November 22, 2024     Select Language
৭কাহন Editor Choice Bengali KT Popular

বাঙালি বধূর নাৎসি গুপ্তচর হয়ে ওঠার দুর্ধর্ষ ইতিহাস

[kodex_post_like_buttons]

কলকাতা টাইমস :

চেহারায় পুরোদস্তুর মেমসাহেব। পরিধানে একান্ত ভারতীয় পোশাক। শাড়ি পরা এই বিদেশিনি এক সময় উঠে এসেছিলেন সংবাদ শিরোনামে। ‘সাবিত্রী দেবী’ হিসেবে পরিচিত এই নারী ছিলেন এক বঙ্গসন্তানের স্ত্রী।

জন্মসূত্রে গ্রিক। আদি নাম ম্যাক্সিমিয়ানি জুলিয়া পোর্টাস। পরবর্তীকালে তিনি পরিচিতি পান ‘সাবিত্রী দেবী’ নামে। ইতিহাস তাকে মনে রেখেছে হিটলারের অ’ন্ধ ভক্ত হিসেবে। নিজেকে ‘ধর্মচ্যু’ত আর্য’ বলে মনে করতেন সাবিত্রী। সমর্থন করতেন না’ৎসিবাদকে। শুধু তাই নয়, দ্বিতীয় বিশ্বযু’দ্ধ চলাকালে তিনি অক্ষশ’ক্তির গু’প্তচর হিসেবেও কাজ করেন মিত্রপক্ষের বিরু’দ্ধে।

১৯০৫ সালে ফ্রান্সে লিঁও শহরে জন্ম ম্যাক্সিমিয়ানি তথা সাবিত্রী দেবীর। বাবা গ্রিক-ইটালিয়ান, মা ইংরেজ। বাল্যকালেই তার মধ্যে একটা জে’দি মনোভাব লক্ষণীয় হয়ে ওঠে। পশুদের অধিকার রক্ষার বিষয়ে সরব হয়ে ওঠেন খুব কম বয়সেই। সেই সঙ্গে গ্রিক জাতীয়তাবাদেও তার আ’স’ক্তি দেখা দেয়।
ইউনিভার্সিটি অব লিঁও থেকে দর্শনে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন ম্যাক্সিমিয়ানি। পরে পিএইচডি-ও করেন ওই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। এই সময়েই তিনি গ্রিস ভ্রমণে যান এবং সেখানকার ঐতিহাসিক স্থানগুলো ঘুরে দেখেন।

গ্রিস ভ্রমণকালেই ম্যাক্সিমিয়ানি জার্মান প্রত্নতত্ত্ববিদ হেইনরিখ শ্লিমানের দ্বারা আবিষ্কৃত স্বস্তিকা চি’হ্নে’র সঙ্গে পরিচিত হন। শ্লিমান প্রাচীন ট্রয়ের প্রত্নাবশেষের ১ হাজার ৮০০ জায়গায় স্বস্তিকা চি’হ্ন আবিষ্কার করেছিলেন। ম্যাক্সিমিয়ানির ধারণা জ’ন্মায়, প্রাচীন গ্রিক সভ্যতা আসলে আর্য সভ্যতা থেকেই জন্মেছে।

১৯২৮ সালে ম্যাক্সিমিয়ানি তার জন্মসূত্রে পাওয়া ফরাসি নাগরিকত্ব ত্যা’গ করে গ্রিক নাগরিকত্ব গ্রহণ করেন। স্বস্তিকার প্রতি এক তী’ব্র আকর্ষণই তাকে না’ৎসিবাদের দিকে এই সময়ে আকৃ’ষ্ট করে।

১৯২৯-এ তিনি ফিলিস্তিন ভ্রমণে যান। জিশু খ্রিস্টের স্মৃতিবি’জ’ড়িত জেরুজালেম ভ্রমণ করার সময়ে ইহুদি বি’দ্বে’ষ তার মনে দা’না বাঁ’ধে। অন্যদিকে সেই সময়ে জার্মানিতে স্বস্তিকা চি’হ্ন’কে সামনে রেখে হিটলার ও তার নাৎ’সি দল ইহুদি বি’দ্বে’ষ ও আ’র্য সভ্যতার উৎক’র্ষের কথা দা’পিয়ে প্রচার করছেন।

