টাকা কিংবা টিকিট, সব এবার ত্বকের নিচে!
কলকাতা টাইমস :
হেডলাইন পড়ে নিশ্চয় অবাক হয়ে গেলেন। অবাক হওয়ার মতোই ব্যাপার। সম্প্রতি সুইডেনে চল পড়েছে নিজেদের সমস্ত প্রয়োজনীয় জিনিসপাতি ব্যাগে না নিয়ে চামড়ার নিচে নেওয়ার। কীভাবে সেটা সম্ভব, তাই ভাবছেন তো? মূলত, একটি মাইক্রোচিপের মাধ্যমে এমনটা করছে সুইডেনবাসীরা।
বিজ্ঞান প্রতিনিয়ত উন্নত হচ্ছে, আর বিজ্ঞানের সাথে তালে তাল মিলিয়ে উন্নত হচ্ছে মানুষও। বেশ কয়েক বছর আগে থেকেই মানুষ ভাবতে শুরু করেছিল মাইক্রোচিপের ব্যবহারের মাধ্যমে এমন কিছু করার কথা। আর সেটা এবার বাস্তব রূপ লাভ করেছে। অন্যান্য বেশকিছু দেশে প্রযুক্তিটি এখনো খুব ভালোভাবে মানুষের সাড়া পায়নি। তবে সুইডিশরা সাদরে আমন্ত্রন জানিয়েছে মাইক্রোচিপকে।
এক্ষেত্রে, মূলত একটি মাইক্রোচিপ ছোট্ট সার্জারির মাধ্যমে ত্বকের নিচে প্রবেশ করানো হয়। সাধারণত হাতেই চিপ রাখা হয়। একটি চালের চাইতেও আকারে অনেক ছোট এই মাইক্রোচিপ। এখনো অব্দি অনেক কাজ এই চিপের মাধ্যমে করা সম্ভব হয়নি। তবে ক্রেডিট কার্ড, অফিস কার্ড, ট্রেন বা বাসের টিকিট- এসব নিয়ে আর মাথা ঘামাতে হচ্ছে না মাইক্রোচিপ ব্যবহারকারীদের। খুব সহজেই কোন ব্যাগ ছাড়াই নিজেদের সাথে সবকিছু বহন করতে পারছেন তারা। শুধু তাই নয়, এই চিপের মাধ্যমে সুইডেনে তথ্য আদান-প্রদানও বেশ সহজ হয়ে এসেছে।
এমনিতেও সুইডিশরা নিজেদের ব্যাপারে অন্যের কাছে স্পষ্ট থাকতে পছন্দ করেন। তবে এখন চিপের মাধ্যমে কোন মানুষ সম্পর্কে সাধারণ কিছু তথ্য খুঁজে পাওয়া আরও সহজ হয়ে গেছে এখানে। সুইডেনে মাঝেমধ্যেই এখন অনুষ্ঠিত হচ্ছে মাইক্রোচিপ প্রবেশ করানোর পার্টি। সেখানে একাধারে নিজেদের শরীরে চিপ প্রবেশ করাচ্ছেন তারা। তবে, প্রশ্ন উঠেছে চিপের স্বাস্থ্যগত জটিলতা নিয়েও।
অনেকে ভাবছেন, চিপে বর্তমানে কিছু ছোট্ট তথ্য রয়েছে। সাধারণ এই তথ্যগুলোর কারণে মানুষ স্বস্তি পাচ্ছে সেটা বেশ ভালো কথা। তবে আশংকার ব্যাপার হচ্ছে এই যে, দিন যত যাবে, তত এই চিপ উন্নত হবে। আরও অনেক বেশি তথ্য প্রবেশ করানো যাবে এই চিপে। তখন মানুষের শরীরে কোন বাজে প্রভাব ফেলতে পারে এটি।
সবচাইতে সমস্যার ব্যাপার হচ্ছে, কোনো মানুষের শরীরে চিপের মাধ্যমে কোনো সমস্যা সৃষ্টি হলেও সেটা বুঝতে অনেকটা সময় লেগে যাবে। এতে করে কোনো বড় রকমের ঝামেলা হতে পারে। এছাড়া, ভবিষ্যতের কথা বাদ দিলেও, বর্তমানে চিপ শরীরে প্রবেশ করানোর সময় ইনফেকশন হতে পারে বলে মনে করেন মাইক্রোচিপের সমালোচকেরা।
অবশ্য চিপের এমন কোন প্রভাব তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিয়েছেন অনেকে। তাদের মতে, এমন কিছুই হওয়ার সম্ভাবনা নেই। তাছাড়া, এই চিপ ব্যবহার করে চুরি, ছিনতাই ইত্যাদি ঝামেলা থেকেও অনেক দূরে থাকা যাবে বলে মনে করছেন সবাই।
সত্যি বলতে গেলে, তাদের ভাবনায় কোন ভুল নেই। আপনার সমস্ত দরকারি জিনিস যখন আপনার শরীরের ভেতরে, তখন সেটাকে ছিনিয়ে নেওয়ার কোনো উপায় থাকে না। এছাড়া, ব্যক্তিগত তথ্য সংরক্ষণের জন্যেও ব্যাপারটি বেশ কার্যকর। এর আগে, ২০১৫ সালেও সুইডেনে একবার এই মাইক্রচিপ প্রতিস্থাপনের কথা শোনা যায়। যদিও সে সময় খুব একটা সাড়া পাওয়া যায়নি কারো কাছ থেকেই। তবে এখন সময় পাল্টিয়েছে। ঝামেলা থেকে দূরে থাকতে সবাই এখন এই চিপের দিকেই ঝুঁকছেন।
গত এক বছরে সুইডেনের নিজস্ব ট্রেন সেবা এসজে জাতীয় রেল কোম্পানি মোট ১৩০ জন যাত্রীকে পেয়েছেন যারা চিপের মাধ্যমে ট্রেনের টিকিট কেটেছেন। এখন পর্যন্ত প্রায় ৩,০০০ জন মানুষ সুইডেনে নিজেদের ত্বকে এই মাইক্রোচিপ প্রতিস্থাপন করেছেন।
এই প্রযুক্তি ব্যবহার করার জন্য মূলত এনএফসি বা নেয়ার ফিল্ড কমিউনিকেশন প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে। সিরিঞ্জের মতো দেখতে একটি যন্ত্রের সাহায্যে চিপ মানুষের শরীরে প্রবেশ করানো হয়।
তো? কী ভাবছেন? সুযোগ এলে আপনিও কি এমন কোন চিপ ত্বকের নিচে স্থাপন করবেন?