ঘরে বসেই ওভারিয়ান সিস্টের চিকিৎসা সম্ভব, কিভাবে ….
কলকাতা টাইমস :
ডিম্বাশয়ে যখন ছোট আকারের জলপূর্ণ থলের সৃষ্টি হয়, সেই সময় তাকে বলা হয় ওভারিয়ান সিস্ট। নারীদের ক্ষেত্রে ডিম্বাশয়ে নানা ধরনের সিস্ট হয়ে থাকে। যেমন ফাংশনাল সিস্ট এবং পলিসিস্টিক (পিসিওএস) সিস্ট। এছাড়াও আরও বেশ কিছু ধরণের সিস্ট নারীদের হয়ে থাকে। ব্যস্ত জীবন, বিশ্রামের অভাব, রাস্তার খাবার, অনিয়মিত জীবনযাপন, ব্যায়াম না করা প্রভৃতি নানা কারণে অনেক সময় সিস্ট হতে পারে। এমনটা হলে উপায়? কিভাবেই বা সিস্টের সমস্যাকে সহজে কমিয়ে ফেলা যায়? ডিম্বাশয়ে সিস্ট কমাতে হলে ব্যায়াম এবং ভাজাভুজি খাওয়া বন্ধ করতে হবে। এছাড়াও, বেশ কিছু খাদ্য নিয়মিত খেয়ে যেতে হবে। এতে ডিম্বাশয় সহ সারা শরীরের যত্নে কাজে আসবে। যেমন…
১. ক্যামোলাইল চা : ওভারিতে সিস্টের কারণে নানারকম অসুবিধা হয়। প্রায়শই যন্ত্রণাও হয়ে থাকে। এই ধরণের সমস্যা দূর করতে ক্যামোলাইল চা খুবই উপকারি। এটি পান করলে যন্ত্রণা থেকে সহজে মুক্তি মেলে এবং অনিয়মিত ঋতুস্রাবের সমস্যা দূর হয়। এই চা তলপেট এবং জরায়ুতে রক্ত প্রবাহিত হতে সাহায্য করে। ফলে নিয়মিত ঋতুস্রাব হতে পারে। এক্ষেত্রে এক কাপ গরম জলে ২ টেবিল চামচ ক্যামোলাইল মিশিয়ে এই চা বানাতে হয়।
২.আপেল সিডার ভিনিগার : ওভারির সিস্ট দূর করতে আপেল সিডার ভিনিগার দারুণ কাজ করে। ওভারিতে সিস্ট হওয়ার মূল কারণ হল পটাশিয়ামের ঘাটতি। আর আপেল সিডার ভিনিগারে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম বজায় থাকে। ১ টেবিল চামচ আপেল সিডার ভিনিগার, এক গ্লাস গরম জলের সঙ্গে মিশিয়ে প্রতিদিন ১ থেকে দুই গ্লাস পান করলে দারুণ উপকার পাওয়া যায়।
৩.ফ্ল্যাক্স সিড : ফ্ল্যাক্স সিডের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড থাকে। এছাড়াও মাইক্রোনিউট্রিয়েন্টস, ফাইবার, ম্যাঙ্গানিজ এবং ভিটামিন বি১ থাকে। ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড আমাদের শরীরের জন্য খুবই উপকারি একটি অ্যাসিড। এছাড়াও ফ্ল্যাক্সসিড ইস্ট্রোজেন এবং প্রজেস্টেরনের ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। এরফলে, ওভারিতে সিস্টের সমস্যা হ্রাস পায়।
৪.মাকা রুট : ওভারির সিস্টের সমস্যা শরীরের জন্য খুবই ক্ষতিকারক। যদিও, এই ধরণের সমস্যার সমাধান করতে পারে মাকা রুট। মাকা রুট নিয়মিত খেলে দেহে প্রজেস্টেরন সহ অন্যান্য হরমোনগুলির ভারসাম্য বজায় থাকে।