১৯৩২-এ আর্য সভ্যতাকে জানতে ও বুঝতে ম্যাক্সিমিয়ানি ভারতে আসেন। আনুষ্ঠানিকভাবে হিন্দু ধর্ম গ্রহণ করেন এবং ‘সাবিত্রী দেবী’ নামে পরিচয় দিতে শুরু করেন। এই সময় থেকে ইহুদি-খ্রিস্টান সংস্কৃতির বি’রু’দ্ধে তিনি সরব হন। ভারতে খ্রিস্ট ধর্ম ও ইসলামের প্রসারের বি’রু’দ্ধেও কথা বলতে শুরু করেন।

১৯৩০-এর দশক থেকেই তিনি ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের বি’রু’দ্ধে গো’পনে ত’থ্য সংগ্রহ করতে শুরু করেন বলে জানা যায়। তার দা’বি অনুযায়ী, তিনিই নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুকে জাপান সম্রাটের প্রতিনিধিদের সঙ্গে পরিচিত করিয়েছিলেন। ততদিনে অবশ্য দ্বিতীয় বি’শ্বযু’দ্ধ শুরু হয়ে গেছে। সাবিত্রী দেবী রোম-বার্লিন-টোকিও অ’ক্ষশ’ক্তির গু’প্তচ’র হিসেবে কাজ করছেন বলেও শোনা যায়।

১৯৪০ সালে সাবিত্রী দেবী না’ৎসি’বাদের সমর্থক বাঙালি বুদ্ধিজীবী অসিতকৃষ্ণ মুখোপাধ্যায়কে বিয়ে করেন। অসিতকৃষ্ণ সেই সময় না’ৎসি জার্মানির উ’গ্র সমর্থক সংবাদপত্র ‘নিউ মার্কারি’-র সম্পাদক। সাবিত্রী দেবী এবং অসিতকৃষ্ণ, দু’জনেই সেই সময় অক্ষশ’ক্তির ক্ষ’মতাবান সাম’রিক ও অসা’মরিক ব্যক্তিদের কাছের মানুষ হয়ে ওঠেন। সেই সময়ে কলকাতাতেও বাস করেছেন এই দম্পতি।

নাৎ’সি নেতা, জার্মানির একনায়ক অ্যাডলফ হিটলারকে বিশেষ চোখে দেখতেন সাবিত্রী দেবী। হিটলার তার কাছে ছিলেন ভগবান বিষ্ণুর এক অবতার। তার বহু লেখায় তিনি হিটলারকে মানব সভ্যতার র’ক্ষাক’র্তা বলে বর্ণনা করতেন। তিনি মনেপ্রাণে বিশ্বাস করতেন ইহুদিরা পৃথিবীকে ধ্বং’সের দিকে ঠে’লে দিচ্ছে। একমাত্র হিটলারই পারেন সেই বি’প’র্যয় থেকে বিশ্বকে র’ক্ষা করতে।

দ্বিতীয় বিশ্বযু’দ্ধের পরে ১৯৪৫ সালে সাবিত্রী দেবী ইউরোপ সফরে যান। ১৯৪৮ সালে তিনি জার্মানি পৌঁছেন। সেখানে তিনি না’ৎসিবাদের সমর্থনে হাতে লেখা প্রচারপত্র বি’লি করতে থাকেন। সেই সূ’ত্রে মিত্রপক্ষের পুলিশ তাকে গ্রেফতারও করে। মি’ত্রবা’হি’নীর হাতে ব’ন্দি না’ৎসি নেতাদের মু’ক্তি দা’বি করেই তিনি সেই সব প্রচারপত্র রচনা করেছিলেন। শেষ পর্যন্ত জার্মানি থেকে তাকে বি’তা’ড়িত হতে হয়।

