কলকাতা টাইমস :
কোনো মতে দুটো শব্দ উচ্চারণ করতে পারত সে। ‘বাবা’ আর ‘মাম্মা’। আড়াই বছর বয়সেও যখন আর কথা ফুটল না, সবসময়ে ঘাড় গুঁজে বসে থাকাটাই স্বভাবে পরিণত হল, বাবা-মা ছুটলেন ডাক্তারের কাছে। তাহলে কি আমাদের সন্তান অটিস্টিক? কেন ও কথা বলে না? কেন চোখের দিকে তাকায় না? গেলেন স্পিচ থেরাপিস্টের কাছেও। বাচ্চাটাকে কথা বলতে শেখাতে হবে তো!
ডাক্তার দেখলেন। সময় নিলেন। তারপর জানালেন, চিকিৎসা একটাই এবং তা দীর্ঘ। শিশুটির জীবন থেকে ‘স্ক্রিন টাইম’ (বেশিরভাগ সময় মোবাইল, ট্যাব, কম্পিউটার বা টিভির দিকে তাকিয়ে থাকা) আপাতত পুরোপুরি বাদ দিতে হবে। অনর্গল কথা বলতে হবে ওর সঙ্গে। তবেই কথা বলতে শিখবে ও।
সাম্প্রতিক এক বেসরকারি সমীক্ষায় ধরা পড়েছে, স্পিচ থেরাপিস্টের কাছে ইদানিং দুই থেকে পাঁচ বছরের শিশুদের ভিড়ই বেশি। শিশু কথা বলতে পারছে না। কারণ, বাড়িতে কেউ তার সঙ্গে কথা বলছে না। তার হাতে ধরিয়ে দেয়া হচ্ছে মোবাইল কিংবা ট্যাব। ব্যস্ত বাবা-মাকে সন্তানের হাজারও বায়না সামলাতে হচ্ছে না। এমনকি তাকে খাওয়ানোর ঝক্কি উধাও। হাতে ট্যাব ধরালে নিমেষে শেষ হচ্ছে মুখের গ্রাস।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শিশু কারও সঙ্গে কথা বলার সুযোগ না পাওয়ায় কথা শিখছে না। কারও সঙ্গে তার যোগাযোগ তৈরি হচ্ছে না। সে নিজেকে প্রকাশও করতে পারছে না। প্রাথমিক উপসর্গ দেখে অনেকেই ভেবে নিচ্ছেন, অটিজম। পরে বোঝা যাচ্ছে, আসল সমস্যা অন্য জায়গায়। জন্মের কয়েক মাস পর থেকেই ‘স্ক্রিন টাইম’ গ্রাস করেছে তাকে। কলকাতার শিশু চিকিৎসকদের অধিকাংশই জানাচ্ছেন, এই আসক্তি ক্রমশ ‘মহামারি’র রূপ নিচ্ছে।
প্যারেন্টিং কনসালট্যান্ট পায়েল ঘোষ জানান, শিশুর চোখের দিকে তাকিয়ে কথা বলা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। মজার কথা বলা, সে কোনো মজার আচরণ করলে হাসা, সবই চোখের মাধ্যমে বোঝা যায়। ট্যাব বা মোবাইল ধরিয়ে তা হয় না।
শিশু চিকিৎসক জানান, ট্যাব-মোবাইল নিয়ে থাকায় পরবর্তী সময়ে শিশুর মনঃসংযোগে বড় ঘাটতি ধরা পড়ে। সে ভাবতে শেখে না, ফলে পড়াশোনায় মন দিতে পারে না। দীর্ঘক্ষণ মোবাইল বা ট্যাবের আলো তার ঘুমে ব্যাঘাত ঘটায়। সে কারণে হজমের সমস্যাও হয়। তার কথায়, ‘সবমিলিয়ে আনসোশ্যাল, অমনোযোগী শিশুতে পরিণত হয় সে। যার দায় বাবা-মা এড়াতে পারেন না।’
চোখের চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, টানা স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকায় যে ধরনের সমস্যা হয়, তাকে চিকিৎসার পরিভাষায় বলে অ্যাস্থেনোপিয়া। চোখের চিকিৎসক জ্যোতির্ময় দত্ত বলেন, ‘এক নাগাড়ে মোবাইল বা ট্যাবের দিকে তাকিয়ে থাকলে চোখের ওপরে চাপ বাড়ে। কারণ, চোখকে ক্রমাগত স্ক্রিনের দৃশ্যের সঙ্গে মানিয়ে নিতে হয়। চোখের ভিতরের পেশিগুলোকে অতিরিক্ত কাজ করতে হয়। তাছাড়া, চোখের পাতা উপর-নিচ করা কমে যাওয়ায় কর্নিয়া শুকিয়ে যাওয়ার ঝুঁকিও থাকে।’