান থাকে, যা হার্টের স্বাস্থ্যের উন্নতিতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। প্রসঙ্গত, কমলা লেবু এবং পেঁপেতে উপস্থিত পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম এবং ফাইবারও এক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।