ছয়ের দশকে সাবিত্রী দেবী ফ্রান্সে বসবাস করতে শুরু করেন। সেখানে তিনি শিক্ষকতা করতেন। এই সময়ে ব্রিটেনের না’ৎসিবাদের সম’র্থকদের সঙ্গে তার গভীর যোগাযোগ স্থা’পিত হয়। হিটলার-পরবর্তী বিশ্বে না’ৎসিবাদকে টি’কিয়ে রাখতে তিনি সক্রি’য় ভূমিকা পালন করতে শুরু করেন।

১৯৬২-তে তিনি নয়া না’ৎসি সংগঠন ওয়ার্ল্ড ইউনিয়ন অব ন্যাশনাল সোশ্যালিস্টস-এর প্রতিষ্ঠাতা সচিব হিসেবে কা’র্যভার নেন। সেই সংগঠনের নেতা নব্য না’ৎসি জর্জ লিঙ্কন রকওয়েল তার ভূমিকায় মু’গ্ধ হন। নব্য নাৎ’সিবাদের প্রসারে সাবিত্রী দেবী নিরন্তর লেখালেখি চা’লিয়ে যেতে থাকেন।

১৯৭০-এ সাবিত্রী দেবী তার শিক্ষকতার কাজ থেকে অবসর নেন। ১৯৭১-এ তিনি আবার ভারতে আসেন। দিল্লিতে একাধিক বিড়াল ও একটি গোখ’রা সা’প নিয়ে তিনি বাস করতেন বলে জানা যায়। এখান থেকেই তিনি ইউরোপ ও আমেরিকার নব্য না’ৎসি নেতাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখতেন।

এই সময়েই তিনি দা’বি করেন, নাৎসিদের দ্বারা ইহুদি গ’ণহ’ত্যার যে বিবরণ মিত্রশ’ক্তি বিশ্ব ইতিহাসের উপরে চা’পিয়ে দিচ্ছে, তা সর্বাং’শে সত্য নয়। পরবর্তীকালে এই গ’ণহ’ত্যাকে ‘মিথ্যা’ বলতে এ’গিয়ে আসেন অনেক ইতিহাসবিদ। তবে, সাবিত্রী দেবীই প্রথম এই তত্ত্ব বিশ্বের সামনে তু’লে ধ’রেন।

এমন বি’তর্কি’ত জীবন যাপন করেও সাবিত্রী দেবী একটা বিশেষ ইতিবাচক আ’ন্দো’লনকে সম’র্থন করে গেছেন আজীবন। সেটা হল পশু অধি’কার আ’ন্দো’লন। ১৯৫৯ সালে তিনি ভারতে বসেই রচনা করেন ‘দি ই’মপি’চমে’ন্ট অব ম্যান’ নামে একটি গ্রন্থ। সেখানে তিনি পশু ও পরিবেশ ধ্বং’স’কারী হিসেবে সমগ্র মানব সভ্যতাকে কাঠগ’ড়ায় দাঁ’ড় করান। তিনি নিজেও ছিলেন ক’ট্ট’র নিরামিশা’ষী।

১৯৭৭ সালে স্বামী অসিতকৃষ্ণ মা’রা যান। সাবিত্রীও ভারতের পাট চু’কিয়ে ফিরে যান ইউরোপে। কিছু দিন জার্মানির ব্যাভেরিয়ায় থাকার পরে ফিরে আসেন জন্মভূমি ফ্রান্সে। ততদিনে তিনি অথর্ব হয়ে পড়েন, প্রায় হা’রাতে বসেন দৃ’ষ্টিশ’ক্তি।

১৯৮২ সালে ৭৭ বছর বয়সে হৃ’দরো’গে আ’ক্রা’ন্ত হয়ে সাবিত্রী দেবী মা’রা যান। হিন্দু রীতি মে’নে তার ম’রদে’হ দা’হ করা হয়। পরে তার চি’তাভ’স্ম ভার্জিনিয়ায় আমেরিকান না’ৎসি পার্টির দফতরে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। ন’ব্য না’ৎসি নেতা রকওয়েলের সমাধির পাশেই সেই ভ’স্মকে স’মাহি’ত করা হয়।

Related Posts

Leave a Reply