৫.ঝোলাগুড় : অনেকে আছেন যারা সিস্টের সমস্যায় ঝোলাগুড়ের সাহায্য নিয়ে থাকেন। আসলে ঝোলাগুড়ের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম থাকে। যার ফলে, ওভারিতে সিস্টের সমস্যা নিবারণ করতে পারে। এক গ্লাস গরম জলের মধ্যে এক টেবিল চামচ ঝোলাগুড় মিশিয়ে পান করলে দারুণ উপকার পাওয়া যায়।
৬.হলুদ : হলুদ শরীরের নানারকম সমস্যা দূর করতে পারে। এটি একদিকে যেমন লিভারের কাজ ভালোভাবে সম্পন্ন করতে পারে। তেমনই প্রদাহজনিত সমস্যাও দূর করতে পারে। এছাড়া, টিউমার এবং সিস্টের সমস্যাও দূর করতে পারে।
৭.ড্যান্ডেলিয়ন : অতিরিক্ত পরিমাণে ইস্ট্রোজেন হরমোনের নিঃসরণ সিস্টের সমস্যা সৃষ্টি এবং বৃদ্ধি করে। ভিটেক্স নামক এক ধরণের উপাদান এই সমস্যা নিবারণ করতে পারে। আর এই উপাদান পাওয়া যায় ড্যান্ডেলিয়ন নামক এক ধরণের ফুলের মধ্যে। এই ফুল বিশেষ পদ্ধতিতে খেলে অনিয়মিত ঋতুস্রাবের সমস্যা দূর হয় এবং দূষিত পদার্থকে বর্জ্য হিসাবে শরীর থেকে বের করে দিয়ে লিভারের যত্ন নিতে পারে।
৮.কাস্টর অয়েল : কাস্টর তেল বা রেড়ির তেল শুধুমাত্র চুলের যত্নে নয়, এই তেল সিস্টের সমস্যা কমাতেও দারুণ কাজে আসে। কাস্টর অয়েল বা রেড়ির তেল পাওয়া যায় রেড়ি বীজের থেকে। রেড়ির তেলে থাকে একধরণের ট্রাইগ্লিসারাইড, অর্থাৎ ফ্যাটি অ্যাসিড, যা ডিম্বাশয়ে সিস্টের সমস্যাকে দূর করতে পারে।
৯. এপসম সল্ট বাথ : সাম্প্রতিক একটি গবেষণাতে জানা গেছে যে জলের ভিতর এপসম লবন মিশিয়ে স্নান করলে বা গা ডুবিয়ে বসে থাকলে সিস্টের ফলে হওয়া ব্যাথা অনেকটাই কমে যায়। এর কারণ, এপসম লবনের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে ম্যাগনেসিয়াম সালফেট থাকে। এই লবন মাংস পেশিকে আরাম দিয়ে যে কোনও ব্যাথা দূর করতে পারে।
১০.বিটরুট : বিটরুটের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে অ্যাল্কালাইন থাকায় এটি শরীরে অ্যাসিডের মাত্রা সঠিক রাখতে সাহায্য করে। এর ফলে, ডিম্বাশয়ে সিস্টের সমস্যা খুব একটা হয় না। ১/২ কাপ বিটের রস, এক টেবিল চামচ অ্যালোভেরা জেল এবং এক টেবিল চামচ ঝোলাগুড়ের সঙ্গে মেশাতে হবে। প্রতিদিন প্রাতরাশ করার আগে এটি পান করলে ডিম্বাশয়ে সিস্টের সমস্যা থেকে মুক্তি মেলে।
১১.আদার রস : আদার রস অনিয়মিত ঋতুস্রাবের সমস্যা দূর করত পারে। দুই ইঞ্চি পরিমাণের আদা নিতে হবে। এরসঙ্গে কিছুটা সেলেরি পাতা, আধা কাপ আপেলের রস এবং তিন- চতুর্থাংশ আনারসের রস একটি মিক্সারে ভাল করে বেঁটে নিতে হবে। প্রতিদিন এই মিশ্রণ পান করলে ডিম্বাশয়ের সিস্টের সমস্যা দূর হবে।
