লাল কেল্লা থেকে ১০০ লক্ষ কোটির হিসেবে দিলেন মোদি
কলকাতা টাইমস : “
২০১৪ সালে পরিবর্তনের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এসেছিলাম। রিফর্ম, পারফর্ম, ট্রান্সফর্মের মাধ্যমে সেই প্রতিশ্রুতিকে বিশ্বাসে বদলে দিয়েছি। কঠোর পরিশ্রম করেছি। দেশের জন্য করেছি। জীবনপণ করে তা করেছি। আগামী বছর ১৫ অগস্টের দিন, দেশের সাফল্য, আপনাদের সামর্থ্য ও উন্নতির কথা বলতে ফের এই লালকেল্লায় আসব।” লোকসভা ভোটের আগে মঙ্গলবার স্বাধীনতা দিবসে লালকেল্লা থেকে জাতির উদ্দেশে বক্তৃতা দিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র আগামী বছর ফের এই লালকেল্লায় তিনি বক্তৃতা দেওয়ার আশ্বাসন দিলেন। দেশের মানুষের আশা, আকাঙ্ক্ষা, সাফল্য, উন্নয়নের কথা ফের তুলে ধরবেন তিনি।
তবে মোদির এই বক্তৃতা বেশ মানে রাখে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। লালকেল্লা থেকে এদিন কার্যত তাঁর রাজনৈতিক বক্তৃতায় স্পষ্ট বোঝাতে চাইলেন, আসন্ন লোকসভা ভোটে ফের সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে চলেছে তাঁর দল। ফের সরকার গড়তে চলেছে এনডিএ।
তবে শুধু ফের ফিরে আসা নয় এর সঙ্গে মোদি বলেন, “আমি আপনাদের জন্য বাঁচি। আমার যদি স্বপ্ন আসে, তাহলে সেই স্বপ্ন আসে শুধু আপনাদের জন্য। আমার যদি ঘাম হয়, তাহলে আপনাদের জন্য হয়। কারণ, আপনারাই আমার পরিবার। আমি আপনাদের পরিবারের শরিক বলেই আপনাদের জন্য লড়াইয়ের জন্য সঙ্কল্পবদ্ধ।”
স্বাধীনতা দিবসের দিন লালকেল্লার বক্তৃতায় দেশের মানুষকে সরকারের সরকারের সাফল্য ও ভবিষ্যৎ কর্মসূচি জানান দেওয়া বহুদিনের রীতি। অতীতে অটলবিহারী বাজপেয়ী, মনমোহন সিং প্রত্যেকেই তা করেছেন। কিন্তু এদিন মোদীর বক্তৃতায় তাঁর ও তাঁর দলের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য বারেবারেই প্রকট হয়েছে।
জাতির উদ্দেশে বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রী এদিন বলেন, “২০৪৭ সালে দেশের স্বাধীনতার ১০০ বছর পূর্ণ হবে। এটা অমৃতকাল। এই কালখণ্ডের সবচেয়ে সোনালি সময় হল আগামী পাঁচ বছর। তাই আগামী পাঁচ বছর খেয়াল রাখতে হবে যে আমাদের সামান্যতম যেন ভুল না হয়। মনে রাখতে হবে যে, দেশের জন্য সবচেয়ে অশুভ হল তিনটি বিষয়— দুর্নীতি, পরিবারতন্ত্র ও তুষ্টিকরণ। এই তিন অশুভ শক্তির বিরুদ্ধেই আমাদের লড়তে হবে।”
এরই পাশাপাশি কৌশলে ফের স্থায়ী গড়ার গঠনের জন্য আবেদন জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ২০১৪ ও ২০১৯ সালে দেশে স্থির ও স্থায়ী সরকার গঠনের পক্ষে মানুষ ভোট দিয়েছিল। তার আগের তিন দশক ছিল অস্থির সময়। সেই সময় ছিল অনিশ্চয়তায় ভরা। কিন্তু দেশে স্থায়ী সরকার গঠনের পর উত্তোরোত্তর অর্থনৈতিক বৃদ্ধি হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর কথায়, “মোদী আপনাদের কথা দিচ্ছে, পাঁচ বছরের মধ্যে বিশ্বের তিন বৃহৎ অর্থনীতির মধ্যে অন্যতম হবে ভারত।”
মোদি আরও বলেন, “আমি গত দশ বছরের হিসাব তিরঙ্গাকে সাক্ষী রেখে লালকেল্লা থেকে দিতে চাই। আপনাদেরও মনে হবে এত বড় বদল? এত সামর্থ্য! আগে কেন্দ্র থেকে রাজ্যগুলির কাছে ৩০ লক্ষ কোটি টাকা যেত। গত ৯ বছরে তা বেড়ে ১০০ লক্ষ কোটি টাকা হয়েছে। আগে স্থানীয় প্রশাসনের উন্নয়নের জন্য কেন্দ্র থেকে ৭০ হাজার কোটি টাকা যেত, এখন ৩ লক্ষ কোটি টাকা যায়। আগে গরিবের ঘর বানানোর জন্য ৯০ হাজার কোটি টাকা খরচ হত এখন চার লাখ কোটি টাকা খরচ হয়।”
তবে প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তৃতাকে মুখ মেনে নিতে রাজি নয় বিরোধী দলগুলি। এই বক্তৃতা নিয়ে ইতিমধ্যেই প্রতিক্রিয়া জানাতে শুরু করেছে কংগ্রেস। লোকসভায় কংগ্রেস নেতা অধীর চৌধুরী বলেন, “লালকেল্লায় অনেক প্রধানমন্ত্রীর বক্তৃতা দেখেছি ও শুনেছি। কিন্তু লালকেল্লার মঞ্চ থেকে এরকম মিথ্যাচার, এরকম রাজনৈতিক বক্তৃতা এই প্রথম। ভোটে লড়া ছাড়া এই প্রধানমন্ত্রী কিচ্ছু জানেন না।”