১২.কাঠবাদাম : কাঠবাদাম ডিম্বাশয়ে সিস্ট সারাতে দারুণ কাজ করে। কারণ এই বাদামের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে ম্যাগনেসিয়াম রয়েছে, যা পেটে খিঁচ ধরে যাওয়া, যন্ত্রণা হওয়া এবং সিস্টের সমস্যা দূর করে। তাই নিয়ম করে কাঠবাদাম খেলে এমন সব সমস্যা দূর হয়।
১৩.অ্যালো ভেরা: অ্যালোভেরা ডিম্বাশয়ের সিস্ট সারাতে দারুণ কাজ করে। এটি এই সমস্যায় এক ধরণের প্রাকৃতিক চিকিৎসার মতো কাজ করে। নিয়ম করে অ্যালোভেরার রস খেলে বা অন্য কোনও মিশ্রণের সঙ্গে মিশিয়ে খেলে দারুণ উপকার পাওয়া যায়।
১৪.দারচিনি : দারচিনি তো খুবই পরিচিত একটি মশলা। এই সুগন্ধি উপাদানটি ডিম্বাশয়ের সিস্ট নিবারণের জন্যও দারুণ উপকারি। বিগত দশ বছর ধরে ডিম্বাশয়ের সিস্ট আছে,এমন নারীদের ক্ষেত্রে এটি ইন্স্যুলিনের মতো ব্যবহার করা হয়। এতে একদিকে যেমন সিস্টের সমস্যা নিবারণ করা যায়, তেমনই টাইপ টু ডায়াবেটিসও প্রতিরোধ করা যায়। এছাড়াও ঋতুস্রাবের সময় অতিরিক্ত রক্তপাত হলে তা বন্ধ করতে সাহায্য করে দারচিনি।
১৫.ট্রাইবুলাস : ট্রাইবুলাস নারীদের নানা সমস্যা নিবারণে বেশ কাজ দেয়। যেমন- ডিম্বাশয়ে ডিম্বাণু তৈরি হওয়ার আগে যদি এই ভেষজ উপাদানটি প্রয়োগ করা যায়, তাহলে সঠিকভাবে ডিম্বাণু তৈরি হতে পারে। একটি সমীক্ষায় ৩৬ জন মহিলার ওপর ট্রাইবুলাসের কার্যকারিতা পরীক্ষা করা হয়। এতে দেখা যায় যে, যে সকল মহিলাদের ডিম্বাণু তৈরিতে সমস্যা ছিল, তাদের সেই সমস্যা ৬৭ শতাংশ হারে কমে গিয়েছে।
১৬.মিল্ক থিসেল বীজ থিসেল : অর্থাৎ কাঁটাযুক্ত বুনো গাছ। এই মিল্ক থিসেল ভারতবর্ষে তেমনভাবে প্রচলিত নয়। এটি লিভারের কাজকে দারুণভাবে প্রভাবিত করে। এছাড়াও বিভিন্ন গবেষণাপত্রে বলা হয়েছে যে, মিল্ক থিসেল ডিম্বাশয়ের সিস্ট সারাতে দারুণ কাজ করে। এটি একদিকে যেমন ডিম্বাশয়ে সঠিকভাবে ডিম্বাণু তৈরি করতে পারে, তেমনই গর্ভধারণেও সাহায্য করতে পারে এই বীজ।
১৭.হিট থেরাপি: হিট থেরাপি ডিম্বাশয়ের সিস্টের জন্য দারুণভাবে কাজ করতে পারে। গরম জল, গরম প্যাড বা গরম জলে স্নানের মাধ্যমে সিস্টের জন্য হওয়া ব্যাথাকে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। কারণ গরমের ফলে মাংসপেশিতে আরাম লাভ করা যায় এবং এর ফলে ব্যাথা নিয়ন্ত্রণে আনা যায়। তাহলে জেনে নেওয়া গেল, ডিম্বাশয়ে সিস্টের সমস্যাকে কিভাবে অতি সহজেই কাবু করা যায় এবং সুস্থভাবে থাকা যায়।